তিস্তা নদী
ভারত
ও বাংলাদেশের মধ্য
দিয়ে প্রবাহিত একটি
ব্রহ্মপুত্র-এর
অন্যতম উপনদী। হিন্দু পুরাণ অনুসারে এটি দেবী পার্বতীর স্তন থেকে উৎপন্ন
হয়েছে।
ভারতের উত্তর সিকিমের হিমালয় পর্বতমালার হ্রদটি শেসচেনের কাছে ডোংখা গিরিপথের
উত্তরে ৫,৩৩০ মিটার (১৭,৪৮৭ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত সো লামো হ্রদ থেকে এই নদীটির
উৎপত্তি হয়েছে। এই অঞ্চলের ছাঙ্গু, ইউমথাং ও ডোংকিয়া লা পর্বতশ্রেণী থেকে উৎপন্ন
ছোট ছোট নদীর জলে পুষ্ট হয়ে সিকিমের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর তিস্তা সেতুর
(যে সেতুটি দার্জিলিং ও কালিম্পং শহরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে) ঠিক আগে তিস্তা
তার প্রধান উপনদী রঙ্গিতের সঙ্গে মিলিত হয়ে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়েছে। এরপর
শিলিগুড়ি শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে সেবকের করোনেশন সেতু পেরিয়ে তিস্তা
পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এই অঞ্চল অতিক্রম করে, নদীটি
পশ্চিমবঙ্গের সমভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ডোমারের উত্তরে খড়িবাড়িতে
বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ২৮০ কি.মি. প্রবাহিত হয়ে চিলমারির
নিকট ব্রহ্মপুত্রে পতিত হয়েছে। তিস্তার মাসিক গড় পানি অপসারণের পরিমাণ ২,৪৩০
কিউসেক।
ঘাগট তিস্তার একটি শাখানদী। এটি রংপুর ও গাইবান্ধা শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফুলছড়ি ঘাটের নিকট যমুনায় পতিত হয়েছে। তিস্তা নদীর পশ্চিম পাশে অবস্থিত ৩টি ছোট উপনদী সর্বমঙ্গলা, ডালিজান ও যমুনেশ্বরী যমুনায় পতিত হয়েছে।
অষ্টাদশ শতকের প্রায় শেষ পর্যন্ত এই নদীটি জলপাইগুড়ির দক্ষিণে তিনটি ধারায় প্রবাহিত হত। এই ধারা তিনটির পূর্বেটির নাম করতোয়া, পশ্চিমেরটির নাম পুনর্ভবা ও মধ্যেভাগেরটির নাম আত্রাই। ধারণা করা হয়, এই তিনটি ধারার অনুষঙ্গেই নদীটি ত্রিস্রোতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেছিল। কালক্রমে বিকৃত হয়ে দাঁড়ায়েছে তিস্তা। সে সময় তিনটি ধারার মধ্যে পুনর্ভবা মহানন্দা'য় মিলিত হতো। আত্রাই চলনবিলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে করতোয়া'য় মিলিত হতো। তারপর আত্রাই-করতোয়ার যুগ্মধারাটি জাফরগঞ্জের কাছে মিলিত হয়ে পদ্মা নদীতে। পতিত হতো। এর অংশবিশেষ এখনও বুড়ি তিস্তা নামে পরিচিত। ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দের অতিবৃষ্টির কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলে একটি ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সময় নদীটি গতিপথ পরিবর্তন করে লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধা জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে চিলমারী নদীবন্দরের দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদে পতিত হয়। বর্তমানে তিস্তা নদীর সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৩১৫ কিমি। এরভিতর ১১৫ কিমি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে অবস্থিত।
সিকিমে নদীর জলপ্রবাহে অনেকগুলি গিরিখাত সৃষ্টি হয়েছে। সিকিমের তিস্তার ধারে নানা ধরনের বনভূমি দেখা যায়। নিম্ন অববাহিকায় ক্রান্তীয় পর্ণমোচী ও গুল্ম শ্রেণীর গাছপালা বেশি চোখে পড়ে। উচ্চ অববাহিকায় দেখা যায় আল্পীয় বনভূমি। নদী উপত্যকায় প্রচুর সাদা বালি পাওয়া যায়, যা এখানকার নির্মাণশিল্পের একটি প্রধান কাঁচামাল।