১৬৭৮ ভিতর হ'তে দ্বার বন্ধ ক'রে, |
ভাবার্থ ও
প্রেক্ষাপট:
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে–
ভৈরব হলেন শিব বা
মহাদেবের
অপর নাম। শিবের স্ত্রী সতীর (মহামায়া,
দুর্গা) অবর্তমানে আশা এই গানের মাধ্যমে শিবকে আশা এবং
সান্ত্বনার বাণী শোনাচ্ছেন।
কালিকা পুরাণ
মতে–
দক্ষ
মহামায়াকে
[দুর্গা]
কন্যারূপে পাওয়ার
জন্য কঠোর তপস্যা করেন।
দক্ষের
তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মহামায়া
দক্ষকে
বলেন,
তিনি অবিলম্বে তাঁর (দক্ষের)
পত্নীর গর্ভে তাঁর কন্যারূপ জন্মগ্রহণ করবেন এবং
এই কন্যা
মহাদেব-এর
স্ত্রী হবেন। তবে
তাঁকে
(দুর্গাকে)
যথাযথ সমাদর না
করলে তিনি দেহত্যাগ
করবেন।
এরপর
দক্ষ
অসিক্লী -কে
বিবাহ করেন। মহমায়ার
জন্মের পর
দক্ষ
এঁর
নাম রাখেন সতী।
[১-৪৪। অষ্টমোহধ্যায়, কালিকাপুরাণ]
সতী যৌবনে পদার্পণ করলে,
মহাদেব-এর
সাথে তাঁর বিবাহ হয়।
কিন্তু
মহাদেব
দক্ষকে
যথোচিত সম্মান প্রদর্শন না করায় ইনি ক্রমে ক্রমে
মহাদেব-এর
প্রতি বিরূপ হয়ে উঠেন।
বিবাহের এক বৎসর পর,
দক্ষ
এক মহাযজ্ঞের আয়োজন
করেন।
এই যজ্ঞে
দক্ষ
মহাদেব
ও সতীকে নিমন্ত্রণ করলেন না।
সতী নারদের মুখে এই
যজ্ঞের কথা জানতে পেরে অযাচিতভাবে যজ্ঞে যাবার উদ্যোগ নেন।
কিন্তু তিনি শিব (মহাদেব)-এর
কাছে সতী অনুমতি লাভের আশায় গেলে, শিব যথাযথ কারণ দেখিয়ে, সতীকে যজ্ঞে যেতে নিষেধ
করেন। সতী তা অগ্রাহ্য করে
দক্ষের
যজ্ঞে যান। সেখানে দক্ষের মুখে
শিবের নিন্দা শুনে সতী দেহত্যাগ করেন।
সতীর অবর্তমানে শিব আকুল হলে, আশা দেবী তাঁকে আশার বাণী শোনায়। কবি
উদাসী ভৈরব
নাটিকায় আশাদেবী একটি
পৌরাণিক দেবী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এই দেবী সর্বদা আশার বাণী শোনান বলেই, তিনি
আশা দেবী। নাটিকায় শিবের উক্তি থেকে এমন ধারণাই স্পষ্ট হয়ে উঠে। শিব দেবীকে বলেন—
তুমি চির মধুরভাষিণী, আশা। নিরাশার অন্ধকারে যখন সবে হাবুডুবু খায়, অকুল পাথারে যখন কূল কিনারার ক্ষীণ আভাসটুকু পযন্ত দৃষ্টি পথে আসে না, জীব যখন একান্ত মনে মৃত্যুর হাতে আপনাকে সঁপে বাঁচতে চায়, তোমার হাসির ক্ষীণ রেখাই তাকে তখন ফিরিয়ে আনে জীবনের উপকূলে। তার আবার বাঁচতে সাধ যায়। তুমি আশা, এই নিরাশার অন্ধকারে, আনো— আনো— নতুন দিনের আলো। তপস্যাক্লিষ্টা নিশীথিনীর ললাটে পরাও নবারুণের চন্দন টিপ।
সতীর বিরহে আকুল শিবকে আশা দেবী সান্ত্বনা দেন এই গানে। তিনি শিবকে শোনান অনন্ত আনন্দের কথা, যেখানে মৃত্যু নাই, নাই দুঃখ। আছে আনন্দময় জীবনের আস্বাদ। দেবী নিরাশার অন্ধ-গহ্বর থেকে বাইরে এসের আনন্দময় আলোকিত জীবনের পথে চলার আহ্বান করছেন। নিজেকে অবরুদ্ধ করে থাকাটা যে বেঁচে মরে থাকার সামিল। এই অবরুদ্ধ দশায় যারা অচেতন থাকে, তার দুঃস্বপন্ দেখে। এ অবরুদ্ধ জীবন কাল-রাত্রির মতো। সেখান থেকে বেরিয়ে এলে, সে কালরাত্রির অবসান হয়। শুরু হয় সুপ্রভাত। এ গানের মধ্য দিয়ে মূলত আশা দেবী সতীহীন শিবের মনে আশার সঞ্চার করার চেষ্টা করেছেন।
কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সৃষ্ট আশা-ভৈরবী রাগে এই গানের সুর করছেন।
১. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
২. রেকর্ড সূত্র:
৩.
রচনাকাল:
১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে, কাজী
নজরুল ইসলাম
উদাসী ভৈরব নামক
নাটিকাটি বেতারে অভিনয় আকারে পরিবেশনের
পরিকল্পনা নেন । এই বিচারে বলা যায়, গানটি রচিত হয়েছিল কাজী নজরুল
ইসলাম ৪০ বৎসর বয়সের দিকে।
৪. প্রাসঙ্গিক পাঠ: গানটি কাজী নজরুল ইসলাম, জগৎ ঘটক
রচিত উদাসী ভৈরব নামক
নাটকের জন্য লিখেছিলেন। মূলত এই নাটিকাটির গান এবং অধিকাংশ সংলাপ
নজরুল ইসলাম রচনা করেছিলেন।
নাটিকাটি ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই নভেম্বর তারিখে বেতারে প্রচারিত হয়।
এটি ছিল উক্ত নাটকের দ্বিতীয় গান। গানটি পরিবেশন করেছিলেন গীতা মিত্র-এর কণ্ঠে গীত হয়েছিল।
এই গানটি নজরুল-সৃষ্ট 'আশা-ভৈরবী' রাগে নিব্দ্ধ। এই বিষয়ে জগৎ ঘটক তাঁর স্বরলিপি গ্রন্থ 'নবরাগ' -এ লিখেছেন—
'বহুকাল পূর্বের কথা। উদাসী ভৈরব নামে একখানি নাটিকা বেতারে অভিনীত হবার জন্যে কবি আমাকে দিয়ে লিখিয়েছিলেন— এবং এর ছয়খানি গান তিনি রচনা ও তাতে সুরারোপ করেন। সুরগুলি রাগ-ধর্মী ও তাঁর সৃষ্ট নবরাগ। বাসন্তী বিদ্যাবীথির প্রয়োজনীয় নাটিকাটি বেতারে সাফল্যের সঙ্গে অভিনীত হয়েছিল। ... গানগুলি অরুণ-ভৈরব, আশা-ভৈরব, শিবানী-ভৈরবী, রুদ্র-ভৈরব, যোগিনী ও উদাসী ভৈরব।'
৫.সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম।
৬.স্বরলিপিকার:
জগৎ ঘটক। নবরাগ [নজরুল ইন্সটিটিউট, সেপ্টেম্বর
২০০৫]
৭.সঙ্গীত
বিষয়ক তথ্যাবলী:
তাল:
ত্রিতাল।
রাগ :
আশা-ভৈরবী।
গ্রহস্বর :
সঋ।