আ.স.ম আব্দুর রব
পূর্ণ নাম আবু সায়েদ মোহাম্মদ আব্দুর রব।
১৯৪৫-? খ্রিষ্টাব্দ
ছাত্রনেতা, মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনৈতিক নেতা
১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি নোয়াখালিতে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর, তিনি নোয়াখালির কল্যাণ হাই স্কুলে
ভর্তি হন।
১৯৫৮
খ্রিষ্টাব্দে তিনি ছিলেন এই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। এই সময় স্কুলের অন্যান্য
ছাত্রদের সাথে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মিটিং মিছিলে যাওয়া-আসা করতেন। মূলত এর মধ্য
দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয়েছিল।
নোয়াখালির কল্যাণ হাই স্কুল থেকে পাশ করে তিনি ভর্তি হন চৌমুহনী কলেজে। এই কলেজে এসে তিনি রীতিমত
রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। চৌমুহনী কলেজের ছাত্রসংসদ পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন।
এই সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়ন, ন্যাপ এবং কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আমার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এরপর কিছুদিন আন্ডারগ্রাউন্ড সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণে
ডাকসুর সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ থেকে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম
পরিষদ গঠনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
২ মার্চ সকাল ১১ টায়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের বটতলায় ডাকসু ও ছাত্রলীগের
যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয় ছাত্র-জনতার এক বিশাল সমাবেশে। এই সমাবেশে শিল্পী
শিবনারায়ণ দাশের পরিকল্পনা ও অঙ্কনে সবুজ পটভূমিকার ওপর লাল বৃত্তের মাঝখানে
বাংলার সোনালি মানচিত্র-সংবলিত স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উত্তোলন করেন
ডাকসুর তৎকালীন সভাপতি
আ.স.ম আব্দুর রব। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন- ছাত্রলীগের তৎকালীন
সভাপতি নূরে-আলম-সিদ্দিকী, ছাত্রলীগ সম্পাদক
শাজাহান সিরাজ, ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক
আব্দুল কুদ্দুস মাখন ও পূর্বতন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমদ প্রমুখ ।
এই দিন বিকালে, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, পল্টনে একটি জনসভার আয়োজন করে। এই সভায় একটি
প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে 'স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ঘোষণা ও কর্মসূচী
দেওয়া হয়। এই ইশতেহার পাঠ করেছিলেন ছাত্রলীগের
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে
শাহজাহান সিরাজ।
৮ মার্চ (সোমবার, ২৩ ফাল্গুন
১৩৭৭ বঙ্গাব্দ) ছাত্রলীগের সভাপতি
নূরে-আলম-সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ এবং ডাকসুর সহ-সভাপতি
আ.স.ম আব্দুর রব ও
সাধারণ সম্পাদক
আব্দুল কুদ্দুস মাখন এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, বাংলার বর্তমান
মুক্তি আন্দোলনকে ‘স্বাধীনতার আন্দোলন’ ঘোষণা করে স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক জনসভায় যে প্রত্যক্ষ
কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন আমরা তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে
ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য বাংলার সংগ্রামী জনতার প্রতি আহবান জানাচ্ছি।'
১০ই মার্চ (বুধবার ২৫
ফাল্গুন ১৩৭৭ বঙ্গাব্দ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক ছাত্রাবাসের প্রাঙ্গনে কেন্দ্রীয়
ছাত্রলীগের উদ্যোগে একটি জনসভা হয়। এই সভার সভাপতিত্ব করেছিলেন
নূরে-আলম-সিদ্দিকী।
২৩ মার্চ আউটার স্টেডিয়ামে
জয়বাংলা স্বেচ্ছাসেবকদের প্যারেডে তিনি-সহ অপর চারনেতা অভিবাদন
গ্রহণ করেন। অপর তিন নেতা ছিলেন
নূরে-আলম-সিদ্দিকী, শাহজান সিরাজ ও
আ.স.ম আব্দুর রব
।
পরে তিনি ও অন্যান্য নেতাকর্মী জয়বাংলা স্বেচ্ছাসেবকদের
সাথে
বঙ্গবন্ধু'র
বাড়িতে গিয়ে তাঁকে সামরিক কায়দায়
অভিবাদন জানান।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি মুজিব বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের উপ-অধিনায়ক ছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে ৩১শে অক্টোবর সাত সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে জাসদ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) নামক রাজনৈতিক দল গঠিত হয়। এই দলের সভাপতি হন আবদুল জলিল এবং যুগ্ম আহহবায়ক হন আ.স.ম আব্দুর রব। একই বছরে ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত অতিরিক্ত কাউন্সিলে ১০৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়।
জাসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সাধারণ সম্পাদকের পদ লাভ করেছিলেন।
১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে জানুয়ারি বাকশাল গঠন করা হলে জাসদ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এরপর
জাসদের আ স ম আব্দুর রবকে গ্রফতার করা হয়। ১৫ ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত
হওয়ার পর,
মোশতাক আহমেদ ক্ষমতা লাভ করেন। এই সময় তিনি জেলেই কাটান।
এরপর জিয়াউর
রহমান ক্ষমতায় আসেন। যদিও এই ক্ষমতায় আসার সময় জাসদের
অন্যতম নেতা কর্নেল তাহের সাথে চুক্তি ছিল, জাসদের সকল কর্মীকে মুক্তি দেওয়া হয়ে।
ক্ষমতায় আসার পর,
জিয়াউর রহমান
এই চুক্তি ভঙ্গ করেন। এর ফলে আব্দুর রব কারাগার থেকে মুক্তি পান
নি। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে জাসদের শীর্ষ নেতাদেরকে কারাবন্দি রেখেই
জিয়াউর রহমান
তাঁর সামরিক শাসনকে বৈধতা দেয়ার জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেন।
লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসন থেকে তিনি ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে
সংসদ সদস্য
নির্বাচিত হন।
১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। এই অবস্থায় আ স ম আবদুর রব
লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি আসন) থেকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। এই বিজয়ের পর তিনি সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হন।
উল্লেখ্য,
১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনের দিন রামগতি বাজারে তাঁর বিরুদ্ধে জিতেন্দ্র নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করার অভিযোগ উত্থাপিত হয়।
ওই সময় তিনি এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়েন। এই অবস্থায় তিনি বড়খেরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের
বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। পরে সেনাবাহিনী তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লায় নিয়ে যায়।
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন।
১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে তিনি লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ঐ নির্বাচনের পর জাসদ আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়। ফলশ্রুতিতে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন।
২০০১ ও ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন।