মিন খায়ই
Min Khayi
মুসলমান নাম: আলি খান
১৩৯২-১৪৫৯ খ্রিষ্টাব্দ।

রাকান রাজ্য-এর ম্রায়ুক উ রাজ্যের দ্বিতীয় রাজা।

১৩৯২ খ্রিষ্টাব্দে লাঙ্গিয়েত রাজ্যের যুবরাজ রাজাথুর ঔরস জন্মগ্রহণ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম জানা যায় নি। উল্লেখ্য যুবরাজ রাজাথু রাজত্ব লাভ করলেও ১৩৯৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে শিকারে পদচ্যুত হন। শেষ পর্যন্ত ১৩৩৭ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনের দাবী ত্যাগ করেন। এই সময় রাজাথুর ছোট ভাই থেইনখাথু রাজত্ব লাভ করেন। ১৪০৪ খ্রিষ্টাব্দে থেইনখাথুর মৃত্যুর পর, ১৪ই এপ্রিল সিংহাসন লাভ করেন মিন সো মোন

এই সময় মিন সো মোন-এর রাজ্যের পার্শ্ববর্তী শক্তিশালী আভা এবং পেগু রাজ্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিরাজ করছিল। এদের দ্বারা প্রভাবিত রাজ্যের আমত্যবর্গ রাজ্যের অবস্থা অস্থিতিশীল করে তুলেছিল। এই অবস্থার ভিতরে আভা রাজ্যের রাজা 'মিনখায়ুং প্রথম'  ১৪০৬ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে মিন সো মোন-এর রাজ্যের বিরুদ্ধে শক্তিশালী সেনাবাহিনী পাঠান। ২৯শে নভেম্বর এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে, মিন সো মোন বঙ্গদেশে পালিয়ে যান। আর মিন খায়ই পালিয়ে যান পেগু রাজ্যে।

পেগুর রাজা রাজাদারিত মিন খায়ই-কে আশ্রয় দেন এবং তাঁকে লাঙ্গিয়েতের সিংহাসনে বসানোর উদ্যোগ নেন। ১৪০৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রায় ৫০০০ সৈন্য পাঠান লাঙ্গিয়েত-এ। যুদ্ধের পর পেগু-রাজ রাজাদারিত, মিন খায়ই-কে লাঙ্গিয়েতের সিংহাসনে বসান। মূলত ১৬ বছর বয়সী মিন খায়ই, পেগু-রাজের অধীনে পুতুল সরকার হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। কয়েক মাসের ভিতরে আভা নগরীর রাজা মাইনসেইং মাইয়োজার অধীনে লাঙ্গিয়েতে এক বিশাল শক্তিশালী সেনাদল পাঠান। ১৪০৮ খ্রিষ্টাব্দের শুরুর দিকে আভা-সৈন্যরা লাঙ্গিয়েত দখল করে নেয়। এই সময় মিন খায়ই রাকান রাজ্য-এর উত্তরাঞ্চলে পালিয়ে যান। এরপর প্রায় দুই দশক ধরে মিন খায়ই সৈন্য সংগ্রহ করে, লাঙ্গিয়েত দখলের চেষ্টা চালিয়ে যান। এই সময় তিনি স্থানীয় জনৈক ধনী প্রজার কন্যা সো পায়ইনসাকে বিয়ে করেন। এই স্ত্রীর গর্ভে জন্ম করে সো সান-মে নামক এক পুত্র।

বঙ্গদেশের সুলতান জালালউদ্দীন মুহম্মদ শাহের সহায়তায়, তাঁর ভাই মিন সো মোন রাজ্য উদ্ধারের উদ্যোগ নেন। ১৪২৯ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারির/মার্চ মাসের দিকে রাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য যাত্রা করেন। এই যুদ্ধে জয় লাভ করে তিনি রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। এরপর সুলতানের সেনাপ্রধান ওয়ালি খানের সাথে তাঁর বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পরেন। এই সূত্রে ওয়ালি খান তাঁকে গ্রেফতার করেন। এই ঘটনাটি ঘটেছিল মিন সো মোন-এর পালিয়ে থাকা ভাই মিন খায়ই-এর এলাকার কাছে। এই ভাইয়ের সহায়তায় মিন সো মোন কৌশলে পালিয়ে সুলতানের কাছে ফিরে যান। এরপর সুলতান দ্বিতীয় বার রাজ্য উদ্ধারের জন্য সৈন্য দেন। ১৪২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই এপ্রিল সিংহাসন উদ্ধারে সক্ষম হন। এরপর তিনি ধীরে শক্তি বৃদ্ধি করেন। তিনি রাজ্য পরিচালনার সুবিধার্থে ল্যাঙ্গিয়েৎ থেকে রাজধানী সরিয়ে আনেন এবং নতুন নগরী ম্রায়ুক উ-কে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেন। এই নগরী তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল ১৪৩০ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে এবং শেষ হয়েছিল ১৪৩২-৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে। এই বছরেই তিনি রাজধানী স্থানান্তরের কাজ সম্পন্ন করেন। এর কিছু পরে ১৪৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই মে মিন সো মোন মৃত্যুবরণ করেন।

মিন সো মোন-এর মৃত্যুর পর মিন খায়ই সিংহাসন অধিকার করেন। এই সময় তিনি 'আলি খান' মুসলমান নাম গ্রহণ করেন। বঙ্গের সুলতান ১৪৩১ খ্রিষ্টাব্দের  জালালউদ্দীন মুহম্মদ শাহের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় বসেন তাঁর পুত্র সামস্‌উদ্দিন আহমেদ। কিন্তু তাঁর কুশাসনে দেশে অরাজকতার সৃষ্টি হয় এবং বাংলার রাজশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে মারায়ুক রাজ্যের উপর বাংলার প্রভাব হ্রাস পায়। এই সুযোগে মিন খায়ই একটি শক্তিশালী সৈন্যদল গঠন করেন। এই সূত্রে তিনি ১৪৩৭ খ্রিষ্টাব্দে স্যান্ডওয়ে রাজ্য দখল করেন একই সাথে স্যান্ডওয়ে রানি সো ইনকে বিবাহ করেন। এরপর তিনি তৎকালীন হরিকেলের
রামু দখল করেন। ১৪৪৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চট্টগ্রাম-এর বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করতে সক্ষম হন।

মিন খায়ই-র ক্ষমতা বৃদ্ধিতে পার্শ্বর্তী শক্তিশালি রাজ্য আভা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। ফলে, ১৪৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মার্চ তৎকালীন আভার রাজা, মিন খায়ই-এর সাথে শান্তি ও সীমান্ত চুক্তি করে।

১৪৫৮ খ্রিষ্টাব্দে মিন খায়ই তাঁর পুত্র বা সো ফিয়ু
-কে সিংহাসনের উত্তরাধিকার হিসেবে ঘোষণা দেন। কিন্তু এই মনোনয়নে অসন্তুষ্ট হয়ে, তাঁর অপর পুত্র মিন সুই (রানি সো পাইনসা'র পুত্র) তাঁর ল্যাঙ্গিয়েতের প্রশাসনের পদ পরিত্যাগ করে আভা রাজ্যের কালে-তে চলে যান। ১৪৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই নভেম্বর তিনি মারায়ুক রাজ্য আক্রমণ করেন। মিন খায়ই সাফল্যের সাথে এই আক্রমণ প্রতিহত করেন।

১৪৫৯ খ্রিষ্টাব্দে মিন খায়ই মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন 
বা সো ফিয়ু

তাঁর তিনজন রানি ছিলেন - সো পা বা, সো পায়ইনসা এবং সো ইন মি। এঁদের গর্ভজাত সন্তানরা ছিলেন- পুত্র
বা সো ফিয়ু, বা সো নাইয়ো এবং মিন সুই। কন্যা ছিলেন সো সান-মি।

সূত্র: