টোড়ি রাগ
উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত শাস্ত্রে বর্ণিত
টোড়ি ঠাটের রাগ বিশেষ।
এই রাগে নিষাদ ছাড়া অন্যান্য স্বর বিকৃত (ঋষভ, গান্ধার ও ধৈবত কোমল এবং মধ্যম কড়ি)। এই রাগে পঞ্চম দুর্বল। আরোহতে প্রায়ই পঞ্চমকে অগ্রাহ্য করা হয়। অবরোহণে পঞ্চমের স্বরপাত বক্রভাব বজায় থাকে। অর্থাৎ হ্ম দ প হয়। টোড়িতে পঞ্চমের ব্যবহারে যত্নবান না হলেই রাগ বিপর্যয় ঘটে। যেমন টোড়িতে পঞ্চম ব্যবহার না করলে হয়ে যায় গুর্জ্জরী টোড়ি, আবার বেশি ব্যবহার করলে মুলতানীর ছায়া পড়ে। তাই গায়কী দিয়ে টোড়িকে সাধনা করে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। এই রাগে ঋ এবং জ্ঞ-এর স্বরসংগতি হয়। ফলে কোমল গান্ধার কোমল ঋষভের দিকে ঝুঁকে থাকে। তাই কোমল গান্ধার মূলত অতি কোমল গান্ধার (রঞ্জনী শ্রুতি) হিসেবে উপস্থাপিত হয়। টোড়ি এই রূপটি টোড়ি অঙ্গের অন্যান্য রাগেও লক্ষ্য করা যায়।
দিবা দ্বিতীয়
প্রহরের শুরুর দিকে প্রভাতের উদার রূপ প্রকৃতিতে ফুটে উঠে।
প্রহরের শেষার্ধে প্রকৃতি রুক্ষ হয়ে ওঠে। তাই টোড়িতে অবারিত স্নিগ্ধ
রূপের সাথে রুক্ষ রূপের সংমিশ্রণ ঘটে। এই রাগের কড়ি মধ্যম
প্রকৃতির রুক্ষ-বিষণ্ণরূপকে প্রকাশ করে। কিন্তু এই রাগের ঋ জ্ঞ-এর স্বরসঙ্গতির
প্রসন্ন স্নিগ্ধরূপ- রুক্ষ-বিষণ্ণরূপকে প্রশমিত করে। এই মিশ্র ভাবের মিলনে রাগটি হয়
ওঠে স্নিগ্ধ-রুক্ষ রূপের যুগলবন্দী।
এর সাঙ্গীতিক স্বরগুচ্ছ হলো- স ঋ জ্ঞ হ্ম দ প। হ্ম স র্স। হ্ম ঋ জ্ঞ ঋ।
আরোহণ: স ঋ জ্ঞ হ্ম প দ ন র্স
অবরোহণ: র্স ন দ প হ্ম জ্ঞ ঋ স
ঠাট:
টোড়ি
জাতি:
সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ
বাদীস্বর: ধৈবত
সমবাদী
স্বর: গান্ধার
অঙ্গ:
উত্তরাঙ্গ।
সময়: দিবা
দ্বিতীয় প্রহর
পকড় : দ্ন্স, ঋ, জ্ঞ, ঋস, হ্ম, জ্ঞ, ঋজ্ঞ, ঋস
আলাপ:
স ঋ জ্ঞ, ঋ জ্ঞ - ঋ স। দ্ ন্ স ঋ জ্ঞ হ্ম জ্ঞ ঋ জ্ঞ ঋ স। ঋ জ্ঞ হ্ম জ্ঞ দ প জ্ঞ ঋ জ্ঞ
ঋ স।
তথ্যসূত্র:
- মারিফুন্নাগমাত। রাজা নওয়াব আলী। অনুবাদ মকসুদুর হিলালী।
বাংলা একাডেমী ঢাকা। জুলাই ১৯৬৭। পৃষ্ঠা: ২০৪-২০৫।
- রাগ-রূপায়ণ প্রথম খণ্ড। সুরেশ চক্রবর্তী। জেনারেল
প্রন্টার্স য়্যান্ড পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা। পৃষ্ঠা: ৭৯-৮০
- সঙ্গীতশাস্ত্র তৃতীয় খণ্ড। ইন্দুভূষণ
রায়। আদিনাথ ব্রাদার্স। কলকাতা। জানুয়ারি ২০১৮।
পৃষ্ঠা ১৬৫-১৭২
- হিন্দুস্থানী সঙ্গীত পদ্ধতি। তৃতীয় খণ্ড। পণ্ডিত
বিষ্ণুনারায়ণ ভাততখণ্ডে। সম্পাদনা ধরিত্রী রায় ও অসীমকুমার চট্টোপাধ্যায়।
দীপায়ন। কলকাতা। পৌষ ১৪০৪। পৃষ্ঠা: ১৩০-১৩১