কর-আদিগণ
বাংলা ব্যাকরণ মতে- একটি গণের নাম। এই গণের সকল ক্রিয়ামূল থেকে 'কর-ক্রিয়ামূলজাত' ক্রিয়াপদের মতো হয়। ব্যাকরণে তাই এই গণকে বলা হয়- √ কর্-গণ। এই গণের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো-
১. ক্রিয়ামূলটি গঠিত হবে দুটি বর্ণের সমন্বয়ে।
২. ক্রিয়ামূলের প্রথম বর্ণটি হতে পারে অ, এ, ও স্বরধ্বনি যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ। যেমন−
          অ-ধ্বনি যুক্ত : কর্, চল্ ইত্যাদি। 
          এ-ধ্বনি যুক্ত : খেপ্, খেল্ ইত্যাদি
          ও-ধ্বনি যুক্ত : ঘোষ্, রোপ্ ইত্যাদি
৩. শেষ ব্যঞ্জনবর্ণটি হবে হসন্ত-যুক্ত ব্যঞ্জন বর্ণ।
৪. এই গণের ক্রিয়ামূলগুলোর শেষে হসন্ত থাকে এবং লিখার সময় হসন্ত ব্যবহার করা হয়। যেমন- কর্, চল্, কিন্ ইত্যাদি। কিন্তু এই সকল ধাতুজাত ক্রিয়াপদের ভিতরে হসন্ত ব্যবহার করা হয় না। যেমন করতে, চলতে ইত্যাদি। তবে এই সকল ক্রিয়াপদ উচ্চারণের সময় হসন্তের মর্যাদা দিতে হয়। যেমন
                        লিখার রীতি          উচ্চারণ রীতি
                        করতে                 কর্‌তে
                        বলছেন               বল্‌ছেন ব্যতিক্রম : বর্তমান কালের সাধারণ ও অনুজ্ঞা নির্দেশে, মধ্যম–পুরুষ তুচ্ছার্থে ব্যবহৃত ক্রিয়াপদের সাথে অনেক সময় হসন্ত যুক্ত করা হয়। যেমন- বল্ {বর্তমান অনুজ্ঞা (আদেশ অর্থে), মধ্যম-পুরুষ (তুচ্ছ)}
          বলিস্ {সাধারণ বর্তমান, মধ্যম-পুরুষ (তুচ্ছ)}
বর্তমানে অবশ্য এই জাতীয় লিখার সময় হসন্তকে বর্জন করে, বল, বলিস লিখে থাকেন। নিচে এই গণ থেকে ক্রিয়াপদ সৃষ্টির সাধারণ সূত্রের তালিকার দেওয়া হলো।

চলিত রূপ 
কালের নাম নাম পুরুষ মধ্যম উত্তম
সাধারণ
(সে)
সম্ভ্রমাত্মক
(তিনি)
সম্ভ্রমাত্মক
(আপনি)
সাধারণ
(তুমি)
তুচ্ছ
(তুই)
আমি
বর্তমান সাধারণ -এ -এন -এন -অ -ইস -ই
ঘটমান -ছে -ছেন -ছেন -ছ -ছিস -ছি
পুরাঘটিত -এছে -এছেন -এছেন -এছ -এছিস -এছি
অনুজ্ঞা -উক -উন উন -অ -  
অতীত সাধারণ -ল -লেন -লেন -লে -লি -লাম
নিত্যবৃত্ত -ত -তেন -তেন -তে -তি -তাম
ঘটমান -ছিল -ছিলেন -ছিলেন -ছিলে -ছিলি -ছিলাম
পুরাঘটিত -এছিল -এছিলেন -এছিলেন -এছিলে -এছিলি -এছিলাম
ভবিষ্যৎ সাধারণ -বে -বেন -বেন -বে -বি -ব
ঘটমান -তে থাকবে -তে থাকবেন -তে থাকবেন -তে থাকবে -তে থাকবি -তে থাকব
পুরাঘটিত -রে থাকবে -রে থাকবেন -রে থাকবেন -রে থাকবে -রে থাকবি -রে থাকব
অনুজ্ঞা       -ও -বি  
সাধু রূপ 
কালের নাম নাম পুরুষ মধ্যম উত্তম
সাধারণ
(সে)
সম্ভ্রমাত্মক
(তিনি)
সম্ভ্রমাত্মক
(আপনি)
সাধারণ
(তুমি)
তুচ্ছ
(তুই)
আমি
বর্তমান সাধারণ -এ -এন -এন -অ -ইস -ই
ঘটমান -ইতেছে -ইতেছেন -ইতেছেন -ইতেছ -ইতেছিস -ইতেছি
পুরাঘটিত -ইয়াছে -ইয়াছেন -ইয়াছেন -ইয়াছ -ইয়াছিস -ইয়াছি
অনুজ্ঞা -উক -উন -উন -অ -ইস  
অতীত সাধারণ -ইল -ইলেন -ইলেন -ইলে -ইলি -ইলাম
নিত্যবৃত্ত -ইত -ইতেন -ইতেন -ইতে -ইতিস -ইতাম
ঘটমান -ইতেছিল -ইতেছিলেন -ইতেছিলেন -ইতেছিলে -ইতেছিলি -ইতেছিলাম
পুরাঘটিত -ইয়াছিল -ইয়াছিলেন -ইয়াছিলেন -ইয়াছিলে -ইয়াছিলি -ইয়াছিলাম
ভবিষ্যৎ সাধারণ -ইবে -ইবেন -ইবেন -ইবে -ইবি -ইব
ঘটমান -ইতে থাকিবে -ইতে থাকিবেন -ইতে থাকিবেন -ইতে থাকিবে -ইতে থাকিবি -ইতে থাকিব
পুরাঘটিত -ইয়া থাকিবে -ইয়া থাকিবেন -ইয়া থাকিবেন -ইয়া থাকিবে -ইয়া থাকিবি -ইয়া থাকিব
অনুজ্ঞা -ইবে -ইবেন -ইবেন -ইয়ো -ইবি  

অসমাপিকা ক্রিয়া :          সাধু রীতি : -ইতে, -ইলে, -ইয়া।          চলিত রীতি :  -তে, -লে, -এ


একটি গণের অন্তর্গত ক্রিয়ামূলগুলির তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো।

  কম্ (হ্রাস পাওয়া)
কশ্ (টেনে বাঁধা)
ষ্ ঘর্ষণ করে পরীক্ষা করা)
স্ (স্খলিত হওয়া)
খেঁচ্ (আকর্ষণ করা, আক্ষেপ করা)
খেপ্ (ক্ষিপ্ত হওয়া)
খেল্ (খেলা করা)
ড়্ (তৈরি করা)
গল্ (বিগলিত হওয়া)
ট্ (ঘটনা সংঘটিত হওয়া)
ঘষ্ (ঘর্ষণ করা)
ঘেঁষ্ (নিকটবর্তী হওয়া)
ঘোষ্ (ঘর্ষণ করা)

চড়্ (আরোহণ করা)
চর্ (বিচরণ করা)
চল্ (চলা)
ষ্ (বিচরণ করা)
চেত্ (রাগ করা)




 
ছড়্ (ছিটানো)
ল্ (ছলনা করা)
ছেঁক্ (ছাকুনির দ্বারা পরিষ্কার করা)
ছেঁচ্ (সেচন করা, থ্যাৎলানো)
প্ (আবৃত্তি)
জম্ (আবদ্ধ দশায় আসা)  
জর্ (জ্বলিত হওয়া)
জ্বল্ (জ্বলা)
ঝর্ (ঝরে যাওয়া)
টক্ (টক-স্বাদযুক্ত হওয়া)
টল্ (বিচলিত হওয়া)
ঠক্ (প্রতারিত হওয়া)
ঠেক্ (আটকে যাওয়া)
ঠেল্ (ঠেলে দেওয়া)
ঠেস্ (চেপে ধরা)
ডল্ (দলিত করা)
ঢল্ (ঝুঁকে পড়া)
দম্ (দমন করা)
দল্ (দলিত করা)
দেখ্ (দেখা)
ধর (ধরা)
ধস্ (ধসে পড়া)
পর্ (পরিধান করা)
ফল্ (উৎপন্ন হ্ওয়া)
ফেল্ (ফেলে দেওয়া)
বক্ (গালি দেওয়া)
বখ্ (উচ্ছনে যাওয়া)
বন্ (বনিবনা হওয়া)

বস্ (উপবেশন করা)
বেচ্ (বিক্রয় করা)
বেড়্ (আবরিত করা)
বেল্ (প্রসারিত করা)
ভজ্ (ভজনা করা)
ভর্ (পূরণ করা)
মজ্ (মজে যাওয়া)
মল্ (দলিত-মথিত করা)
মেল্ (মেলে দেওয়া)
রট্ (রটনা করা)
রস্ (রসযুক্ত হওয়া)
রোপ্ (রোপণ করা)
লড়্ (যুদ্ধ করা)
লেপ্ (লেপন করা)
সঁপ (সমর্পণ করা)
সর্ (স্থানান্তরিত হওয়া)

 
সেঁক (উত্তাপে শুকনো করা)
সেক (উত্তাপে শুকনো করা)
সেচ্ (সেচন করা)
হর্ (হরণ করা)
হের্ (দেখা)
হেল্ (কাৎ হওয়া)
হ্রেস (অশ্বরব করা)