লুইপাদানাম্
অন্যতম প্রাচীন বাঙালি কবি। সংক্ষেপিত নাম লু্ই পা।
এঁর গুরু ছিলেন
শবর পা আর শিষ্যরা
ছিলেন
দারিক পা
ও
কুক্কুরীপা।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর আবিষ্কৃত চর্যাগীতিগুলোর ভিতরে এঁর রচিত পদ ছিল ২টি।
চর্যগীতির সঙ্কলনে এই পদ দুটির ক্রমিক সংখ্যা
১.
কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল
[তথ্য]
২৯. ভাব ন হোই অভাব ণ
[তথ্য]
মূলত এই দুটি পদের
জন্যই তিনি সর্বাধিক পরিচিত। উভয় পদের ভণিতায়
'লুই' উল্লেখ আছে। ধারণা করা হয়, সংস্কৃত রোহিত (রুই মাছ) শব্দ থেকে গৃহীত
হয়েছিল। শব্দ উৎসক্রম অনুসারে দাঁড়ায় রোহিত>রুই>লুই।
লুইপা ঠিক কোন সময়ের কবি ছিলেন, তা নিয়ে বিতর্ক আছে।
sa-skya-bkya-Bum
এর
মতে-
ধর্মপাল
(৭৭০-৮১০ খ্রিষ্টাব্দ)
দেবপালের
রাজত্বকালে জীবিত ছিলেন।
ড. মুহম্মদ
শহীদুল্লাহ
র
মতে, লুইপা ছিলেন শবরপার শিষ্য। তাই তিনি প্রথম কবি হতে পারেন না। তাঁর মতে
লুইপা ৭৩০ থেকে ৮১০ খ্রীঃ মধ্যে জীবিত ছিলেন।
লুইপার রচিত 'অভিসময়' গ্রন্থের টীকা রচনা
করেছিলেন
অতীশ
দীপঙ্কর (৯৮০-১০৫৪ খ্রিষ্টাব্দ)।
এই বিচারে বলা যায়, লুইপা
অতীশ
দীপঙ্করের আগে জন্মেছিলেন।
সুনীতিকুমার
চট্টোপাধ্যায়-এর মতে লুইপা ছিলেন ৯৫০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দের মানুষ।
অতীশ
দীপঙ্করের টীকার সূত্রে জন্মকাল ৯৫০ খ্রিষ্টাব্দ বিবেচনা করলেও, ১২০০
খ্রিষ্টাব্দ বিবেচনায় আসে না।
সুকুমার সেন মনে করেছেন লুইপা ছিলেন দশম শতাব্দীর
ব্যক্তি।
লুইপার জন্মস্থান নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক আছে। যেমন-
- তঞ্জুরের পুঁথিতে একে ভাঙ্গালী
বলা হয়েছে। এই কারণে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী একে 'তেঙ্গুরে বাঙালি' নামে
অভিহিত করেছেন। শাস্ত্রীর মতে তিনি বঙ্গের রাঢ়-অঞ্চলের অধিবাসী ছিলেন।
- তিব্বতী লামা তারকনাথের মতে
তিনি বাংলাদেশের গঙ্গার তীরে বসবাস
করতেন।
- রাহুল সাংকৃত্যায়ন ভাঙ্গালী-কে ভাগলপুর মনে করেছেন এই বিচারে ইনি মগধবাসী
ছিলেন। তিনি উড়িষ্যার রাজা দারিকপা-র গুরু ছিলেন।
রচনাবলী
১. বজ্রসত্ত্বসাধন । সংস্কৃত গ্রন্থ।
২. বুদ্ধদয়। সংস্কৃত
গ্রন্থ।
২. শ্রীভগবদভিসময়। সংস্কৃত গ্রন্থ।
৩. তত্ত্বস্বভাবদোহাকোষগীতিকাদৃষ্টি । বাঙলা গ্রন্থ।
৪. লুহি পাদগীতিকা। বাঙলা
গ্রন্থ। দ্র : হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনা সংগ্রহ দ্বিতীয় খণ্ড। পৃষ্ঠা ৩৮২।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ, দ্বিতীয় মুদ্রণ।
৫. অভিসময়বিভঙ্গ। সংস্কৃত গ্রন্থ। প্রথম দিকে ধারণা ছিল- এই গ্রন্থটি তিনি অতীশ দীপঙ্করের সাথে রচনা
করেছিলেন। কিন্তু এটি ডঃ সুকুমার সেনের মতে, লুইপাদানামের অসমাপ্ত এই গ্রন্থটি
সমাপ্ত করেছিলেন-অতীশ দীপঙ্কর।
তথ্যসূত্র :
- চর্যাগীতিকা/মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা সম্পাদিত।
ষ্টুডেন্ট ওয়েজ। অগ্রহায়ণ ১৪০২।
- চর্যাগীতি কোষ/নীলরতন সেন। সাহিত্যলোক। জানুয়ারি ১৯৭৮।
- চর্যাগীতি পরিক্রমা/ড. নির্মল সেন। দে'জ পাবলিশিং, জানুয়ারি
২০০৫।
- চর্যাগীতি প্রসঙ্গ/সৈয়দ আলী আহসান। মৌলি প্রকাশনা, জুন ২০০৩।
- বাংলা সাহিত্যের কথা ( প্রথম খণ্ড- প্রাচীন
যুগ)/ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। মাওলা ব্রাদ্রার্স, মার্চ
২০০০।
- হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা/হরপ্রসাদ
শাস্ত্রী। (বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, ১৩২৩)
- হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনা-সংগ্রহ (দ্বিতীয় খণ্ড)। পশ্চিমবঙ্গ
রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ, নভেম্বর ২০০০
The Origin and
Development of the Bengali language Vol I/Suniti
kumar Chatterji. George Allen & Unwin LTD, 1970.