আরাকান রাজ্য
Arakan

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত রাখাইন প্রদেশের প্রাচীন নাম। এর পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, উত্তর-পশ্চিমে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ। প্রাচীন তথ্যানুসারে জানা যায়, ক্লডিয়াস টলেমি এই অঞ্চলকে Argyré নামে অভিহিত করেছিলেন। পর্তুগিজ নাবিকরা এর নাম দিয়েছিলেন Arracao ইউরোপ ও ভারতবর্ষের মানুষের কাছে এর পরিচয় ছিল আরাকান। বঙ্গদেশের এর প্রাচীন রোসাং। অন্যদিকে আরব বণিকদের কাছে এর নাম ছিল রোহাং। বার্মা অধিবাসীদের কাছে এর ঐতিহ্যগত নাম ছিল রাখাইন। প্রথম কোন জনগোষ্ঠী এই অঞ্চলে প্রথম বসতি স্থাপন করেছিল, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না।

বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্র থেকে জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩২৫ অব্দের দিকে কালাদান এবং চায়ুং নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একটি স্বাধীন রাজ্য। এর রাজধানীর নাম ছিল ধান্যবতী। এটি ছিল পূর্বের পিয়ু, চীন এবং মোনস রাজ্য এবং পশ্চিমের বঙ্গদেশ, উত্তর-পশ্চিম ভারত এবং পারশ্যের ভিতরে প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্য নগরী।

প্রাচীন আরাকানের পরবর্তী দীর্ঘ সময়ের ইতিহাস পাওয়া যায় না। এরপর আনুমানিক ২৬৬৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে প্রতিষ্ঠিত ধান্যবতী রাজ্যের কথা জানা যায়। এই রাজ্যে প্রতিষ্ঠাতা রাজা ছিলেন মারা য়ু। রাজ্যের রাজধানী ধান্যবতী-এর নামে এই রাজ্যের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

ঐতিহাসিকরা ধান্যবতী রাজ্যকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। এই রাজ্যের রাজাদের নাম ও  শাসনকালের তালিকা পাওয়া গেলেও, এই সময়ে রাজ্যের সীমা, জনসংখ্যা, শাসনব্যবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না।

এরপর শুরু হয়েছিল উজালি সাম্রাজ্য। রাজা মাহা তাইং সান্দ্রা ৭৮৮ খ্রিষ্টাব্দে ধান্যবতী থেকে রাজধানী উজালি নগরে স্থানান্তর করেন। ১০১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত উজালি সাম্রাজ্য টিকে ছিল। এই সাম্রাজ্যের শেষ রাজা ছিলেন গা পিন গা তোন।

উজালি সাম্রাজ্যের থিরি তাইং সান্দ্রার শাসনামলে (৮৮৪-৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দ) রাখাইন জাতির পিউ (Pyu ) জাতির মানুষ আরাকান অঞ্চলে আসা শুরু করে। প্রথমে এরা লেম্রো নদী-উপত্যাকায় বসতি স্থাপন করে। কালক্রমে এরা শক্তিশালী হয়ে উজালি সাম্রাজ্যের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠে এবং ১০১৮ খ্রিষ্টাব্দে লেম্রো সাম্রাজ্যের পত্তন ঘটায় রাজা খিত্তাথিন। এই সময় থেকে শুরু লেম্রো সাম্রাজ্য। এই রাজ্যের রাজারা আরাকান শাসন করেছিল ১১০৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।

এই সময়ে আরাকানের আশপাশে বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক রাজশক্তির উদ্ভব হয়।

ম্রায়ুক উ সাম্রাজ্যের উত্থান
১৪০৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে লেম্ব্রো সাম্রাজ্যের লাউঙ্গগায়েত রাজবংশের যুবরাজ, মিন সো মোন মাত্র ২৪ বছর বয়সে পিতার সিংহাসনে আরোহণ করেন। লেম্ব্রো নদীর তীরে লাঙ্গিয়েত তাঁর রাজধানী ছিল। এই সময় মিন সো মোন-এর রাজ্যের পার্শ্ববর্তী শক্তিশালী আভা এবং পেগু রাজ্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিরাজ করছিল। এদের দ্বারা প্রভাবিত রাজ্যের আমত্যবর্গ রাজ্যের অবস্থা অস্থিতিশীল করে তুলেছিল। এই অবস্থার ভিতরে আভা রাজ্যের রাজা 'মিনখায়ুং প্রথম' ১৪০৬ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে মিন সো মোন-এর রাজ্যের বিরুদ্ধে শক্তিশালী সেনাবাহিনী পাঠান। ২৯শে নভেম্বর এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে, মিন সো মোন বঙ্গদেশে পালিয়ে যান। তাঁর অপর ভাই মিন খায়ই পালিয়ে যান পেগু রাজ্যে।

অন্যদিকে পেগুর রাজা রাজাদারিত মিন খায়ই-কে আশ্রয় দেন এবং তাঁকে লাঙ্গিয়েতের সিংহাসনে বসানোর উদ্যোগ নেন। ১৪০৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রায় ৫০০০ সৈন্য পাঠান লাঙ্গিয়েত-এ। যুদ্ধের পর পেগু-রাজ রাজাদারিত, মিন খায়ই-কে লাঙ্গিয়েতের সিংহাসনে বসান। মূলত ১৬ বছর বয়সী মিন খায়ই, পেগু-রাজের অধীনে পুতুল সরকার হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। কয়েক মাসের ভিতরে আভা নগরীর রাজা মাইনসেইং মাইয়োজার অধীনে লাঙ্গিয়েতে এক বিশাল শক্তিশালী সেনাদল পাঠান। ১৪০৮ খ্রিষ্টাব্দের শুরুর দিকে আভা-সৈন্যরা লাঙ্গিয়েত দখল করে নেয়। এই সময় মিন খায়ইরাকান রাজ্য-এর উত্তরাঞ্চলে পালিয়ে যান।  এরপর প্রায় দুই দশক ধরে মিন খায়ই সৈন্য সংগ্রহ করে, লাঙ্গিয়েত দখলের চেষ্টা চালিয়ে যান।

মিন সো মোন বঙ্গদেশের সুলতান জালালউদ্দীন মুহম্মদ শাহের কাছে আশ্রয় পান এবং বঙ্গের সুলতানের সহায়তায় রাজ্য উদ্ধারের উদ্যোগ নেন। ১৪২৯ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারির/মার্চ মাসের দিকে রাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি যাত্রা করেন। এই যুদ্ধে জয় লাভ করে তিনি রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। এরপর সুলতানের সেনাপ্রধান ওয়ালি খানের সাথে তাঁর বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পরেন। এই সূত্রে ওয়ালি খান তাঁকে গ্রেফতার করেন। এই ঘটনাটি ঘটেছিল মিন সো মোন-এর পালিয়ে থাকা ভাই মিন খায়ই-এর এলাকার কাছে। এই ভাইয়ের সহায়তায় মিন সো মোন কৌশলে পালিয়ে সুলতানের কাছে ফিরে যান। এরপর সুলতান দ্বিতীয় বার রাজ্য উদ্ধারের জন্য সৈন্য দেন। ১৪২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই এপ্রিল সিংহাসন উদ্ধারে সক্ষম হন। এরপর তিনি ধীরে শক্তি বৃদ্ধি করেন। তিনি রাজ্য পরিচালনার সুবিধার্থে ল্যাঙ্গিয়েৎ থেকে রাজধানী সরিয়ে আনেন এবং নতুন নগরী মারায়ুক-উ-কে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেন। এই নগরী তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল ১৪৩০ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে এবং শেষ হয়েছিল ১৪৩২-৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে। এই বছরেই তিনি রাজধানী স্থানান্তরের কাজ সম্পন্ন করেন। এর কিছু পরে ১৪৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মিন সো মোন-এর প্রতিষ্ঠিত
মারায়ুক-উ রাজনী-নগরী'র নামানুসারেচ এই সাম্রাজ্যের নামকরণ করা হয়েছে। এই সাম্রাজ্যে টিকেছিল ১৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।

বাংলার প্রতি কৃ্তজ্ঞতা স্বরূপ মিন সো মোন আরাকানে বাংলার ইসলামি স্বর্ণমুদ্রা চালু করেছিলেন। গৌড়ের মুসলমানদের অনুকরণে মুদ্রা প্রথার প্রবর্তন হয়। মুদ্রার একপিঠে রাজার মুসলিম নাম ও অভিষেক কাল এবং অপর পিঠে মুসলমানদের কালিমা শরীফ আরবী হরফে লেখা হয়। পরবর্তীতে মিন সো মোনা নতুন মুদ্রা চালু করেন যার একপাশে ছিল বর্মি বর্ণ এবং অপরপাশে ছিল ফার্সি বর্ণ।

১৪৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই  মিন সো মোন মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তাঁর ছোট ভাই  মিন খায়ই মারায়ুক রাজ্যের রাজা হন।

বঙ্গের সুলতান ১৪৩১ খ্রিষ্টাব্দের  জালালউদ্দীন মুহম্মদ শাহের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় বসেন তাঁর পুত্র সামস্‌উদ্দিন আহমেদ। কিন্তু তাঁর কুশাসনে দেশে অরাজকতার সৃষ্টি হয় এবং বাংলার রাজশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে মারায়ুক রাজ্যের উপর বাংলার প্রভাব হ্রাস পায়। এই সুযোগে মিন খায়ই একটি শক্তিশালী সৈন্যদল গঠন করেন। এই সূত্রে তিনি ১৪৩৭ খ্রিষ্টাব্দে স্যান্ডওয়ে রাজ্য দখল করেন একই সাথে স্যান্ডওয়ে রানি সো ইনকে বিবাহ করেন।

এরপর তিনি  ১৪৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন হরিকেলের রামু দখল করেন। ১৪৪৯ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম দখল করে নেন। মিন খায়ই-র ক্ষমতা বৃদ্ধিতে পার্শ্বর্তী শক্তিশালি রাজ্য আভা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। ফলে, ১৪৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মার্চ তৎকালীন আভার রাজা, মিন খায়ই-এর সাথে শান্তি ও সীমান্ত চুক্তি করে।

১৪৫৮ খ্রিষ্টাব্দে
মিন খায়ই তাঁর পুত্র বা সো ফিয়ু-কে সিংহাসনের উত্তরাধিকার হিসেবে ঘোষণা দেন। কিন্তু এই মনোনয়নে অসন্তুষ্ট হয়ে, তাঁর অপর পুত্র মিন সুই (রানি সো পাইনসা'র পুত্র) তাঁর ল্যাঙ্গিয়েতের প্রশাসনের পদ পরিত্যাগ করে আভা রাজ্যের কালে-তে চলে যান। ১৪৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই নভেম্বর তিনি মারায়ুক রাজ্য আক্রমণ করেন। মিন খায়ই সাফল্যের সাথে এই আক্রমণ প্রতিহত করেন। ১৪৫৯ খ্রিষ্টাব্দে মিন খায়ই মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন  বা সো ফিয়ু।

সিংহাসন লাভের পর, বা সো ফিয়ু রাজ্যের অবস্থা স্থিতিশীল রাখার উদ্যোগ নেন। এই সময় চট্টগ্রামের পশ্চিমাঞ্চল ছিল বাংলার সুলতান রুকুনুদ্দীন বারবাকের শাসনাধীন। ১৪৫৯ খ্রিষ্টাব্দের শেষার্ধে বা সো ফিয়ু বাংলার সুলতানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের যুদ্ধ করেন এবং চট্টগ্রাম-এর উপর পূর্ণ কর্তৃত্ব লাভ করতে সক্ষম হন চট্টগ্রাম-জয়ের পর তিনি মুদ্রা প্রচলন করেন। এই মুদ্রায় ছিল ফার্সি ভাষা কালিমা উৎকীর্ণ ছিল।

১৪৬১ খ্রিষ্টাব্দের আরাকানের একটি বৌদ্ধ ধর্মীয় জনগোষ্ঠী বিদ্রোহ করে। এই বিদ্রোহ তিনি সহজেই দমন করতে সক্ষম হন। এই বিদ্রোহ দমনের পর ১৪৬৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পিয়ুন হৎয়ুং নগরী নির্মাণ করেন। এছাড়া ১৪৭১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারায়ুক-উ নগরীর সংস্কার করেন। নগর বর্ধিত করার পাশাপাশি তিনি নগরীতে জল সরবরাহ এবং যোগাযোগের জন্য পরিখা এবং জলপ্রণালী তৈরি করেন।

১৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দের  ২৩শে মে, থেট জনগোষ্ঠী বিদ্রোহ করে। বা সো ফিয়ু কঠোর হস্তে এই বিদ্রোহ দমন করেন।

মহাবোধি শেয়ুগু মন্দির

এরপর তিনি অন্যান্য রাজ্যের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এই সূত্রে তৎকালীন সিংহলের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই সূত্রে তিনি সিংহলরাজের সহায়তায় মারায়ুক-উ'র উত্তরে নির্মাণ করেছিলেন মহাবোধি শেয়ুগু মন্দির।

১৪৮১ খ্রিষ্টাব্দ একটি বড় ধরনের বিদ্রোহ দেখা দেয় চট্টগ্রাম-এ। ফলে এই বছরের ডিসেম্বর মাসের দিকে বা সো ফিয়ু চট্টগ্রাম-এ অভিযান চালান। বিদ্রোহীদের সাথে ভয়ঙ্কর কয়েকদিন ধরে যুদ্ধ হয় এবং শেষ পর্যন্ত তিনি এই বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হন।

বা সো ফিয়ু তাঁর সন্তানদের মধ্যে ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকার হিসেবে গামানিকে বেছে নিয়েছিলেন। তিন ভবিষ্যৎ রাজার নাম ঘোষণার আগেই, তাঁর অপর ছেলে ডাওলিয়া, ১৪৮২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই আগষ্ট তাঁর চাকরকে দিয়ে পিতাকে হত্যা করান। এর ফলে বড় ছেলে হওয়ার সুবাদে রাজত্ব লাভ করেন মিন ডাওলিয়া

১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সাফল্যের সাথে রাজত্ব করেন। এই বছরেই পার্বত্য চট্টগ্রাম অভিযান চালান। এই অভিযান ব্যর্থ হয়ে ফেরার পথে যুদ্ধ হাতির উপরেই মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর  মৃত্যুর পর তাঁর চাচা  বা বা সো নাইয়ো রাজত্ব লাভ করেন।


তিনি মিন ডাওলিয়া'র মা, সো নান্দি-কে বিবাহ করে প্রধান রানি করেন। রাজ্য লাভের পর তিনি রাজ কর্মচারীদের বিদ্রোহের মুখে পড়েন। এর ফলে তিনি বেশ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। শেষ পর্যন্ত তিনি ১৪৯৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর মাত্র ৮ বছর বয়সে রাজত্ব লাভ করেছিলেন মিন ডাওলিয়া'র পুত্র মিন রান অঙ মন্ত্রী পরিষদ মিন রান অঙ -এর পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনা করতো এবং একই সাথে তাঁকে রাষ্ট্র পরিচালনা শিক্ষা-প্রদান করতে থাকে। কিন্তু বালক মিন রান অঙ-এর কাছে লোভনীয় ছিল বালকসুলভ খেলাধূলা। দুর্ভাগ্যক্রমে মিন রান অঙ এই বছরে অর্থাৎ ১৪৯৪ খ্রিষ্টাব্দর জুলাই মাসে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর, রাজত্ব লাভ করেন সালিঙ্গাথু। রাজত্ব লাভের পর তিনি নিজের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ঠ সাবধানতা অবলম্বন করেন। তিনি প্রাসাদ এবং রাজধানীর চারপাশে নিরাপত্তা রক্ষী দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলেন। এছাড়া তিনি কোথাও ভ্রমণে গেলে, তাঁকে চারপাশে থাকতো নিরাপত্তা বলয়। ১৫০২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পরে রাজত্ব লাভ করেন তাঁর পুত্র মিন রাজা

মিন রাজা
রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ উৎসাহী ছিলেন না। একমাত্র বাৎসরিক হাতি শিকারের আয়োজনে অংশগ্রহণ করতেন। এছাড়া প্রায় অলস জীবনযাপন করতেন। তিনি রাজধানী ম্রায়ুক উ-তে থাকার পরবর্তে বেশরি ভাগ সময় কাটাতেন প্রাচীন নগরী উইথালি-তে। রাজ্যের প্রতি নজর না রাখার কারণে রাজশক্তি দুর্বল হয়ে পড়তে থেকে। এই দুর্বলতার সুযোগে ১৫১৩ খ্রিষ্টাব্দে থেট জনগোষ্ঠী বিদ্রোহ করে। এই বিদ্রোহী দল উইথালি'র রাজপ্রাসাদ দখল করে নেয় এবং ২৯ দিন তাদের দখলে রাখে। এই সময় মন্ত্রী পরিষদ মিন রাজাকে অপসারণ করে, তাঁর ১৫ বৎসরের সন্তান গজপতিকে সিংহাসনে বসান। এরপর নিষ্ক্রিয় অবস্থায় প্রাসাদেই থাকতেন। ১৫১৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

১৪৯৩ খ্রিষ্টাব্দে হোসেন শাহ বাংলার সুলতান হন। তিনি চট্টগ্রামের অধিকার নিতে গেলে ত্রিপুরার রাজা ধনমানিক্যের সাথে সংঘাত সৃষ্টি হয়। ১৫১৩-১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত উভয় রাজার ভিতর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। রাজা ধনমানিক্যের মৃত্যুর পর হোসেন শাহ‌ চট্টগ্রাম তাঁর দখলে আনেন এবং উত্তর আরাকান পর্যন্ত তাঁর রাজ্য বিস্তার করতে সক্ষম হন।

১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে পর্তুগিজরা চট্টগ্রামে আসা শুরু করে। এরা প্রথমাস্থায় বাণিজ্য করতে এলেও, পরে তারা জলদস্যু হয়ে যায়। সুলতান এদের দমন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু এ সময় আফগান শাসক শের শাহ বাংলা আক্রমণ করতে পারে, এই আশঙ্কায় তিনি পর্তুগিজদের সহায়তা কামনা করেন। তখন সামরিক সহায়তার বিনিময়ে ১৫৩৭ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজরা চট্টগ্রামে বাণিজ্য কুঠি নির্মাণ করে। এই সময় তারা বন্দর এলাকার শুল্ক আদায়ের অধিকার লাভ করে। এতকিছুর পরেও ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দে
শেরশাহ, সম্রাট‌-র সেনাপতি চট্টগ্রাম দখল করেন। কিন্তু এই সেনপাতি চট্টগ্রামের উপর পূর্ণ কর্তৃত্ব লাভ করতে পারেন নি।

গৌড়ের অভ্যন্তরীণ গোলযোগের সুযোগ নিয়ে আরাকান রাজা
১৫৩১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে মিন বিন করে সিংহাসন দখল করেন। ১৫৫৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি পরাক্রান্ত সম্রাট হিসেবে আরকান শাসন করেছেন। তিনি বঙ্গদেশ আক্রমণ করে ঢাকা নগর দখল করেছিলেন। পরে তিনি ত্রিপুরার রাজ্যও দখল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই অভিযান সাফল্যের সাথে শেষ করার পর, পর্তুগিজ বাহিনী তাঁর রাজ্য আক্রমণ করে। এই আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে পড়লেও শেষ পর্যন্ত পর্তুগিজ আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হন। এরপর তিনি সাফল্যের সাথে নিম্ন বার্মা থেকে আগত তৌঙ্গুবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করেন। ১৫৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পর রাজত্ব লাভ করেন, তাঁর পুত্র দীক্ষা।

চট্টগ্রামে পর্তুগিজদের আবার দস্যুতা অত্যন্ত বৃদ্ধি পেলে, আরাকান রাজা ১৬০৩ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। এই অভিযানের ফলে পর্তুগিজদের সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করা সম্ভব হয় নি। বিশেষ করে সন্দ্বীপ অঞ্চল পর্তুগিজ জলদস্যু গঞ্জালেস দখলে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।

১৬
১৫ খ্রিষ্টাব্দে আরকান রাজার সৈন্যদের সাথে পর্তুগি্দের সাথে একটি বড় ধরনের যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে সন্দ্বীপে অবস্থতি পর্তুগিজ সেনাপতি ইমানুয়েল মার্তুস ২০০ শতাধিক সৈন্য-সহ নিহত হন। এর সন্দ্বীপের আশপাশের অঞ্চলে আরাকান রাজার অধিকারে আসে। ১৬১৬ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজ সৈন্যরা সন্দ্বীপ ত্যাগ করলে, এই দ্বীপাঞ্চলটি আরাকান রাজার অধিকারে আসে।

১৬২৬ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজরা আরমগাঁ-তে অপর একটি বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে। এটাই চট্টগ্রাম অঞ্চলের ছিল ইংরেজদের প্রথম বৈধ স্থাপনা। কিন্তু নানাবিধ অসুবিধার কারণে ইংরেজরা দক্ষিণ ভারতের মুসল্লপট্টমকে নির্বাচন করে। ফলে
চট্টগ্রাম নামে মাত্র একটি বাণিজ্যস্থলের পরিণত হয়।

১৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দের মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব
বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খানকে চট্টগ্রাম দখলের নির্দেশ দেন। শায়েস্তা খান ১৬৬৫ খিষ্টাব্দের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রাম অভিযান শুরু করেন। তাঁর পুত্র বুজুর্গ উমেদ খানকে সার্বিক নেতৃত্ব দেওয়া হয় এবং নৌ-সেনাপতি ইবনে হোসেনকে নৌ-বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করা হয়। অন্যদিকে শায়েস্তা খান নিজে রসদ সরবরাহের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেনাবাহিনী ও নৌ-বাহিনী একই সময়ে একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে স্থল ও সমুদ্রপথে যাত্রা করে। স্থল বাহিনীকে জঙ্গল কেটে রাস্তা তৈরি করে অগ্রসর হতে হয়েছিল। সমুদ্রে এবং পরে কর্ণফুলী নদীতে একটি বড় যুদ্ধে পর্তুগিজদের সাহায্য নিয়ে মোগলরা প্রথম জয় পায়। এই সময় টমাস প্রাট নামে এক ইংরেজ আরাকানীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে মোঘলদের পরাজিত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।   ১৬৬৬ খিষ্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারিতে এরা আরাকানদের চট্টগ্রাম দুর্গ অবরোধ করে। এই যুদ্ধে জয়লাভের পর ২৭শে জানুয়ারি বুজুর্গ উমেদ খান দুর্গে প্রবেশ করেন এবং চট্টগ্রামকে মুগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। সম্রাটের অনুমতি সাপেক্ষে শায়েস্তা খান চট্টগ্রামের নাম পরিবর্তন করে ইসলামাবাদ করেন।

১৬৮৬ খ্রিষ্টাব্দে  জব চার্নক এবং ১৬৮৮ খ্রিষ্টাব্দে কাপ্তেন হিথের চট্টগ্রাম দখল করতে ব্যর্থ হয়। ১৬৭০ ও ১৭১০ খ্রিষ্টাব্দে আরাকানীরা চট্টগ্রাম দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ১৭২৫ খ্রিষ্টাব্দে আরাকানরা বিশাল এক সেনাবাহিনী নিয়ে চট্টগ্রাম দখল করতে সক্ষম হয়, কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই মোগলরা আরাকানদের বিতারিত করে।


মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পরাজিত হয়ে, মোগল যুবরাজ শাহ সুজা ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে সড়ক পথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হয়ে আরাকানে পলায়ন করেন। তৎকালীন রোসাং রাজা চন্দ্র সুধর্মা বিশ্বাসঘাতকতা করে শাহ সুজা এবং তার পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করেন।

উমেদ খাঁ চট্টগ্রাম
ের প্রথম ফৌজদারের দায়িত্ব পান। এই সময়  আরাকানীরা চট্টগ্রাম অধিকারের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। এই সময় টমাস প্রাট নামে এক ইংরেজ আরাকানীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে মোঘলদের পরাজিত করার চেষ্টা করে।  জব চার্নক ১৬৮৬ খ্রিষ্টাব্দে এবং ১৬৮৮ খ্রিষ্টাব্দে কাপ্তেন হিথের চট্টগ্রাম দখল করতে ব্যর্থ হয়। ১৬৭০ ও ১৭১০ খ্রিষ্টাব্দে আরাকানীরা চট্টগ্রাম দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তবে ১৭২৫ আরাকানরা বিশাল এক সেনাবাহিনী নিয়ে চট্টগ্রাম দখল করতে সক্ষম হয়, কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই মোগলরা আরাকানদের বিতারিত করে। এরপর আরাকান রাজ্য সংকুচিত হয়ে একটি ছোট্ট অঞ্চলে পরিণত হয় এবং রাজনৈতিকভাবে বেশ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।

১৭৩১ থেকে ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে আরাকান রাজ্য ১৩ জন রাজা শাসন করেছে। তবে এসব  রাজাদের গড় শাসনকাল দুই বছরের বেশি ছিল না। সে সময়ে আরাকানের রাজারা মুসলিমদেরকে রাজদরবারের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিতেন। ১৭ শতকের দিকে আরাকানে বাঙালি মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারা আরাকানের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে কাজ করতো। রাজার সৈন্যবাহিনীতে ছিল মুসলমানদের আধিপত্য ছিল এবং মন্ত্রী পরিষদের অধিকাংশই মুসলমান ছিলো। এই সময় কাজী নিয়োগ করে বিচারকার্য পরিচালিত হতো। কামেইন বা কামান নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী যারা মিয়ানমার সরকারের নৃতাত্ত্বিক জাতিসত্ত্বার মর্যাদা পেয়েছে তারা আরাকানের মুসলিম জনগোষ্ঠীরই একটা অংশ ছিল ।

১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বার্মার রাজা ভোদপায়া আরাকান আক্রমণ করেন। এই সময় হাজার হাজার আরাকানী পালিয়ে সীমান্তবর্তী পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করে। এর ভিতরে আরকানের সকল জনগোষ্ঠীর মানুষই ছিল। ভোদপায়া এই অঞ্চলে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য, স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করেন এবং রোহিঙ্গারা বহিরাগত হিসেবে প্রচার করেন। একই সাথে রোহিঙ্গাদের সম্পত্তি লুটপাটের সহায়তা করে ভোদপায়ার সৈন্যরা। এর ফলে আরকান অঞ্চলের সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপিত হয়। আরাকান দখল করার পর, বোধপায়ার আরাকানী সৈন্যদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে এবং সবাইকে অস্ত্র ফেলে সেনানিবাসে এসে আত্মসমর্পন করে নিরাপদে নিজ নিজ ঘরবাড়িতে থাকার সুযোগ লাভের উপদেশ দেয়। কিন্ত সৈন্যরা সেনানিবাসে এসে আত্মসমর্পন করলে ভোদপায়া মুসলিম সেনারা সবাইকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে।

এরপর  ভোদপায়া  সাধারণ রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের নির্দেশ দেয়। ফলে রোহিঙ্গারা আরকান ছেড়ে চট্টগ্রাম দিকে পালিয়ে আসতে থাকে। ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ভিতের প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার মানুষ চট্টগ্রাম অঞ্চলে চলে আসে। ইতিমধ্যে আরাকানীদের একাংশ অতর্কিত বর্মী বাহিনীর উপর হামলা চালাতে শুরু করে। অন্যদিকে বিদ্রোহী আরাকানীদের আশ্রয়স্থলগুলো
ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনাধীন এলাকায় পরিণত হয়। বার্মার রাজা এদের মূল নেতাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্যে ব্রিটিশ কোম্পানি সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে। ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি ছলছাতুরীর আশ্রয় নিয়ে তিনজন বিদ্রোহী আরাকানী নেতাকে বন্দি করে বার্মা রাজার কাছে প্রেরণ করে। বার্মার সৈন্যরা বন্দিদের চোখ উপড়ে জলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করে তাদের মেরে ফেলে !

এরপর সিনপিয়া নামক জনৈক নেতা বিদ্রোহীদের আরো সুসংগঠিত করে আরাকানে অবস্থান নেওয়া বর্মি বাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের বিপর্যন্ত করে তুলেন। এক পর্যায়ে সিনপিয়া রাজধানী ম্রোহং ব্যতীত সমগ্র আরাকান দখল করে নেয়। এ সময় সিনপিয়ার বাহিনীতে তীব্র গোলাবারদ ও রসদের অভাব দেখা দিলে
 ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে গোলাবারুদ ও রসদ সরবরাহ করার জন্যে অনুরোধ করে। কিন্তু কোম্পানি এই সাহায্য দিতে অস্বীকার করে। পুনরায় নতুন বর্মি বাহিনী আরাকানে অভিযান চালালে, সিনপিয়া বাঁশের বর্শা এবং তীর-ধনুক দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সিনপিয়া পরাজয় বরণ করেন।

ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে আরাকান পুরোপুরি দখল করে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানিরা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনস্থ বার্মা আক্রমণ করে। ব্রিটিশরা জাপানিদের কাছে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা ছেড়ে চলে যায়। এর ফলে ব্যাপকহারে সেখানে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে বৌদ্ধ রাখাইন এবং মুসলিম রোহিঙ্গাদের মধ্যকার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিল উল্লেখযোগ্য। এই সময়ে ব্রিটিশপন্থীদের সাথে বার্মার জাতীয়তাবাদীদেরও সংঘর্ষ হয়। জাপানিদের আক্রমণের সময় উত্তর আরাকানের ব্রিটিশপন্থী অস্ত্রধারী মুসলিমদের দল বাফার জোন সৃষ্টি করেছিল।
রোহিঙ্গারা যুদ্ধের সে সময় মিত্রপক্ষ তথা ব্রিটিশদের সমর্থন করেছিল এবং জাপানি শক্তির বিরোধিতা করেছিল, পর্যবেক্ষণে সাহায্য করেছিল মিত্রশক্তিকে।

১৯৩০
খ্রিষ্টাব্দে স্থানীয় কংগ্রেস সভাপতি কালী কেশব ঘোষের নেতৃত্বে আইন অমান্য-আন্দোলন সংঘটিত হয়।
১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে জাপান বার্মা দখল করার পর স্থানীয় মগরা জাপানি সৈন্যদের সহায়তায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। ইতিহাসে এই গণহত্যাটি ১৯৪২ সালের গণহত্যা নামে খ্যাত।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে শাসনতান্ত্রিক নির্বাচনে ইংরেজদের দেওয়া 'সন্দেহভাজন নাগরিক' হিসেবে মুসলমানদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে বার্মা স্বাধীনতা লাভ করে এবং রাখাইন মুসলমানরা 'সন্দেহভাজন নাগরিক' হিসেবেই থেকে যায়। ফলে বার্মায় আরাকানি বৌদ্ধ এবং মুসলিম রোহিঙ্গাদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এই বছরের নভেম্বর মাসে  উ নু-র শাসনামলে (৫তম বার্মা রেজিমেন্ট) সামরিক অভিযান চালায় এবং এই সময় মগ সেনাদের নিয়ে
Burma Territorial Force গঠন করে, রোহিঙ্গাদের নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে।

১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের পরে বার্মার আরকান অঞ্চলকে রাখাইন প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। আর এই রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের বিতারিত করার জন্য ধারাবাহিকভাবে অত্যাচার শুরু হয়। এখন পর্যন্ত (২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ) অব্যাহত আছে।

    [দেখুন: রোহিঙ্গা অধ্যায়]
 


সূত্র: 
http://en.wikipedia.org/wiki/Burmese_Indians