প্রতীক Po
পারমাণবিক ওজন ২০৯.০
পারমণবিক সংখ্যা ৮৪
ইলেক্ট্রোন সংখ্যা ৮৪
প্রোটোন ৮৪
ইলেক্টোন কক্ষ: ২ ৮ ১৮ ৩২ ১৮ ৬
ইলেক্ট্রোন শক্তিবিন্যাস :
4f14 5d106s26p4
গলনাঙ্ক :  ২৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
স্ফুটনাঙ্ক : ৯৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আপেক্ষিক গুরুত্ব: 9.৪ গ্রাম/ঘন সেমি

পোলোনিয়াম
বানান বিশ্লেষণ: প্+ও+ল্+ও+ন্+ই+আ+ম্+অ
উচ্চারণ:
po.lo.ni.am (পো.লো.নি.আম্)।
শব্দ-উৎস:
লাতিন Polonia (পোল্যান্ডের লাতিন নাম) >নব্য লাতিন polonium> ইংরেজি polonium> বাংলা পোলোনিয়াম
পদ: বিশেষ্য   এক প্রকার তেজস্ক্রিয় মৌলিক পদার্থ। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে দিমিত্রি মেন্ডেলেয়েভ সর্বপ্রথম একটি অজ্ঞাত পদার্থ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। মেন্ডেলেয়েভ অজ্ঞাত এই মৌলটির নাম দিয়েছিলেন দ্বি-টেলুরিয়াম এই পদার্থটির সাথে পোলোনিয়ামের
পোলোনিয়ামের প্রধান ধর্মের সাথে মিলে গিয়েছিল। তিনি লিখেছিলেন-

'ভারি ধাতুগুলোর মধ্যে টেলুরিয়ামের সদৃশ একটি মৌলকে আমরা আশা করতে পারি, যার পারমাণবিক গুরুত্ব বিসমাথের থেকে বেশি। এটির ধাতব ধর্ম থাকা উচিত এবং সালফিউরিক এসিডের ন্যায় ধর্ম ও গঠন বিশিষ্ট এসিড মৌলটি থেকে পাওয়া যাবে এবং যে এসিডটির জারণ ক্ষমতা টেলুরিক এসিড থেকে বেশি হবে....। RO2 নামক অক্সাইডটির অম্লীয় ধর্ম আশা করা যায় না, যদিও টেলুরাস এসিডের অম্লীয় ধর্ম আছে। মৌলটি জৈব-ধাতব যৌগ উৎপন্ন করবে, কিন্তু কোন হাইড্রোজেন যৌগ উৎপন্ন করবে না....।'

১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর ১৬ থেকে মারি ক্যুরি এবং পিয়ের ক্যুরি বেকেরেল রশ্মি তথা ইউরেনিয়াম রশ্মি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। গবেষণাটি অবশ্য মারি ক্যুরি নিজেই শুরু করেছিলেন ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি পিয়েরে তার সাথে যোগ দেন। তারা দুজনে মিলে ইউরেনিয়াম খনিজ, লবণ এবং ধাতব ইউরেনিয়াম থেকে প্রাপ্ত তেজস্ক্রিয় বিকিরণ নিয়ে গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ইউরেনিয়াম যৌগের তেজস্ক্রিয়তা ধর্ম সবচেয়ে কম। যৌগের চেয়ে ধাতব ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা বেশি বলে প্রতীয়মান হয়। ধাতবগুলোর মধ্যে আবার পিচব্লেন্ড নামক ইউরেনিয়াম আকরিকের তেজস্ক্রিয়তা ছিল সবচেয়ে বেশি। এ থেকে তারা স্পষ্টতই বুঝতে পারেন, পিচব্লেন্ডে এমন একটি মৌল উপাদান আছে যার তেজস্ক্রিয়তা ইউরেনিয়ামের থেকে অনেক বেশি।
১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ এপ্রিল ক্যুরি দম্পতি তাদের গবেষণা প্রকল্পটির বিবরণ প্যারিস আকাদেমি অফ সাইন্সে পেশ করেন। ১৪ এপ্রিল জি বেমন্টের সাহায্য নিয়ে তারা নতুন এই মৌলটির সন্ধান শুরু করেন।

১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জুলাই প্যারিস বিজ্ঞান একাডেমির বিজ্ঞান সভায় ক্যুরি দম্পতি এক বিবৃতিতে পিচব্লেন্ডে অবস্থিত একটি নতুন তেজস্ক্রিয় পদার্থ সম্বন্ধে বক্তব্য রাখেনসেই সাথে তারা একটি নতুন মৌল আবিষ্কারের ইঙ্গিত দেন। মারি ক্যুরি আরও জানান যে, এই নতুন মৌলটির আবিষ্কার নিশ্চিত হলে, তিনি তার জন্মভূমি পোল্যান্ডের নামানুসারে নাম রাখবেন পোলোনিয়াম।

১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান রসায়নবিদ ডব্লিউ মার্কওয়াল্ড দুই টন ইউরেনিয়াম আকরিক থেকে বিসমাথের অংশটি নিষ্কাশন করেন। সেখানকার বিসমাথ ক্লোরাইড দ্রবণের মধ্যে একটি বিসমাথ দণ্ড প্রবেশ করান এবং দেখেন, অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় গুণ সম্পন্ন একটি পদার্থ এই দণ্ডের উপর অধঃক্ষিপ্ত হচ্ছে। এটিকে একটি নতুন মৌল ধরে তিনি এর নাম দেন রেডিওটেলুরিয়াম তথা তেজস্ক্রিয় টেলুরিয়াম। এ সম্বন্ধে তিনি এক স্মৃতিচারণে তিনি উল্লেখ করেছেন,

'সাময়িকভাবে কেবলমাত্র আমি এই মৌলটির নামকরণ করি রেডিওটেলুরিয়াম, কারণ ষষ্ঠ শ্রেণীতে তখনও ফাঁকা ঘরে এই মৌলটি রাখার জন্য, এর সমস্ত রাসায়নিক ধর্ম নির্দেশ করে। ঐ মৌলটির পারমাণবিক ভর বিসমাথের চেয়ে কিছু বেশি....। মৌলটি বিসমাথের চেয়ে বেশি তড়িৎ ঋণাত্মক; কিন্তু টেলুরিয়ামের চেয়ে বেশি তড়িৎ ধনাত্মক; এর অক্সাইডটির অম্লীয় ধর্মের চেয়ে ক্ষারকীয় ধর্ম বেশি হওয়া উচিত। এগুলো সবই হল তেজস্ক্রিয় টেলুরিয়ামের বিষয়....। এই বস্তুটির পারমািক ভর ছিল ২১০।  

নতুন রেডিওটেলুরিয়ামের পক্ষে যুক্তি দেখানোর জন্য মার্কওয়াল্ড তৎক্ষণাৎ পূর্বে আবিষ্কৃত পোলোনিয়ামকে একাধিক তেজস্ক্রিয় পদার্থের মিশ্রণ বলে ঘোষণা করেন। ফলে পোলোনিয়াম ও রেডিওটেলুরিয়াম নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। অধিকাংশ বিজ্ঞানীই অবশ্য ক্যুরিদেরকে সমর্থন করেন। পরে প্রকৃত বিষয়টি উদ্‌ঘাটিত হলে বিজ্ঞানীরা এই নতুন মৌলটিকে পোলোনিয়াম নামেই অভিহিত করেন।

পোলোনিয়াম ছিল আবিস্কৃত প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় মৌলদের মধ্যে প্রথম। তবে সঠিক পারমাণবিক ভর নির্ণিত না হওয়ায়, পর্যায় সারণীর সঠিক ঘরে স্থান পায় নি।

১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে এর বর্ণালি রেখাগুলো সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয়।
১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে পোলোনিয়ামের প্রতীক তথা
Po- কে পর্যায় সারণীতে সঠিক স্থানে যুক্ত হয়।
১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে বিশুদ্ধ পোলোনোয়াম প্রস্তুত করা সম্ভব হয়। নির্বাত উর্ধ্বপাতন প্রক্রিয়ার দ্বারা উৎপাদিত সেই ধাতুর অধিক ঘনত্ববিশিষ্ট স্তরটির বর্ণ ছিল রুপার মত সাদা।