হেথা যে গান গাইতে আসা, আমার হয় নি সে গান গাওয়া—
আজও কেবলই সুর সাধা, আমার কেবল গাইতে চাওয়া॥
আমার লাগে নাই সে সুর, আমার বাঁধে নাই সে কথা,
শুধু প্রাণেরই মাঝখানে আছে গানের ব্যাকুলতা।
আজও ফোটে নাই সে ফুল, শুধু বহেছে এক হাওয়া॥
আমি দেখি নাই তার মুখ, আমি শুনি নাই তার বাণী,
কেবল শুনি ক্ষণে ক্ষণে তাহার পায়ের ধ্বনিখানি—
আমার দ্বারের সমুখ দিয়ে সে জন করে আসা-যাওয়া।
শুধু আসন পাতা হল আমার সারাটি দিন ধ'রে—
ঘরে হয় নি প্রদীপ জ্বালা, তারে ডাকব কেমন করে।
আছি পাবার আশা নিয়ে, তারে হয় নি আমার পাওয়া॥
পাণ্ডুলিপির পাঠ: RBVBMS 478। [পাণ্ডুলিপি]
পাঠভেদ:
ভাবসন্ধান: অন্তরগভীরে সুরের
ব্যাকুলতা থাকলেও প্রার্থিত সুরটি সহজে ধরা দেয় না। কবি আক্ষেপ করেন—“কেবলই সুর
সাধা, আমার কেবল গাইতে চাওয়া”। যোগ্য সুর আর বাণীর যুগল রূপটি প্রকাশ হতে চায়
না কিছুতে। সুরের ফুল ফুটবার অনুকূল হাওয়া বইলেও ফুলটি ফুটে ওঠেনি এখনও।
সঙ্গীতের জন্যে (নাকি গানের দেবতার জন্যে?) অপেক্ষা করতে করতে অনুভব হয় যেন
দুয়ারের বাইরে ‘তাঁর’ আনাগোনা চলছে থেকে থেকে, আর, পায়ের ধ্বনিও শোনা যায়, তবু
‘তাঁর’ বাণী কানে বাজে না—দর্শনও মেলে না ‘তাঁর’। আসলে সারাদিনের সাধনে ‘তাঁর’
আসনটি পাতা হয়েছে মাত্র, এখনও প্রদীপ জ্বালানো বাকি রয়েছে। আঁধার ঘরে ‘তাঁকে’
ডাকা চলে না। পাবার আশায় বসে থাকলেও, পাওয়া হয়নি তাই। হয় তো সাধনা অপ্রতুল,
কিংবা অন্তরের আশা যত উঁচু, সাধন সেখানে পৌঁছুতে পারছে না। তাই দুঃখ, “আমার হয়
নি সে গান গাওয়া ... তারে হয় নি আমার পাওয়া”।
তথ্যানুসন্ধান
ক. রচনাকাল ও স্থান:
রবীন্দ্রনাথের পাণ্ডুলিপি
Ms.478-তে
গানটির রচনাকাল ও স্থানের উল্লেখ আছে,—
'২৭শে
ভাদ্র।
কলিকাতা'।
উল্লেখ্য, ১৩১৬ বঙ্গাব্দের
১৯শে ভাদ্র, রবীন্দ্রনাথ
শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতা আসেন। কলকাতায় থাকাকালীন সময়ে তিনি এই গানটি-সহ দুটি
গান রচনা করেন। এই সময় রবীন্দ্রনাথের
বয়স ছিল ৪৮ বৎসর ৫ মাস।
[রবীন্দ্রনাথের ৪৮ বৎসর অতিক্রান্ত বয়সের রচিত গানের তালিকা]
খ. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
গ্রন্থ:
গান
ব্রহ্মসঙ্গীত, বেহাগ-ঠুংরি
(ইন্ডিয়ান পাবলিশিং
হাউস
১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দ, ১৩১৬
বঙ্গাব্দ)।
পৃষ্ঠা: ৩৬২।
[নমুনা]
প্রথম
খণ্ড, প্রথম সংস্করণ
(বিশ্বভারতী, আশ্বিন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ)। পৃষ্ঠা:
৩৬১-৩৬২
[নমুনা:
৩৬১,
৩৬২]
গীতলিপি দ্বিতীয় ভাগ (৬ আষাঢ়, ১৩১৭
বঙ্গাব্দ,
২০
জুন ১৯১০
খ্রিষ্টাব্দ)।
সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কৃত স্বরলিপিসহ মুদ্রিত হয়েছিল।
ধর্ম্মসঙ্গীত
(ইন্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস।
১৯১৪
খ্রিষ্টাব্দ ১৩২১
বঙ্গাব্দ)।
পৃষ্ঠা: ৫৩-৫৪
[নমুনা:
প্রথমাংশ]
[দ্বিতীয়াংশ]
সংগীত-গীতাঞ্জলি (১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দ)।
ভীমরাও শাস্ত্রীকৃত স্বরলিপিসহ মুদ্রিত হয়েছিল।
স্বরবিতান অষ্টাত্রিংশ
(৩৮) খণ্ডের
(বৈশাখ
১৪১৫)
২৮ সংখ্যক গান।
পৃষ্ঠা: ৮০-৮২।
রবীন্দ্রনাথ-কৃত অনুবাদ
ইংরেজি গীতাঞ্জলির পাঠ: The
song that I came to sing remains unsung to this day.
সূত্র:
I have spent my days in stringing and in unstringing my instrument.
The time has not come true, the words have not been rightly set; only
there is the agony of wishing in my heart.
The blossom has not opened; only the wind is sighing by.
I have not seen his face, nor have I listened to his voice; only I have
heard his gentle footsteps from the road before my house.
The livelong day has passed in spreading his seat on the floor; but the
lamp has not been lit and I cannot ask him into my house.
I live in the hope of meeting with him; but this meeting is not yet.
পত্রিকা:
মানসী
(দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সংখ্যা,
ফাল্গুন
১৩১৬ বঙ্গাব্দ)।
শিরোনাম-‘গান’।
বেহাগ-কাওয়ালী।
পৃষ্ঠা ২২।
[নমুনা]
[মানসী
পত্রিকায় প্রকাশিত রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
রেকর্ডসূত্র:
প্রকাশের
কালানুক্রম:
১৩১৬ বঙ্গাব্দে এই গানটি 'গান' নামক গ্রন্থের
'ব্রহ্মসঙ্গীত' বিভাগে গৃহীত হয়েছিল।
এই
বছরেই 'মানসী'
পত্রিকার ফাল্গুন সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। ১৩১৭
বঙ্গাব্দে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কৃত স্বরলিপিসহ 'গীতলিপি' দ্বিতীয় ভাগ
প্রকাশিত হয়। এই গন্থে গানটি গৃহীত হয়েছিল। এই বছরেই গীতাঞ্জলিতে গানটি
গৃহীত হয়েছিল ৪০ সংখ্যক গান হিসেবে।
১৩২১ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত 'ধর্ম্মসঙ্গীত' গ্রন্থে
গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৩২৩ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয়
কাব্যগ্রন্থের অষ্টম খণ্ড। এই গ্রন্থের গীতাঞ্জলি অংশে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
১৩৩৮ বঙ্গাব্দে গীতবিতানের প্রথম খণ্ডের প্রথম সংস্করণে গানটি অন্তর্ভুক্ত
হয়। এরপর ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে গানটি গীতবিতানের প্রথম খণ্ডের দ্বিতীয়
সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৩৮০ বঙ্গাব্দে গীতবিতানের অখণ্ড সংস্করণে গানটি
অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।
গ. সঙ্গীতবিষয়ক তথ্যাবলি:
স্বরলিপি: [স্বরলিপি]
স্বরলিপিকার:
সুরেন্দ্রনাথ
বন্দ্যোপাধ্যায়ের। [গীতলিপি
দ্বিতীয় ভাগ (৬ আষাঢ়, ১৩১৭
বঙ্গাব্দ,
২০
জুন ১৯১০
খ্রিষ্টাব্দ)
থেকে
স্বরবিতান অষ্টাত্রিংশ
(৩৮) খণ্ডের
(বৈশাখ
১৪১৫)
এই স্বরলিপিটি গৃহীত হয়েছে।]
[সুরেন্দ্রনাথ
বন্দ্যোপাধ্যায়-কৃত রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্বরলিপির তালিকা]
ভীমরাও
শাস্ত্রী।
[সঙ্গীত গীতাঞ্জলি (১৯২৭
খ্রিষ্টাব্দ)]
[ভীমরাও
শাস্ত্রী-কৃত রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্বরলিপির তালিকা]
রাগ ও তাল:
রাগ-মিশ্র
বেহাগ।
তাল-কাহারবা।
[স্বরবিতান অষ্টাত্রিংশ
খণ্ড
(বৈশাখ
১৪১৫)]
[বেহাগ রাগে নিবদ্ধ
রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
[কাহারবা তালে
নিবদ্ধ রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
রাগ-বেহাগ। তাল-কাওয়ালি। [মানসী (২য় বর্ষ ১ম সংখ্যা, ফাল্গুন ১৩১৬ বঙ্গাব্দ]
রাগ-বেহাগ। তাল-ঠুংরি। [গান (১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দ ১৩১৬ বঙ্গাব্দ]।
রাগ: বেহাগ। তাল: কাহারবা। [রবীন্দ্রসংগীত: রাগ-সুর নির্দেশিকা, সুধীর চন্দ, প্যাপিরাস, ডিসেম্বর ২০০৬], পৃষ্ঠা: ৮৫
রাগ: বেহাগ। তাল: কাহারবা। [রাগরাগিণীর এলাকায় রবীন্দ্রসংগীত, প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত আকাদেমি, জুলাই ২০০১], পৃষ্ঠা: ১৪৮।
বিষয়াঙ্গ:
ব্রহ্মসঙ্গীত।
[রবীন্দ্রনাথের
রচিত ব্রহ্মসঙ্গীতের তালিকা]
সুরাঙ্গ: স্বকীয়
গ্রহস্বর: পা।
লয়: মধ্য।