বেবুনের
একটি প্রজাতি বিশেষ। জীববিজ্ঞানীরা বেবুনকে
প্রাচীন পৃথিবীর
বানর হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রজাতির নামকরণ করেছিলেন ফরাসি
জীববিজ্ঞানী Anselme Gaëtan Desmarest
।
এদের পাওয়া যায় পশ্চিম আফ্রিকার গিনি, সেনেগাল, গাম্বিয়া, দক্ষিণ মৌরতানিয়া এবং পশ্চিম মালিতে।
প্রায় ২০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
পাপিয়োনিনি গোষ্ঠী থেকে পাপিয়ো গণ উদ্ভব হয়েছিল। এই গণের প্রধান ধারার প্রজাতি হিসেবে -পাপিয়ো পাপিয়ো-কে
বিবেচনা করা হয়। গিনিতে এই প্রজাতি প্রচুর দেখা যায়, এই কারণে একে গিনি বেবুন নামেও অভিহিত করা হয়।
এরা সাধারণত বাস করে উল্লিখিত দেশের শুষ্ক বনাঞ্চলে।
এছাড়া নদীর উভয় প্রান্তবরাবর বা জলাশয়ের তীর ঘেঁষা অরণ্যে। এছাড়া ঝোপযুক্ত অরণ্যময় তৃণাঞ্চল বা উঁচু ভূমি থেকে
নেমে আসা তৃণভূমিতে।
পুরষ-বেবুনগুলো স্ত্রী-বেবুনের চেয়ে আকারে বড় হয়। এদের গায়ের রঙ লালচে বাদামি।
মুখমণ্ডলে কোনো লোম থাকে না। মুখের রঙ গাঢ় নীল বা কালো বর্ণের হয়ে থাকে। ঘাড় অল্প কেশর থাকে।
এদের ওজন ১৩ থেকে ২৬ কেজির ভিতরে হয়। লেজ ধনুকের মতো বাঁকানো হয়।
যৌন মিলন ঘটে স্ত্রী-বেবুনের সঙ্কতের দ্বারা। স্ত্রী বেবুনের ঋতুচক্র শেষে,
পুরুষদেরকে যৌনমিলনে আকৃষ্ট করতে থাকে। প্রায় ছয় থেকে আট মাস গর্ভধারণের পরে সাধারণত স্ত্রী বেবুন একটি সন্তান প্রসব করে।
এরা সর্বভুক। খাদ্য তালিকায় রয়েছে শিকড়, পাতা, বাকল, ফল, ফুল।
প্রাণিজ খাদ্যের মধ্যে রয়েছে কীটপতঙ্গ, পাখি, ছোটো ছোটো স্তন্যপায়ী প্রাণী।
এরা দলবদ্ধভাবে বাস করে। এদের ছোটো ছোটো পরিবার গড়ে ওঠে একজন শক্তিশালী পুরষের নেতৃত্বে।
প্রতিটি পুরুষে অধীনে থাকে প্রায় ১০ জন্ স্ত্রী। এই জাতীয় পরিবারকে বলা হয় হারেম। প্রতিটি হারেমে
প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে থাকে, শাবক এবং তরুণ-তরুণী।
একটি হারেমের কোনো পুরুষ শাবক যখন শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তখন সে কিছু স্ত্রী বেবুন নিয়ে পৃথক হয়ে যায় এবং
পৃথক হারেম তৈরি হয়। তবে আত্ময়ীতার সূত্রে একাধিক হারেম শান্তিতে সহ-অবস্থান করে। এর ফলে কয়েকটি হারেম
মিলে তৈরি হয় একটি বড় দল। এই বড় দলগুলোকে বলা হয় বংশীয় দল
। এরূপ দূর আত্মীয়ের সূত্রে অন্যান্য বংশীয় দলগুলো একত্রে আরও বড়দল তৈরি হয়।
প্রতিটি বড়দলে প্রায় ৫০০ পর্যন্ত বেবুন থাকে। এরা নির্বিবাদে মিলেমিশে থাকে। কিন্তু নিজেদের
হারেম, বংশীয় দলের অস্তিত্ব বজায় রাখে। অনেক সময় বড়দলগুলো মিলে একটি বিশাল বেবুন
রাজ্যের সৃষ্টি করে।
অনেক সময় কোনো হারেমের তরুণ শক্তিশালী পুরুষ নিজের হারেম পর্যাপ্ত স্ত্রী না পেলে,
অন্য হারেমের নেতৃত্বদানকারী পুরুষ বেবুনকে আক্রমণ করে। জয়ী হলে ও ওই হারেমের সকল
স্ত্রী তার অধীনস্ত হয়ে যায়।