দীপালী নাগ,
বিদুষী
১৯২২-২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ
সঙ্গীতশিল্পী
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারি (বুধবার
১০ ফাল্গুন১৩২৮ বঙ্গাব্দ) তদনীন্তন
ব্রিটিশ ভারতের (অধুনা
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য) দার্জিলিং শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা জীবনচন্দ্র তালুকদার
ছিলেন- আগ্রার সেন্ট জনস্ কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক। মায়ের নাম তরুলতা তালুকদার।
উল্লেখ্য, এই তালুকদার পরিবারের আদি নিবাস ছিল অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা বিক্রমপুরের
কুমার ভোগ অঞ্চলের কাজীর পাগলা গ্রামে।
দীপালী নাগ ছিলেন- পিতা-মাতার জ্যৈষ্ঠ কন্যা। তিনি শৈশবে পিতার কর্মস্থল আগ্রাতে চলে
আসেন। ফলে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল। আগ্রা থেকে তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষায়
অংশগ্রহণ করে চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। এর তিনি স্নাতকে দ্বিতীয় এবং ইংরাজী নিয়ে স্নাতকোত্তরে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।
আগ্রা শহরেই তাঁর সঙ্গীতের হাতেখড়ি হয়েছিল ওস্তাদ তসুদ্দুক খাঁ ও বসীর খাঁয়ের কাছে।
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ওস্তাদ তসুদ্দুক খাঁর ফুফাতো ভাই ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁর কাছে
সঙ্গীতের তালিম নেওয়া শুরু করেন। এই সময় তিনি মঞ্চে গান গাওয়া শুরু করেন। এই বছরেই
তিনি তাঁর পিতার সাথে কলকাতায় আসেন। এই সময় সেকালের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ দীলিপকুমার
রায়ের বাড়িতে অনুষ্ঠিত একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এই আসরে এইচএমভি
রেকর্ড কোম্পানির উচ্চপদ্স্থ কর্মকর্তা হেমচন্দ্র সোম তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হন এবং
তিনি নলিন সরকার স্ট্রিটে অবস্থিত এইচএমভির অফিসে আমন্ত্রণ জানান। এইচএমভির অফিসে
প্রথম তাঁর সাথে পরিচয় কাজী নজরুল ইসলামের। দীপালী এই অফিসঘরের আসরে পরিবেশন করেন-
জয়জয়ন্তী রাগে ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ-এর রচিত গান - মোরে মন্দির আবলো নহি আবে'। এই গানের
সুরে তৎক্ষাণাৎ নজরুল রচনা করেছিলেন 'মেঘমদুর বরষায় কোথা তুমি। এই বছরের সেপ্টেম্বর
মাসে এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে নজরুলের রচিত গানটির রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল।
কলকাতার একটি অনুষ্ঠানে সুখদেব মহারাজ তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হন এবং তিনি
দীপালীকে টপ্পা শেখানো প্রস্তাব দেন। এই সূত্রে তিনি সুখদেব মহারাজের কাছে টপ্পার
তালিম নেন।
১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে
আকাশবাণীতে সঙ্গীত পরিবেশনা শুরু করেন।
১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে মে প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা বাসন্তী দুলাল নাগচৌধুরীর
অনুষ্ঠানিক বিবাহ হয়। ৩রা মে এই বিবাহ আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল রাচিতে।
১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রয়াগ সঙ্গীত সম্মেলনে যোগদান করেন। এই সময় বিজয় কিচলুর সাথে
তাঁর পরিচয় হয়। পরবর্তীকালে বিজয় কিচলু সঙ্গীত রিসার্চ আকাদেমি গঠিত হলে তিনি চেয়ারপার্সন হন।
এই বছরেই কলকাতার শহরতলীতে দুলাল নাগ একটি বাড়ি তৈরি করেন। এই বাড়িতে স্বামীর সাথে
থাকা শুরু করেন।
১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী সুখেন্দু গোস্বামীর অনুরোধে তিনি ভবানীপুর গীতবিতানের সঙ্গীতভারতী শাখার সহকারী অধ্যক্ষার পদে যোগ দেন। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি
এই বিদ্যায়তনে ছিলেন। পরে তিনি আই টি সি পরিচালিত সঙ্গীত রিসার্চ আকাদেমির সাথে
যুক্ত হন। তিনি এখানে ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দ হতে জীবনের শেষদিন এই প্রতিষ্ঠানের
সাথে যুক্ত ছিলেন।
২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জুন স্বামীর মৃত্যু হয়।
২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সেরিব্রাল হেমারেজ-এ আক্রান্ত হন। কলকাতার এক হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। এরপর
তিনি তাঁর একমাত্র পুত্র দীপঙ্কর, গুজরাটেরর গান্ধীনগরে নিজের বাসায় রাখেন। সেখানে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে ডিসেম্বর ৮৭ বৎসর বয়সে পরলোক গমন করেন।