খাদিম হুসেন রাজা, মেজর জেনারেল
(১৯২২-১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দ)
পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা।
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ ভারতের ঝেলাম জেলার হারানপুরে
জন্মগ্রহণ করেন। তিনি
উচ্চমাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া করে লাহোরের সেন্ট্রাল মডেল হাইস্কুলে
ভর্তি হন। ১৯৪২
খ্রিষ্টাব্দে লাহোর সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজি অনার্সসহ স্নাতক পরীক্ষায় পাশ করেন।
এরপর তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন
দেরদুন সামরিক শিক্ষাকেন্দ্র থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে তিনি
ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটেলিয়ানের সাথে বার্মাতে যান।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান সেনবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ
পর্যন্ত কাশ্মীর সামরিক তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করেন। এরপর তিনি কোয়েটা সামরিক
স্টাফ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক
শিক্ষাগ্রহণের জন্য যান।
পাকিস্তানি সেনাবহিনীতে
তিনি প্রথম ব্যাটেলিয়ান পরিচালনা করেন কাকুল পাকিস্তান মিলিটারি
একাডেমিতে। এই সময় তিনি মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে, তিনি ১৪ ডিভিশনের
জেনারেল অফিসার কমান্ডিং-এর দায়িত্ব পালন করেন। এই বছরের ২৫শে মার্চ দিবাগত রাত্রে
ঢাকাতে
অপারেশন সার্চ লাইট
নামক যে ব্যাপক গণহত্যা ও
ধ্বংসাত্মক সামরিক অভিযান পরিচালিত হয়, খাদিম হোসেন সেই অভিযানের পরিচালক ছিলেন।
তবে
অপারেশন সার্চ লাইট -এর
মূল পরিকল্পনারও অংশভাগী ছিলেন। উল্লেখ্য, এই অভিযান পরিকল্পনার তাঁর সাথে অন্য
দুই জন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল
টিক্কা খান এবং মেজর জেনারেল
রাও ফরমান আলী।
১৯৭১ সালের ১লা মার্চ আকস্মিকভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য
ইয়াহিয়া খান জাতীয় অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে
আওয়ামী লীগ প্রধান
বঙ্গবন্ধু
শেখ
মুজিবর রহমানের আহ্বানে সারা পূর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়।
এ পরিস্থিতিতে, তিনি
বঙ্গবন্ধুর
সঙ্গে আলোচনার জন্য ১৫ই মার্চ ঢাকায় আসেন। এই সময় প্রেসিডেন্টকে বরণ করে নেওয়ার
জন্য অন্যান্য সেনা কর্মকর্তাদের সাথে তিনিও ছিলেন। যাঁরা অপেক্ষা করছিলেন, তাঁরা
হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল
টিক্কা খান, মেজর জেনারেল
খাদিম হুসেন রাজা,
মেজর জেনারেল
রাও ফরমান আলী ও মেজর জেনারেল এ ও
মিঠা। মিঠা ছিলেন
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল।
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পাকিস্তান সেনাকল্যাণ
ট্রাস্ট দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর, তিনি
মোজাম্বিক, এ্যাঙ্গোলা, সোয়াজিল্যান্ড এবং লেসোথো-তে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের
দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়।
তিনি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত ঘটনার উপর
একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। গ্রন্থটির নাম ম
My Own Country: East Pakistan, 1969-71
। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে গ্রন্থটি
প্রকাশ করেছিল (Oxford University
Press, 2012)