মূল গ্রিক নমুনা অনুসারে রোমান-যুগে তৈরি করা মূর্তি

ডিমিটর
গ্রিক Δημήτηρ>ইংরেজি Demeter
সমতূল্যা রোমান দেবী
Ceres
কৃষিপণ্য বা ফসলের দেবী। এছাড়া প্রাচীন গ্রিসে এঁকে উর্বরতার দেবী হিসাবেও পূজা করা হতো।
প্রাচীন গ্রিক কবি হেসিওড-এর মতে, টাইটান জাতির রাজা ক্রোনাসের ঔরসে এবং  রিয়ার গর্ভে এঁর জন্ম হয়েছিল।

এঁর ভাই জিউস -এর সাথে মিলিত হলে, পাতালপুরীর রানী পার্সিফোনি' জাগ্রে্য়ুস-এর জন্ম হয়। পাতালপুরীর শাসক হেডিজ পার্সিফোনি-কে অপহরণ করে বিবাহ করেন। এই অপহরণের বিষয়টি এতটা দ্রুত এবং গোপনীয়ভাবে ঘটে যে, নয়দিন ধরে তাঁর মা ডিমিটর নানাভাবে খোঁজ করেও সন্ধান লাভ করতে পারেন নি। অবশেষে ডিমিটর সূর্যদেবতার সাহায্য প্রকৃত ঘটনা জানতে পারেন। এরপর তিনি অলিম্পাস ত্যাগ করে পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং ছদ্মবেশে বসবাস করতে থাকে। এই সময় কন্যার গভীর শোকে তিনি ফসল উৎপাদন বন্ধ করে দেন। ফলে দ্রুত পৃথিবী শ্যামলতা হারিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হতে শুরু করে। তিনি নানা জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে ইলিউসে চলে আসেন। এখানে ‌একটি বাড়ির দেওয়াল ঘেঁষে বৃদ্ধার বেশে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ওই বাড়ির চারটি কুমারী মেয়ে কূপ থেকে পানি নিয়ে আসার সময় তাঁকে দেখে ফেলেন। মেয়েরা তাঁর পরিচয় জানতে চাইলে, ডিমিটর তাঁদেরকে বলেন যে, তিনি জলদস্যুরা তাঁকে বিক্রয় করার জন্য নিয়ে যাচ্ছিল, এই অবস্থায় তিনি পালিয়ে এসেছেন। এরপর এই কন্যারা তাঁর মায়ের অনুমতি নিয়ে ডিমিটরকে আশ্রয় দেন। এই বাড়ির একটি শিশুপুত্র ডিমোফুন-এর পরিচর্যার দায়িত্ব নেন তিনি। একরাত্রে শিশুটির মা দেখলেন যে, ডিমিটর তাঁর শিশু পুত্রটিকে আগুনের উপর শুইয়ে রেখেছেন। এই দৃশ্য দেখে তিনি চিৎকার করে উঠলে, ডিমিটর রেগে যান। প্রথমে তিনি শিশুটিকে আগুন থেকে তুলে ভূমিতে রাখেন। এরপর তিনি দেবী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং শিশুটিকে বার্ধক্য ও মৃত্যু থেকে রক্ষা করার জন্য এই ব্যবস্থা করেছিলেন বলে জানান।

এরপর ডিমিটর তাঁর জন্য একটি মন্দির তৈরি করার নির্দেশ দেন। এদিকে ক্রমে মরুভূমিতে পরিণত হওয়া পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য,
জিউস তৎপর হয়ে উঠেন। কিন্তু ডিমিটর জিউস ও অন্যান্য দেবাদেবীর আবেদন উপেক্ষা করে অনড় রইলেন। ফলে জিউস ই বিষয়ের মধ্যস্থতা করার জন্য হের্মেজকে পাতালপুরীতে পাঠান। হের্মেজ পাতালে গিয়ে দেখলেন যে, পার্সিফোনি হেডিজ পাশাপাশি সিংহাসনে বসে আছেন। হের্মেজ তখন জিউস-এর আদেশ অনুসারে পার্সিফোনি-কে ছেড়ে দিতে বলেন। জিউস-এর আদেশ উপেক্ষা করার ক্ষমতা হেডিজ-এর ছিল না। তাই তিনি বিশেষ অনুরোধে পার্সিফোনি-কে একটি ডালিম খেতে দেন। এরপর হের্মেজ তাঁর রথে করে পার্সিফোনি-কে এনে ডিমিটর-এর কাছে পৌঁছে দেন। ডিমিটর কন্যাকে কাছে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। কিন্তু যখন শুনলেন যে পাতালপুরীতে তিনি হেডিজ-এর দেওয়া একটি ডালিম খেয়েছেন, তখন অত্যন্ত ভেঙে পড়লেন। কারণ কেউ পাতালপুরীর কোনো খাদ্য গ্রহণ করলে,  সে আর জীবিতলোকে থাকতে পারে না। এরপর দেবকূলের প্রাচীন দেবী রিয়া এসে এর মীমাংশা করে দিয়ে বললেন, পার্সিফোনি বৎসরের এক-তৃতীয়াংশ সময় মৃত্যুপুরী তথা পাতালপুরীতে থাকবে। বাকি সময় সে দেবতাদের মধ্যে বসবাস করতে পারবে।

শেষ পর্যন্ত এই মীমাংশা মেনে নিয়ে, ডিমিটর মানুষের কল্যাণ্যে আবার পৃথিবীতে শস্য ও উদ্ভিদে ভরে দিলেন।


তথ্যসূত্র :
greek myth
/Robert Graves, cassel & comoany, fourth edition 1995
edith hamilton mythology/new american library
http://www.pantheon.org/areas/mythology/europe/greek/