লিওনার্দোর সৃষ্টিকর্মের তালিকা

লিওনার্দো দ্যা ভিন্সি
Leonardo da Vinci

ইতালি রেনেসাঁ যুগের এক মহান স্রষ্টা। তিনি একাধারে ছিলেন চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, সঙ্গীতজ্ঞ, স্থাপতি, আবিষ্কারক,  গণিতজ্ঞ, প্রকৌশলী, শবব্যবচ্ছেদ-বিদ্যাবিদ, ভূতাত্ত্বিক, মানচিত্রবিদ, উদ্ভিদবিজ্ঞানী এবং লেখক। তিনি ছিলেন
বিংশ শতাব্দীর বহু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নেপথ্য জনক।

১৪৫২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ এপ্রিল মধ্য রাত্রে, তৎকালীন মেডিক শাসিত ফ্লোরেন্সের আর্নো নদীর নিম্ন উপত্যাকার তুসকান এর পাহাড়ি অঞ্চলের ভিন্সি নামক শহরের নিকটবর্তী আনচিআনো নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করে। এঁর পিতা পিয়ারো দ্যা ভিন্সি ছিলেন একজন প্রভাবশালী বিত্তবান লোক। তাঁর মা ক্যাতরিনা ছিলেন একজন সাধারণ কৃষক কন্যা। কোনো কোনো মতে, ক্যাতরিনা ছিলেন মধ্যপ্রাচ্য থেকে একজন আগত দাসী।

ঘটনাক্রমে পিয়ারো দ্যা ভিন্সি এবং ক্যাতরিনার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিবাহের আগেই  ক্যাতরিনা গর্ভবতী হয়ে পড়েন। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের সূত্রে জন্ম বলে, লিওনার্দোকে জারজ সন্তান বলা হয়ে থাকে। পিয়েরোর বাবা ক্যাতেরিনাকে ছেলের বৌ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি হন নি। তিনি  ছেলেকে সম্ভ্রান্ত পরিবারে বিয়ে করতে বাধ্য করেন। পিয়ারোর নতুন স্ত্রীর নাম ছিল অ্যালবিরা। এই বিয়ের ফলে পিয়ারোর সাথে ক্যাতেরিনার চিরতরে বিচ্ছেদ ঘটে। তখনকার প্রথানুযায়ী পিয়েরো দ্য ভিন্সি তাঁর ভালবাসার সন্তানকে ক্যাতেরিনার কাছ থেকে কিনে নেনে এবং সন্তানের স্বীকৃতি দেন। এই কারণে লিওনার্দোর মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হন।

লিওনার্দোর জীবনের প্রথম অংশ বিষয়ে খুবই অল্প জানা গিয়েছে। তাঁর জীবনের প্রথম ৫ বছর কেটেছে ফ্লোরেন্স শহরের নিকটবর্তী আনসিয়ানো-র একটি ছোট্ট গ্রামে। তারপর তিনি চলে যান ফ্রান্সিসকোতে বসবাসরত, তাঁরর পিতা, দাদা-দাদী ও চাচার কাছে। সেখানে তাঁর সৎমার স্নেহে বড় হয়ে উঠেন। কিন্তু অল্প বয়সেই তাঁর এই মা মৃত্যবরণ করেন।

১৪৬৬ খ্রিষ্টাব্দে লিওনার্দোর পিতা তাঁকে, সেকালের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ভ্যারিচ্চিও
(Verrocchio)-র কাছে শিক্ষানবীশ হিসেবে পাঠান। এখানে লিওনার্দো হাতে কলমে প্রচুর কারিগরি জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। বিশেষ করে কারুকার্য, রসায়ন, ধাতুবিদ্যা, ধাতু দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানানো, কাস্টিং, চামড়া দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানানো, গতিবিদ্যা এবং কাঠের কাজ ইত্যাদি শেখার তাঁর সুযোগ হয়েছিল। একই সাথে তিনি দৃষ্টিনন্দন নকশাকরা, ছবি আঁকা, ভাস্কর্য তৈরি এবং মডেলিং সম্পর্কে প্রভূত জ্ঞান অর্জন করেন। যতদূর জানা যায় লিওনার্দো ভ্যারিচ্চিও কে তার 'ব্যাপ্টিজম অব ক্রাইস্ট' ছবিটিতে সাহায্য করেছিলেন। এই সময় ভ্যারিচ্চিও বেশ কয়েকটি কাজে লিওনার্দোকে মডেল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। এর ভিতরে রয়েছে  'দি বার্জেলো' ( Bargello) নামক ব্রোঞ্জ মূর্তিতে 'ডেভিড' চরিত্র, 'আর্চঅ্যাঞ্জেল মাইকেল' হিসেবে 'টোবিস এন্ড অ্যাঞ্জেল' (Tobias and the Angel)-এ।

১৪৬৯ খ্রিষ্টাব্দ রেনেসাঁসের অপর বিশিষ্ট শিল্পী ও ভাস্কর আন্দ্রেয়া ভেরোচ্চিও-র কাছে ছবি আঁকায় ভিঞ্চির শিক্ষানবিশ জীবনের সূচনা। এই শিক্ষাগুরুর অধীনেই তিনি ১৪৭৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে, বিশেষত চিত্রাঙ্কনে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন।

১৪৭০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ভেরোচ্চিও Tobias and the Angel নামক ছবিটি তিনি ছবিটি শেষ করেছিলেন ১৪৮০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। এই ছবির শেষের দিকে লিওনার্দো বহু কাজ করেছিলেন। এই সময়ের ভিতরে ভেরোচ্চিও-র আঁকা এরূপ অপর একটি ছবি নিয়ে বিতর্ক আছে। এই ছবিটি হলো The Dreyfus Madonna

১৪৭২ খ্রিষ্টব্দে লিওনার্দো ফ্লোরেন্সের  গিল্ডের (চিকিৎসক এবং চিত্রকরদের একটি সংঘ) অনুজ্ঞাপত্র লাভ করেন। এই সময় তিনি তাঁর বাবার নিজস্ব ওয়ার্কশপে কাজ করা শুরু করেন। একই সাথে তিনি তাঁর গুরু ভ্যারিচ্চিওর সাথে চুক্তি অনুসারে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। এই সময় ভ্যারিচ্চিও তাঁর নিজের কারখানায় ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে নানা ধরনের ছবি এঁকে দেওয়ার কাজ করতেন। এই কারখানায়, লিওনার্দো ছাড়াও  ভ্যারিচ্চিও-র আরও অন্যান্য শিষ্যরা ছবি আঁকতেন। ১৪৭২ খ্রিষ্টাব্দে এই রকম একটি ফরমায়েশি ছবি আঁকার কাজ পান ভ্যারিচ্চিও। এই সময় লিওনার্দো একটি ছবি আঁকেন। ছবিটির নাম হলো The Baptism of Christ । এই ছবিটি লিওনার্দো এতটাই ভালো আঁকেন যে, তাঁর গুরু প্রতীজ্ঞা করেন যে, ভবিষ্যতে তিনি আর তুলি ধরবেন না। এই ছবিটি অবশ্য ভ্যারিচ্চিও ও লিওনার্দোর আঁকা ছবি হিসেবেই পাওয়া যায়। যতদূর জানা যায় এরপর থেকে ভ্যারিচ্চিও ভাস্কর্যের কাজ করতেন। আর কারখানায় ছবি আঁকার কাজ করতেন লিওনার্দো।

বেদী-পশ্চাৎ চিত্র ১৪৭২-৭৫।

১৪৭২ থেকে ১৪৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে লিওনার্দো এবং  ভ্যারিচ্চিও অলিভিটান গির্জার বেদি অলঙ্করণের কাজ শুরু করেন। এই সময়ের ভিতরে বেদীর পিছনে একটি চমৎকার ছবি (Annanciation) আঁকেন লিওনার্দো। এই ছবিটি বর্তমানে ফ্লোরেন্সের উফ্‌ফিজি গ্যালারিতে রক্ষিত আছে।

১৪৭৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আঁকেন Arno Valley  নামক ছবিটি। এই ছবিতে লিওনার্দোর নিজের দেওয়া তারিখ উল্লেখ আছে ৫ই আগষ্ট ১৪৭৩।

১৪৭৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি Ginevra de' Benci নামক একটি প্রতিকৃতি অঙ্কন করেন। ছবিটি বর্তমানে ওয়াশিংটন ডিসির National Gallery of Art-তে রক্ষিত আছে।

১৪৭৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তাঁর গুরু ভ্যারিচ্চিও-এর সাথে তিনি ছোটো বড় বহু কাজ করেছেন। এই সময়ের সব কাজই ছিল ব্যাবসায়ীক। এই সব ফরামায়েসি কাজে কারও স্বাক্ষরও পাওয়া যায় না। এই সময় তিনি  ভ্যারিচ্চিও-র বাড়িতে থাকতেন। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার ভিতর দিয়ে ভ্যারিচ্চিও-র সাথে তাঁর পারিবারিক সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে।

১৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দে ৮ এপ্রিল, তিনি এবং অপর ৩ জন যুবকের বিরুদ্ধে সমকামিতার দায়ে অভিযুক্ত করে আদালত থেকে পরোয়ানা জারি করা হয়। এর ভিতরে একজন ছিল  ভ্যারিচ্চিও-র আত্মীয়। পরে বিচারে বিষয়টি প্রমাণিত না হওয়া অভিযুক্তদের সকলেই বেকসুর খালাসও পান। কিন্তু এরপর তিনি ভ্যারিচ্চিও-র বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসেন। এই সময় তিনি তাঁর পিতার কারখানাতেও কাজ করেন নি।

১৪৭৮ খ্রিষ্টাব্দ তিনি নিজের জন্য একটি পৃথক কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখে তিনি চ্যাপেল অব সেন্ট বার্নার-এর পূজাবেদী রং করার কাজ পান। অবশ্য এই কাজটি শেষ করেন নি। কাজটি পরে শেষ করেছিলেন ফিলপ্পিনো লিপ্পি। এই সময় ফ্লোরেন্সের ফ্রান্সাসসো দি পাৎসি নামক একজন প্রভাবশালী লোকের সাথে মেডিসিদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছিল। এই বৎসরে তিনি অঙ্কন করেন 
Madonna of the Carnation নামক ছবিটি। অবশ্য এই ছবিটি ভ্যারিচ্চিও আঁকা বলে অনেকে সন্দেহ করেন। কিন্তু অধিকাংশ গবেষক এই ছবিটি লিওনার্দোর আঁকা বলে অভিমত দিয়েছেন। এই ছবিটি তিনি শেষ করেছিলেন ১৪৮০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। এই বৎসরে আঁকা তাঁর অপর একটি ছবি হলো Madonna and Child with Flowers

১৪৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ এপ্রিল মেডিসি পরিবারের গিউলায়ানো নামক একজন বালককে প্রতিপক্ষের লোকেরা হত্যা করে। পরে এই বালকের হত্যাকারীকে প্রকাশ্যে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানো হয়। সরকারি ঘোষণায় এই ফাঁসির আসামির ছবি আঁকার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। লিওনার্দো এই আসামির ছবি আঁকার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে হাজির হয়ে জানতে পারেন যে, এই ছবি আঁকার জন্য সরকার পক্ষ আগেই লোক নিয়োগ করেছে।  তারপরেই তিনি ছবি আঁকেন।

১৪৮০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অঙ্কন করেন St Jerome in the Wilderness নামক ছবিটি। এই ছবিটি বর্তমানে ভ্যাটিকান সিটির যাদুঘরে রয়েছে। এট লিওনার্দোর  অসমাপ্ত কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

১৪৮১ খ্রিষ্টাব্দে ফ্লোরেন্সের সান দোনাতো মঠে একটি ছবি আঁকার দায়িত্ব পান। এই ছবিটির নাম The Adoration of the Magi। পরে তিনি ছবিটি আর শেষ করতে পারেন নি। এই অসমাপ্ত ছবিটি ফ্লোরেন্সের উফ্‌ফিজি গ্যালারিতে রক্ষিত আছে।

ফ্লোরেন্সে নানা ধরনের কোন্দল লেগেই থাকতো। এই কোন্দলের সূত্রে নেপলসের রাজা ফার্ডিনান্দোর বন্ধু হিসেবে পরিচিত একজন পাদ্রি নিহত হন। ফলে নেপলসবাসীরা ফ্লোরেন্স আক্রমণের হুমকি দেয়। এই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ফ্লোরেন্সবাসীরা প্রতিরক্ষা যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এর ফলে ফ্লোরেন্সের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। এই সময় ফ্লোরেন্সের শাসককুল শিল্পের পিছনে অর্থ ব্যয় বাতিল করে সমরাস্ত্র তৈরিতে অর্থ সরবরাহ শুরু করে। এই সময় লিওনার্দো নতুন সমরাস্ত্র তৈরির জন্য গবেষণা শুরু করেন। এই সূত্রে তিনি বহুনল বিশিষ্ট একধরনের বন্দুকের নকশা করেন। কিন্তু ফ্লোরেন্সের রাষ্ট্রপ্রধান এই নকশার কোনো গুরুত্ব দেন নি। এরপর হতাশ হয়ে ১৪৮১-৮২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মিলান চলে আসেন।

লিওনার্দো সঙ্গীত কিভাবে আয়ত্ত করেছিলেন, তা বিশেষ জানা যায় না। কিন্তু মিলানের রাজদরবারে তিনি বীণাবাদক হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। তিনি সেখানকার সঙ্গীতসভায় একটি অশ্বমুণ্ডুর আকারের একটি বীণা নিয়ে হাজির হন। এই বীণাটি তিনি বাজিয়ে সাবাইকে মুগ্ধ করেন।

১৪৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ এপ্রিল, পাদ্রীরা চ্যাপেল-এর জন্য লিওনার্দো এবং এম্ব্রজিয়ো নামক একজন শিল্পীকে ছবি আঁকার দায়িত্ব দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লিওনার্দো এই ছবিটি শেষ করেন। এই ছবিটির নাম রাখা হয় Virgin of the Rocks । এই ছবিটিকে অনেক সময় Madonna of the Rocks-ও বলা হয়। ছবিটির দুটি সংস্করণ আছে। মূল ছবিটি আছে প্যারিসের লুভর যাদুঘরে। এই কারণে একে বলা হয় লুভর সংস্করণ। এই ছবিটি তিনি এঁকেছিলেন ১৪৮৩-১৪৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে। এই সংস্করণটি তৈরি হওয়ার পর এর দাম ধরা হয়েছিল ৭০০ লিরা। আর লিওনার্দোর সম্মানী ছিল ১০০ লিরা। পরে লিওনার্দো এবং এম্ব্রজিয়ো এই ছবির পারিশ্রমিক আরও বেশি প্রার্থনা করেন। শেষ পর্যন্ত ছবিটিকে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করলেও- শিল্পীরা আবার ছবিটি ফেরত চেয়ে বসেছিলেন। লিওনার্দো এর লণ্ডন সংস্করণ তৈরি করেছিলেন ১৪৯৫-১৫০৮ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে। এই সংস্করণটি আছে লণ্ডনের ন্যাশনাল গ্যালারিতে। এই কারণে একে লণ্ডন সংস্করণ বলা হয়। এই ছবিটির প্রাথমিক খসড়া করেছিলেন তাঁর একজন শিষ্য। এটা ছিল তাঁর প্রশিক্ষণের অংশ। পরে ছবিটির পূর্ণতা প্রদান করেন লিওনার্দো স্বয়ং। সেই কারণে এই ছবিটি লিওনার্দোর ছবি হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে।

Lady with an Ermine ১৪৮৯-৯০ খ্রিষ্টাব্দ

এরপর তিনি লুডোভিকোর রক্ষিতা সিসিলয়া গেলিরানির প্রতিকৃতি আঁকেন। ছবিটির নাম : Lady with an Ermine। সম্ভবত ১৪৮৯-৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি ছবিটি সমাপ্ত করেছিলেন। ছবিটি বর্তমানে পোল্যান্ডের 'Czartoryski Museum and Library' রক্ষিত আছে।

১৪৯০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অঙ্কন করেন Madonna Litta নামক ছবিটি। ছবিটি বর্তমানে সেন্ট পিটাসবার্গের হেরমিটেজ যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এই বৎসরের অপর একটি ছবি হলো Portrait of a Musician। ছবিটি বর্তমানে মিলানে রয়েছে। ১৪৯০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আঁকা শুরু করেন La belle ferronnière নামক ছবিটি। এই ছবিটি তিনি শেষ করেছিলেন ১৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে। এই সময়ে তিনি অপর একটি ছবির কাজ শুরু করেছিলেন। ছবিটির নাম Salvator Mundi। এই ছবিটি তিনি শেষ করেছিলেন ১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দে।

মানুষের গাঠনিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কের লিওনার্দো বিশেষভাবে অবগত হয়েছিলেন রোমান স্থপতি ভিট্রুভি্য়াস-এর বই পত্র পড়ে। এই সূত্রে তিনি মানুষের একটি স্কেচ চিত্র অঙ্কন করেন ১৪৯০ খ্রিষ্টাব্দে। এই চিত্রটি ভিট্রুভিয়ান মানুষ (Vitruvian Man) নামে পরিচিত।

১৪৯৩ খ্রিষ্টাব্দের দিকে অঙ্কিত একটি ছবি পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় এই ছবিটি লিওনার্দোর আঁকা। এই ছবিটির নাম Portrait of a Lady in Profile

১৪৯৪ খ্রিষ্টাব্দে লিওনার্দো সান্তা মারিয়া গ্রাৎসির যাজকদের ঘরে একটি ছবি আঁকার দায়িত্ব পান। ১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এই ছবিটি শেষ করেন। পৃথিবীর শ্রেষ্ট দেওয়ালচিত্র হিসেবে এই ছবিটি এখনো প্রশংসিত হয়ে থাকে। এই ছবিটির নাম The Last Supper

১৪৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মিলান ত্যাগ করে ভেনিসে যান। এই সময়ে তিনি রানী ইসাবেলার প্রতিকৃতি আঁকেন। এই বৎসরে 'ম্যাডোনা এবং শিশু'র দুটি ছবি এঁকেছিলেন দুজন শিল্পী। শিল্পীদের নামানুসারে এই ছবিদুটিকে বলা হয়
The Buccleuch Madonna এবং The Lansdowne Madonna । এর ভিতরে  Buccleuch Madonna ছবিটিতে লিওনার্দো কিছু কাজ করেছিলেন বলে অনুমান করা হয়।

১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি আবার ফ্লোরেন্স ফিরে আসেন। এই সময় তিনি সামরিক বাহিনির প্রকৌশলী পদে নিয়োগ লাভ করেন। ১৪৯৯-১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে তিনি অঙ্কন করেন
The Virgin and Child with St Anne and St John the Baptist  ছবিটি। ফ্লোরেন্সে থাকাবস্থায় এই ছবির কাজ শুরু করেছিলেন। আবার অনেকে অনেকের মতে এই ছবিটি তিনি আরো পরে অর্থাৎ ১৫০৬-১৫০৮ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে মিলানে থাকাকালীন সময়ে এঁকেছিলেন।

১৫০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সিজারের বর্জিয়ার চাকরি গ্রহণ করেন।

Mona Lisa, ১৫০৩-১৫০৬

১৫০৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'মোনা লিসা (Mona Lisa)' ছবি আঁকা শুরু করেন। ১৫০৬ খ্রিষ্টাব্দে এই ছবিটি তিনি প্রাথমিকভাবে শেষ করেন। এরপর ১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মাঝে মাঝে এই ছবিতে কাজ করেছেন। রহস্যময় হাসির জন্য জন্য এই ছবিটি জগদ্বিখ্যাত।

১৫০৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ জুলাই তাঁর পিতা পিয়ারো দ্যা ভিঞ্চির মৃত্যু হয়।
১৫০৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মে তিনি মিলানে আসেন।
১৫০৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর সৎ ভাইদের সাথে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ হয়। ১৫ই আগষ্ট তিনি ফ্লোরেন্সে ফিরে আসেন।
১৫০৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আবার মিলানে আসেন। অনেকে মনে করেন এই সময় তিনি
The Virgin and Child with St Anne and St John the Baptist ছবিটি এঁকেছিলেন। এই বৎসরে তিনি অঙ্কন করেন Head of a Woman নামক ছবি। তবে তিনি ছবিটি শেষ পর্যন্ত শেষ করেন নি।

১৫১০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে লিওনার্দোর ‌ওয়ার্কাশপে একটি ছবি অঙ্কিত হয়েছিল। ছবিটির নাম Bacchus। এই ছবিটি আঁকার সময় Sydney J. Freedberg  তাঁকে সাহায্য করেছিলেন।

১৫১৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মিলানেই থেকে যান। এই বৎসরেই তিনি রোম ভ্রমণ করেন। এই বৎসরে তিনি St. John the Baptist নামক ছবিটি আঁকা শুরু করেন। ছবিটি শেষ করেছিলেন ১৫১৬ খ্রিষ্টাব্দে।

১৫১৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে তিনি ফরাসি রাজদরবারে আসেন।
১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ এপ্রিল তিনি তাঁর সম্পত্তির শেষ উইল তৈরি করেন।
১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২ মে ফ্রান্সে মৃত্যুবরণ করেন।


সূত্র :
১. লিওনার্দো দা ভিঞ্চি
মোবাশ্বের আলী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী। বৈশাখ ১৪১৩।
২.
http://www.leonardoda-vinci.org/