বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: ছয় লতিফার ঊর্ধ্বে আমার আরফাত ময়দান
ছয় লতিফার ঊর্ধ্বে আমার আরফাত ময়দান।
তারি মাঝে আছে কারা জানে বুজর্গান॥
যবে হজরতেরি নাম জপি ভাই হাজার হজের আনন্দ পাই,
জীবন মরণ দুই উঠে ভাই দেই সেথা কোরবান্॥
আমি তুর পাহাড়ে সুর শুনে ভাই প্রেমানন্দে গলি,
ফানাফির রসুলে আমি হেরার পথে চলি।
হজরতেরি কদম চুমি হিজরে আসোয়াদ
ইব্রাহিমের কোলে চ'ড়ে দেখি ঈদের চাঁদ,
মোরে খোতবা শুনান ইমাম হয়ে জিব্রাইল কোরআন॥
- ভাবার্থ: এই গানটি ঈদজ্জোহা গীতি-আলেখ্যে ব্যবহৃত হলেও এই গানে
পাওয়া সুফিবাদী দর্শনের ধ্যানলোকের কথা। ধ্যানের মধ্য দিয়ে ধর্মের আনুষ্ঠানিক
রূপকে হৃদয়ে অনুভব করেছেন কবি। তাই এই গানে ঈদজ্জোহা বা হজ্ব ব্রতের মহিমা
উদ্ভাসিত হয়েছে সুফিসাধনার আলোকে।
উল্লেখ্য, সৌদি আরবের মক্কা নগরী থেকে থেকে ২০ কিমি দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত একটি সমতল অঞ্চলের
স্থানীয় নাম আরাফাত। হিজরি জিলহজ মাসের ৯ তারিখে হজযাত্রীরা মিনা থেকে এখানে উপস্থিত হন। আরাফাতে অবস্থান হজের অন্যতম ফরজ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ইসলাম ধর্মালম্বীদের কাছে এই ময়দনাটি অত্যন্ত পবিত্র। এই গানে এই ময়দানের
মহিমাকে কবি তাঁর ভক্তিকে প্রকাশ করেছেন।
সুফি দর্শনে মানুষের অন্তরে অবস্থিত কতিপয় নির্দিষ্ট আধ্যত্মিক স্থান হলো- লতিফা।
ধ্যানরত অবস্থায় আল্লাহর জ্যোতি এই সব স্থানে অবতীর্ণ হয়। অবস্থানের বিচারে
মানবদেহে ১০টি
লতিফা
রয়েছে। এর ভিতরে ছয়টি
লতিফা (কাল্ব, রুহু, শিররুন, খাফি, আখ্ফা, নাফস) হলো সাধনার। সাধকরা
ছাড়া সাধারণ মানুষ এই লতিফার সাধনা করতে পারেন না। কবি মনে করেন এই ছয়টি
লতিফার চেয়ে মহান হলো
আরাফাত ময়দান। এই ময়দানে কে কে অবস্থান করেন, তা একমাত্র জ্ঞানীরাই বলতে
পারেন। ধ্যানের মধ্য দিয়ে তিনি আরাফাতকে অনুভব করেছন কবি।
ধ্যানালোকে
কবি যখন হজরত
মুহম্মদ
(সাঃ)-এর নামজপ করেন, তখন তিনি হজব্রত পালনের আনন্দ লাভ করেন। জীবন এবং
মরণের সকল আকাঙ্ক্ষার অবসান ঘটে এই নামজপের মধ্য দিয়ে।
কবি অধ্যাত্মধ্যানের মধ্য দিয়ে- তুর পাহাড়ের
হজরত মুসা
আঃ-এর নাজিলকৃত তাওরাতের সুরধ্বনি শুনে আল্লার প্রেমে বিগলিত হয়ে যান।
ধ্যানমগ্নতার মধ্যেই রাসুলে বিলীন হয়ে যান। তিনি জাবাল-আলনুর পর্বতের
হেরা নামক গুহায় ধ্যানমগ্ন হওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তিনি হিজরে আসওয়াত
(হজরে
আসওয়াদ) পাথরে চুম্বনের প্রীতিলাভ করেন রাসুলের পদচুম্বন করে। তিনি ইব্রাহিম
(আঃ) কোলে চড়ে ঈদের চাঁদ দর্শন করেন। যেন তাঁকে এক ও অদ্বিতীয় সার্বভৌম আল্লাহর
স্বরূপ কোরানের বাণীতে শোনান ফেরেস্তা জিব্রাইল (আঃ)।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে
সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪১
খ্রিষ্টাব্দের
৯ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার ২৫ পৌষ ১৩৪৭), কলকাতা বেতারকেন্দ্র
থেকে 'ঈদজ্জোহা' গীতিআলেখ্য প্রচারিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪১
বৎসর ৭ মাস।
- পাণ্ডুলিপি:
মূল পাণ্ডুলিপি
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি
২০১২)। ১৩৯১ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৪২০-৪২১
- রেকর্ড: টুইন [নভেম্বর ১৯৪১ (কার্তিক-অগ্রহায়ণ ১৩৪৮)। এফটি ১৩৭০৬। শিল্পী:
মিঃ আশরাফ আলি]
- বেতার: ঈদজ্জোহা। গীতিআলেখ্য।
কলকাতা বেতারকেন্দ্র। [৯ জানুয়ারি ১৯৪১ (বৃহস্পতিবার ২৫ পৌষ ১৩৪৭)।
রাত ৮.০৫ -৮.৩৯ মিনিট।
[সূত্র: বেতার জগৎ। ১২বর্ষ ১ম সংখ্যা। ১ জানুয়ারি, ১৯৪১। পৃষ্ঠা: ৪২]
- পর্যায়:
- বিষবাঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। ইসালমী গান। সুফিবাদ। ধ্যানদর্শন