গ্রিনল্যান্ডের পতাকা

গ্রিনল্যান্ড
Greenland

উত্তর আটলান্টিক ও আর্কটিক মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত একটি সুবৃহৎ দ্বীপ। গ্রিনল্যান্ড পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপ।
ভাইকিং-রা এর নামকরণ করেছিল সবুজদ্বীপ (Greenland )।

গ্রিনল্যান্ড ডেনামর্কের অন্তর্গত স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল। এর রাজধানীর নাম নুউক। রাষ্ট্রীয় ভাষাসমূহ গ্রিনল্যান্ডীয় এবং ডেনীয়। সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে এ দ্বীপে। স্বরাষ্ট্র শাসন চালু হয় ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের পরিসংখ্যানানুসারে জনসংখ্যা ৫৬,৪৮৩ জন। এই অঞ্চলে মাথা পিছু আয় ২০,০০০ মার্কিন ডলার।


এর পশ্চিম দিকে ডেভিস প্রণালী ও ব্যাফিন উপসাগর দ্বারা কানাডীয় আর্কটিক দ্বীপপুঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। পূর্ব দিকে ডেনমার্ক প্রণালী দ্বারা আইসল্যান্ড থেকে পৃথক হয়েছে। এর সর্ব উত্তরের বিন্দু মরিস জেসাপ অন্তরীপ থেকে সর্ব দক্ষিণের বিন্দু ফেয়ারওয়েল অন্তরীপের দূরত্ব ২,৬৬০ কিমি (১,৬৫০ মাইল)। অপরদিকে পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত সর্বাধিক দূরত্ব হচ্ছে ১,৩০০ কিমি (৮০০ মাইল)। এর সমগ্র উপকূলভূমি জুড়ে রয়েছে ফিওড্‌। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৪,০০০ কিমি (২৭,০০০ মাইল)। সব মিলিয়ে এর মোট আয়তন আয়তন ২১৬৬০৮৬ বর্গ-কিলোমিটার।

ভৌগোলিক অবস্থান:
৭২
° উত্তর ৪০° পশ্চিম। 
এর অধিকাংশই উত্তর মেরু বৃত্তের উত্তর অংশে অবস্থিত। ফলে এর ৮০ ভাগ অঞ্চল সারা বছর বরফে ঢাকা থাকে। তবে বরফ ও শামুকের খোলসের প্রাপ্ত অংশ নিয়ে করা গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৮০০-১৩০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে গ্রিনল্যান্ডের দক্ষিণ অংশ বর্তমানের তুলনায় অনেক উষ্ণ ছিলো।

ধারণা করা হয়, খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ অব্দের দিকে প্যালেই-এস্কিমো
(Paleo-Eskimo) জাতির লোকের গ্রিনল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে বসতি গড়ে তুলেছিল। এরপর এই অঞ্চলে সাক্কাক সংস্কৃতির (Saqqaq culture) বিকাশ ঘটে। এরা এই অঞ্চলে খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ অব্দ পর্যন্ত এরা নিজেদের অস্তিত্ব এবং সংস্কৃতি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল। এরপর এখানে এই সংস্কৃতির পতন ঘটে এবং খ্রিষ্টপূর্ব  ৫০০ অব্দের ভিতরে বিকাশ ঘটে- ডোরসেট সংস্কৃতি (Dorset culture)। এরা খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতাব্দী পর্যন্ত নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল। এরপর এই অঞ্চল ধীরে ধীরে ভাইকিংদের অধিকারে চলে যায়। খ্রিষ্টীয় অষ্টম থেকে একাদশ শতাব্দীর ভিতরে স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলের যে কোনো জলদস্যুদের দলকে ভাইকিং বলা হতো। এরা গ্রিনল্যান্ডে বসতি গড়ে তুলেছিল। উল্লেখ্য, ভাইকিংরা বসতি স্থাপনের আগে গ্রিনল্যান্ডের আদিবাসিরা দেশটির নাম দিয়েছিল 'কালালিত নুনাত', অর্থাৎ মনুষ্যভূমি।

ভাইকিংদের পরে প্রথম ইউরোপিয়ান হিসেবে এরিক থরভালদসন প্রথম পা রাখেন গ্রিনল্যান্ডে। স্থানীয় অধিবাসীদের মতে- এরিক আগে থাকতেন নরওয়েতে। এই সময় কোনো এক বিবাদে জড়িয়ে তিনি তিনজনকে হত্যা করেন। তৎকালীন আইনানুসারে, হত্যার শাস্তি ছিলো মৃত্যদণ্ড কিংবা নির্বাসন। এরিক বেছে নিয়েছিলেন নির্বাসন।

এরিক তার দলবল নিয়ে  ৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের দিক কোনো এক গ্রীষ্মকালে  গ্রিনল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে অবতরণ করেছিলেন। সে সময়ে এই উষ্ণ অংশটি অপেক্ষাকৃত উষ্ণ ছিল। তিনি সেই উষ্ণ তাপমাত্রায় ফসল ফলানোর চেষ্টা করেন এবং সফল হন। উল্লেখ্য, বর্তমানে গ্রিনল্যান্ডের দক্ষিণ অংশে জুন মাসের তাপমাত্রা থাকে প্রায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরিক যখন গ্রিনল্যান্ডে পা রাখেন তখন সেখানে হয়তো প্রচুর সবুজ সবুজ ছিলো। সম্ভবত তাই তিবি ভাইকিংদের দেওয়া সবুজদ্বীপ নামটিই গ্রহণ করেন। অনেকে মনে করেন- বসতি স্থাপনের জন্য এরিক তখন অন্যান্যদের আকৃষ্ট করার জন্য দ্বীপটির নাম দিয়েছিলো গ্রিনল্যান্ড।

কিন্তু খ্রিষ্টীয় চৌদ্দ শতকের দিকে দ্বীপটির তাপমাত্রা দ্রুত কমে যেতে থাকলে, বাইরে থেকে আসা মানুষের গড়ে তোলা বসতি কমে গিয়েছিল।

গ্রিনল্যান্ডের উৎপত্তি ও ভূততাত্তিক ক্রমবিবর্তন
প্রোটেরোজোইক কালের শুরুর দিকে, ২৫০ কোটি থেকে ২০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে কানাডিয়ান ঢাল-ভূখণ্ডের ওয়াইয়োমিং ক্র্যাটন, সুপিরিয়র ক্র্যাটন এবং উত্তর আটলান্টিক ক্র্যাটন ও সাইবেরিয়ান ভূ-ঢালখণ্ডের সাইবেরিয়ান ক্র্যাটন গ্রিনল্যান্ড সমন্বয়ে এই মহাদেশ গড়ে উঠেছিল।