সুর ভুলে যেই ঘুরে বেড়াই কেবল কাজে
বুকে বাজে তোমার চোখের ভর্ৎসনা যে॥
উধাও আকাশ উদার ধরা সুনীল-শ্যামল-সুধায়-ভরা
মিলায় দূরে, পরশ তাদের মেলে না যে—
বুকে বাজে তোমার চোখের ভর্ৎসনা যে॥
বিশ্ব যে সেই সুরের পথের হাওয়ায় হাওয়ায়
চিত্ত আমার ব্যাকুল করে আসা-যাওয়ায়।
তোমায় বসাই এ-হেন ঠাঁই ভুবনে মোর আর-কোথা নাই,
মিলন হবার আসন হারাই আপন-মাঝে—
বুকে বাজে তোমার চোখের ভর্ৎসনা যে॥
RBVBMS 112
[নমুনা]
ভুবনে মোর আর কোথা নাই :
কথার অংশ,
গীতিবীথিকা
(বৈশাখ ১৩২৬)
গীতবিতান
(আশ্বিন ১৩৩৮)
গান ছাড়া মোর আর কিছু নাই :
স্বরলিপি,
গীতিবীথিকা
(বৈশাখ ১৩২৬)
ভাবসন্ধান: সাংসারিক কাজের
ঝোঁকে সুরের জগত্ থেকে সরে গেলেই সুরের গুরুর তিরস্কার-ভরা দৃষ্টি বুকে এসে
বেঁধে। কাজের ঘোরে থাকলে সুনীল আকাশ আর সুধাময় শ্যামল ধরা প্রাণকে ছুঁতে পারে
না যখন, তখনই তাঁর দৃষ্টির আঘাতে অন্তর সচকিত হয়। কর্মব্যস্ত ভক্ত যে-সুরকে
ভুলে চলতে থাকেন, বিশ্ব সেই সুরময় পথে চলাচলের কালে কবি-হূদয়কে ব্যাকুল করে
বাস্তবিক। কিন্তু ‘তাঁকে’ হূদয়াসনে অধিষ্ঠিত করবার আসনটি সবসময়ে খুঁজে পাওয়া
যায় না। আর, তখনি ‘তাঁর’ দৃষ্টির ভর্ত্সনা এসে লাগে বুকে। উপযুক্ত প্রস্তুতি
চাই যে! থেকে থেকে তার অভাব ঘটে।
তথ্যানুসন্ধান
ক. রচনাকাল ও স্থান:
পলাতকা-র
পাণ্ডুলিপি'র
সাথে [Ms
112]
১৮টি
গান
পাওয়া যায়।
উক্ত পাণ্ডুলিপির ৯৮
পৃষ্ঠায় এই গানটি রয়েছে। এর সাথে স্থান ও রচনাকালের উল্লেখ নেই।
প্রশান্তকুমার পাল
তাঁর রবিজীবনী সপ্তম খণ্ডে (আনন্দ
পাবলিশার্স, জুন ২০০৭,
পৃষ্ঠা ৩৭১)−
এই গানটিসহ ১৫টি গানের রচনাকাল ১৩২৫ বঙ্গাব্দের ২৪ অগ্রহায়ণের পূর্বে
(১৭ অগ্রহায়ণের পরে) রচিত বলে- অনুমান করেছেন।
প্রশান্তকুমার পাল
এই
অনুমান করেছেন রানু (রানু অধিকারী)-কে লেখা একটি চিঠির সূত্রে। উল্লেখ্য,
২৪ই অগ্রহায়ণে
রবীন্দ্রনাথ
শান্তিনিকেতন থেকে রাণুকে
লিখেছেলেন—
'২৪
অগ্রহায়ণ-এ রাণু-কে লিখিত চিঠি থেকে জানা যায়- '...এ দিকে রোজ আমার একটা
করে নতুন গান বেড়েই চলেছে। ...প্রায় পনেরোটা গান শেষ হয়ে গেল।
[চিঠিপত্র ১৮,
বিশ্বভারতী, মাঘ ১৪২০, পৃষ্ঠা ১১৩]।
এই সময়
রবীন্দ্রনাথের বয়স ছিল ৫৭ বৎসর
৭ মাস।
[দেখুন:
৫৭ বৎসর
অতিক্রান্ত বয়সে রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
খ. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
গ্রন্থ:
দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথম সংস্করণ (বিশ্বভারতী, আশ্বিন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ)। পৃষ্ঠা: ৫৭৭ [নমুনা]
গীতিবীথিকা (বৈশাখ ১৩২৬ বঙ্গাব্দ)। দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরকৃত স্বরলিপিসহ মুদ্রিত হয়েছিল।
প্রবাহিনী (বিশ্বভারতী ১৩৩২ বঙ্গাব্দ)। গীতগান: ২৭। পৃষ্ঠা: ২১। [নমুনা]
স্বরবিতান চতুস্ত্রিংশ (৩৪, গীতিবীথিকা) খণ্ডের (আষাঢ় ১৪১৩) ১২ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৪১-৪৩।
রেকর্ডসূত্র:
প্রকাশের কালানুক্রম: ১৩২৬ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে প্রকাশিত 'গীতিবীথিকা' গ্রন্থে
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরকৃত স্বরলিপিসহ মুদ্রিত হয়েছিল।
১৩৩২ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ
মাসে প্রকাশিত 'প্রবাহিনী' গ্রন্থে গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
১৩৩৮ বঙ্গাব্দে গীতবিতানের
দ্বিতীয় খণ্ডের প্রথম সংস্করণে গানটি অন্তর্ভুক্ত
হয়। এরপর ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে গানটি গীতবিতানের প্রথম খণ্ডের দ্বিতীয়
সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৩৮০ বঙ্গাব্দে গীতবিতানের অখণ্ড সংস্করণে গানটি
অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।
গ. সঙ্গীতবিষয়ক তথ্যাবলি:
স্বরলিপি: [স্বরলিপি]
স্বরলিপিকার:
সুর ও তাল:
স্বরবিতান চতুস্ত্রিংশ (৩৪, গীতিবীথিকা) খণ্ডে (আষাঢ় ১৪১৩) গৃহীত স্বরলিপিতে রাগ-তালের উল্লেখ নেই। উক্ত স্বরলিপিটি ৩।৩ মাত্রা ছন্দে 'দাদরা' তালে নিবদ্ধ।
রাগ: ভৈরবী [রবীন্দ্রসংগীত : রাগ-সুর নির্দেশিকা। সুধীর চন্দ। (প্যাপিরাস, জানুয়ারি ১৯৯৩)]
রাগ :
ভৈরবী ।
তাল :
'দাদরা' [রবীন্দ্রসংগীত:
রাগ-সুর নির্দেশিকা, সুধীর চন্দ, প্যাপিরাস, ডিসেম্বর ২০০৬],
পৃষ্ঠা: ৮২।
[দাদরা
তালে নিবদ্ধ রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
[রাগ ভৈরবীতে
নিবদ্ধ রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
বিষয়াঙ্গ:
সুরাঙ্গ:
গ্রহস্বর: মা।
লয়: মধ্য।