মধুমাদ সারং
সমনাম : মধমাদ, মধ্যমাদি, মধ্যমাদি সারং, মধ্যমাবতী (দক্ষিণ ভারত),
মধুমাধবী।
উত্তর ভারতীয়
সঙ্গীত পদ্ধতিতে
কাফি
ঠাটের অন্তর্গত রাগ বিশেষ।
এর রাগাঙ্গ
সারং।
অনেকে এই রাগের ঠাটকে মিশ্র কাফি বলে থাকেন। এর রাগাঙ্গ সারং।
প্রাচীনকালের মধ্যমাদি রাগের বাদী স্বর ছিল মধ্যম। সম্ভবত এই সূত্রে এর নাম হয়েছে মধ্যমবাদী>মধ্যমাদি।
বর্তমানে এই রাগের বাদী স্বর ঋষভকে মান্য করা হয়।
সঙ্গীত পারিজাত -এ বর্ণিত মধ্যমাদি রাগের বিবরণে বলা হয়েছে- এই
রাগের গান্ধার ও ধৈবত বর্জিত। তাই এই রাগের জাতি- ঔড়ব ঔড়ব। এর গ্রহস্বর মধ্যম। এই
রাগটি উৎপন্ন হয়েছিল মধ্যম গ্রামের সৌবীরী মূর্চ্ছনা থেকে। এর আরোহ- ম প ধ ন র্স
র্র র্গ এবং অবরোহ: র্গ র্র র্স ন ধ প ম। এর অংশস্বর ঋষভ, মধ্যম ও নিষাদ।
প্রায়শই ঋষভ বাদী এবং সম্বাদী পঞ্চম। অবশ্য কেউ কেউ মধ্যমকে বাদী এবং ষড়্জকে
সম্বাদী মনে করেন।
ব্রহ্মামতে এই রাগটি ছিল শ্রীরাগের একটি রাগিণী। কিন্তু হনুমন্ত এবং ভরত (নাট্য
শাস্ত্র প্রণেতা নন) মতে এটি ভৈরব রাগের রাগিণী। সঙ্গীত রত্নাকরে ১৩টি প্রসিদ্ধ
রাগাঙ্কের মধ্য মধ্যমাদিকে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে এই রাগটি নিয়ে সঙ্গীতজ্ঞদের মধ্যে মতবিরোধ ছিল।
সাধারণভাবে এই রাগে গান্ধার ও ধৈবত বর্জিত স্বর হিসেবে মান্য করা হতো। কিন্তু
নিষাদের ব্যবহার নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। এঁদের একদল মনে করতেন এই রাগে আরোহ ও অবরোহে
উভয় নিষাদ ব্যবহার করা যায়। অন্য দল মনে করতেন আরোহে শুদ্ধ নিষাদ এবং অবরোহে কোমল
নিষাদ ব্যবহার করা যায়। কেউ কেউ মত দিলেন যে, এই রাগে শুধু কোমল নিষাদ ব্যবহৃত হয়।
এই ভাবে কোমল নিষাদ ব্যবহার করলে বৃন্দবনী সারং থেকে সহজেই মধুমাদকে পৃথক করা যায়।
এই সিদ্ধান্তের ফলে একই সাথে মধুমাদ সারং এবং বৃন্দাবনী সারঙের স্বতন্ত্র
স্বরবিন্যাস স্বীকৃত হয়।
রাগের সাথে বর্তমানের প্রচলিত রাগের স্বরবিন্যাসে মিল পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য কিছু প্রাচীন গ্রন্থে বর্ণিত মধ্যমাবতী, মধুমাধবী, মধ্যমাদি রাগের সাথে একালের মধ্যামদির মিল ততটা মিল পাওয়া যায় না।
বৃন্দাবনী সারং রাগের সাথে এর মিল
থাকলেও শুদ্ধ নিষাদ এই রাগে ব্যবহৃত হয় না। ফলে উভয় রাগের মধ্যে একটি পার্থক্য
সৃষ্টি হয়। এই রাগের পূর্বাঙ্গে পর এবং উত্তরাঙ্গে ণপ প্রবলভাবে ব্যবহার করা হয়।
এক সময়
কোমল নিষাদ ও শুদ্ধ নিষাদ, বৃন্দাবনী সারং এবং
মধুমাদ সারং
-এ ব্যবহৃত হতো। ফলে অনেক সময়ই এই দুটি রাগকে পৃথকভাবে
শনাক্ত করা যেতো না। পণ্ডিত ভাতখণ্ডেজি আয়োজিত দিল্লী সর্বভারতীয় সঙ্গীত সম্মেলনীতে
সিদ্ধান্ত হয় যে, বৃন্দাবনী সারং-এ উভয় নিষাদ ব্যবহৃত হবে। পক্ষান্তের
মধুমাদ সারং
- শুধু কোমল নিষাদ ব্যবহৃত হবে।
এই রাগে ম র, ণ প এবং প র মীড়পাতে স্বরসঙ্গতি ঘটে।
আরোহণ: স র ম প ণ র্স
অবরোহণ : র্স ণ প ম র স
ঠাট:
কাফি
জাতি : ঔড়ব-ঔড়ব
(গান্ধার ও ধৈবত বর্জিত)
বাদীস্বর :
ঋষভ
সমবাদী স্বর: পঞ্চম
অঙ্গ : পূর্বাঙ্গ
প্রধান।
সময় : দিবা দ্বিতীয় প্রহর।
পকড় :
র, ম প, ণ র্স, ণপ, ম র
স
- তথ্যসূত্র:
- মারিফুন্নাগমাত।
রাজা নওয়াব আলী খান। অনুবাদ মকসুদুর রহমান হিলালী। বাঙলা একাডেমী বর্ধমান
হাউস। ঢাকা। পৃষ্ঠা: ২৮২-২৮৩।
- রাগ-রূপায়ণ।
(প্রথম খণ্ড) সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী। জেনারেল প্রিন্টার্স
য়্যান্ড পাব্লিশাসার্স প্রাইভেট লিমিটেড।
১৫ এপ্রিল ১৯৮৩। পৃষ্ঠা: ১৩৭-১৩৮
- হিন্দুস্থানী সঙ্গীত পদ্ধতি
(একাদশ খণ্ড)। বিষ্ণুনারায়ণ ভাতখণ্ডে।
সম্পাদনা ধরিত্রী রায় এবং
অসীমকুমার চট্টোপাধ্যায়। [দীপায়ন কলিকাতা, বৈশাখ ১৩৯৯। [পৃষ্ঠা: ২৭৪-২৮৪]
- সঙ্গীতরত্নাকর। শারঙ্গদেব। সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী
অনূদিত [রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, ২২ শ্রাবণ ১৪০৮]। পৃষ্ঠা ৭১।