পাপিয়ো আনুবিস
Papio anubis

বেবুনের একটি প্রজাতি বিশেষ। জীববিজ্ঞানীরা বেবুনকে প্রাচীন পৃথিবীর বানর  হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। ১৮২৭ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রজাতির নামকরণ করেছিলেন ফরাসি জীববিজ্ঞানী
René Primevère Lesson । এদের দেহের রঙ জলপাই। এই কারণে একে অনেক সময় জলপাই বেবুন বলা হয়। আবার মিশরীয় দেবতা আনুবিসের চেহারা ছিল এই বেবুনের মতো। তাই একে আনুবিস বেবুন বলা হয়। তাছাড়া এই দেবতার নামানুসারে এর প্রজাতিগত নামও রাখা হয়েছে পাপিয়ো আনুবিস।

এদের পাওয়া যায় আফ্রিকার অন্তত ২৫টি দেশে। মূলত মালি থেকে পূর্ব দিকের ইথিওপিয়া এবং তাঞ্জানিয়া পর্যন্ত। এই দেশগুলোর ভিতরে রয়েছে- গিনি, মালি, মৌরিতানিয়া, সিয়েরা লিয়োন, আইভরি কোস্ট, বুরকিনা ফাসো, ঘানা,টোগো, বেনিন, নাইজেরিয়াম নাইজার, চাদ, মধ্য আফ্রিকান রিপাবলিক, ক্যামেরুন, সুদান, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া এবং সোমালিয়া। এছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে সাহারা অঞ্চলে এদের দেখা যায়। উল্লেখ্য, প্রায় ২০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে পাপিয়োনিনি গোষ্ঠী থেকে পাপিয়ো গণ উদ্ভব হয়েছিল।

পুরষ-বেবুনগুলো স্ত্রী-বেবুনের চেয়ে আকারে বড় হয়। এদের গায়ের রঙ জলপাই । মুখমণ্ডলে কোনো লোম থাকে না। মুখের রঙ নীল বা কালচে বর্ণের হয়ে থাকে। পুরুষ বেবুনের গড় দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০ সেন্টিমিটার (২৮ ইঞ্চি)। এদের গড় ওজন থেকে ২৪ কেজি।

প্রায় ছয় থেকে আট মাস গর্ভধারণের পরে সাধারণত স্ত্রী বেবুন একটি সন্তান প্রসব করে।

এরা সর্বভুক। খাদ্য তালিকায় রয়েছে শিকড়, পাতা, বাকল, ফল, ফুল। প্রাণিজ খাদ্যের মধ্যে রয়েছে কীটপতঙ্গ, পাখি, ছোটো ছোটো স্তন্যপায়ী প্রাণী।

এরা দলবদ্ধভাবে বাস করে। এদের ছোটো ছোটো পরিবার গড়ে ওঠে একজন শক্তিশালী পুরষের নেতৃত্বে। প্রতিটি পুরুষে অধীনে থাকে প্রায় ১০ জন্ স্ত্রী। এই জাতীয় পরিবারকে বলা হয় হারেম। প্রতিটি হারেমে প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে থাকে, শাবক এবং তরুণ-তরুণী।

একটি হারেমের কোনো পুরুষ শাবক যখন শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তখন সে কিছু স্ত্রী বেবুন নিয়ে পৃথক হয়ে যায় এবং পৃথক হারেম তৈরি হয়। তবে আত্ময়ীতার সূত্রে একাধিক হারেম শান্তিতে সহ-অবস্থান করে। এর ফলে কয়েকটি হারেম মিলে তৈরি হয় একটি বড় দল। এই বড় দলগুলোকে বলা হয় বংশীয় দল
। এরূপ দূর আত্মীয়ের সূত্রে অন্যান্য বংশীয় দলগুলো একত্রে আরও বড়দল তৈরি হয়। প্রতিটি বড়দলে প্রায় ৪০০ পর্যন্ত বেবুন থাকে। এরা নির্বিবাদে মিলেমিশে থাকে। কিন্তু নিজেদের হারেম, বংশীয় দলের অস্তিত্ব বজায় রাখে। অনেক সময় বড়দলগুলো মিলে একটি বিশাল বেবুন রাজ্যের সৃষ্টি করে।

অনেক সময় কোনো হারেমের তরুণ শক্তিশালী পুরুষ নিজের হারেম পর্যাপ্ত স্ত্রী না পেলে, অন্য হারেমের নেতৃত্বদানকারী পুরুষ বেবুনকে আক্রমণ করে। জয়ী হলে ও ওই হারেমের সকল স্ত্রী তার অধীনস্ত হয়ে যায়।


সূত্র: