অগ্নি-বীণা
কাজীনজরুল ইসলাম
গ্রন্থ পরিচয় ছুটি
ঝড়ের মতন করতালি দিয়া আমি
উত্তাল, আমি তুঙ্গ, ভয়াল, মহাকাল, নজরুলের
এক বিশিষ্ট দিকের কবিতা 'শাতিল আরব' যখন 'মোসলেম ভারতে' প্রকাশ হয়, প্রায় ঠিক
সেই সময়ে হিন্দুর দেব-দেবী নিয়ে প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় 'উপাসনা'য়–
এ কি রণ-বাজা বাজে ঝনঝন।"
'আগমনী'
১৩২৯ বঙ্গাব্দের ৯ই আশ্বিন তারিখের 'ধুমকেতু'তে পুনর্মুদ্রিত হইয়াছিল।
"টাইগ্রীস
(দিজ্লা) আর ইউফ্রেটিস (ফোরাত) বসরার অদূরে একজোট হয়ে 'সাতিল আরব' নাম নিয়েছে।
তার পর, বসরার পাশ দিয়ে বয়ে পারস্য-উপসাগরে গিয়ে পড়েছে। এর তীরে দু্'তিন মাইল করে
চওড়া খর্জুর-কুঞ্জ; তাতে ছোট্ট 'নহর, তারই কূলে আঙুরলতার বিতান,
বেদানা-নাশপাতির কেয়ারী। এখানে এলেই অনেক পুরানো স্মৃতি জেগে ওঠে আর আপনিই
গাইতে ইচ্ছা করে–
'খেয়া-পারের
তরণী” ছাপা হইয়াছিল ১৩২৭ শ্রাবণের 'মোসলেম ভারতে'। সে সংখ্যার গোড়ায় শোভিত
হইয়াছিল একখানি চিত্র। তাহার
Caption-রূপে
ছাপা হইয়াছিল:
'চিত্র-পরিচয়' প্রদান প্রসঙ্গে বলা হয়–
"চিত্রশিল্পী নওযাবজাদী মেহেরবানু খানম সাহেবা ঢাকার পরলোকগত স্যার নওয়াব
আহ্সানউল্লাহ্ বাহাদুরের কন্যা এবং স্যার নওয়াব সলিমুল্লাহ্ বাহাদুরের ভগিনী।
ইহার স্বামী খানবাহাদুর খাজা মোহাম্মদ আজম সাহেবও বঙ্গে সুপরিচিত।"
এই শ্লোকে
মিল, ভাবানুযায়ী শব্দবিন্যাস এবং গভীর গম্ভীর ধ্বনি আকাশে ঘনায়মান মেঘপুঞ্জের
প্রলয়-ডম্বরু-ধ্বনিকে পরাভূত করিয়াছে; বিশেষ ঐ শেষ ছত্রের শেষ বাক্য 'লা-শরীক
আল্লাহ্'–
যেমন মিল, তেমনি আশ্চর্য প্রয়োগ। ছন্দের অধীন হইয়া এবং চমৎকার
মিলের সৃষ্টি করিয়া এই আরবী বাক্য-যোজনা বাঙ্লা কবিতায় কি
অভিনব-ধ্বনি-গাম্ভীর্য লাভ করিয়াছে।"
১৩২৭
শ্রাবণের 'সবুজপত্রে' তরিকুল আলম 'আজ ঈদ' শীর্ষক প্রবন্ধে লিখিয়াছিলেন:
'কোরবানী'
কবিতার ছন্দ সম্পর্কে শ্রীমোহিতলাল মজুমদার লিখিয়াছেন:
ইহা
পড়িতে হইবে এইরূপ–
'মোহর্রম'
ছাপা হইয়াছিল ১৩২৭ আশ্বিনের 'মোসলেম ভারতে'। সে সংখ্যার গোড়ায় ছিল একটি ছবি;
তাহার উপরে লেখা ছিল 'কারবালা-প্রান্তরে ইমাম হোসেনের সমাধি'। ছবিটির নীচে লেখা
ছিল:
"মোহর্রম! কারবালা! কাঁদো 'হায় হোসেনা!'
'মোসলেম
ভারতে' প্রকাশিত 'মোহর্রম' কবিতাটির শেষে ছিল এই শ্লোকটি–
দুনিয়াতে খুনিয়ারা দুর্মদ ইসলাম,
কিন্তু
গ্রন্থবদ্ধ হওয়ার সময় এই অগ্নিক্ষরা শ্লোকটি বর্জিত হইয়াছে। ১৩২৯ বঙ্গাব্দের
১৬ই ভাদ্র তারিখের বিশেষ মোহর্রম সংখ্যা 'ধূমকেতু'তে কবিতাটি পুনর্মুদ্রিত
হইয়াছিল।
অগ্নি-বীণা
প্রকাশিত হয় ১৩২৯ বঙ্গাব্দের কার্তিকে (অক্টোবর ১৯২২); প্রকাশক:
গ্রন্থকার, ৭ প্রতাপ চাটুজ্যে লেন, কলিকাতা; প্রকাশকরূপে অনেক ক্ষেত্রে
উল্লিখিত হয়েছেন শরচ্চন্দ্র গুহ, আর্য পাবলিশিং হাউস, কলেজ স্ট্রীট মার্কেট,
কলিকাতা। পৃ ২ x ৬৬; দাম এক টাকা। এই কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত
হয় ১৩৩০ বঙ্গাব্দের আশ্বিনে, তৃতীয় সংস্করণ ১৩৩৩ এর অগ্রহায়ণে এবং চতুর্থ
সংস্করণ এর শ্রাবণে। কবির সুস্থাবস্থায় প্রকাশিত অগ্নি-বীণার
যে-কটি সংস্করণ দেখার সুযোগ আমাদের হয়, তার মধ্যে চতুর্থ সংস্করণই
সর্বশেষ। এর প্রকাশক ছিলেন ডি, এম. লাইব্রেরির পক্ষে গোপালদাস মজুমদার,
পৃষ্ঠাসংখ্যা ৪ +
৫৮, মূল্য পাঁচ সিকা, মুদ্রণসংখ্যা ২২০০। নজরুল-রচনাবলীর
এই নতুন সংস্করণে আমরা অগ্নি-বীণার চতুর্থ সংস্করণের পাঠ গ্রহণ করেছি।
চতুর্থ সংস্করণের যে-কপি অনুসরণ করে বর্তমান পাঠ নির্ণীত হয়েছে, তা সিলেট
কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের গ্রন্থাগারে রক্ষিত। তাতে 'বিদ্রোহী' কবিতার
পাতাগুলো ছেঁড়া থাকায় সঞ্চিতা কাব্যগ্রন্থের পঞ্চম সংস্করণে (কলিকাতা, ভাদ্র
১৩৫২) সংকলিত 'বিদ্রোহী'র পাঠ অনুসৃত হয়েছে। “আমি বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস”– এই
চরণের আগে প্রথম সংস্করণে দুটি চরণ ছিল:
আমি
সন্ন্যাসী, সুর-সৈনিক
এই চরণদুটি
সঞ্চিতার অন্তর্ভুক্ত 'বিদ্রোহী' কবিতায় বর্জিত, অগ্নি-বীণার দ্বাদশ সংস্করণেও
(কলিকাতা, অগ্রহায়ণ ১৩৫৫) নেই।
নজরুল-জন্মশতবর্ষ সংস্করণের
সংযোজন
নজরুল-রচনাবলী জন্মশতবর্ষ সংস্করণ প্রথম খণ্ডে (জ্যৈষ্ঠ ১৪১৩, মে ২০০৬) প্রদেয়
গ্রন্থপরিচয় নিচে তুলে ধরা হলো।
'অগ্নি-বীণা'
১৯২২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মুতাবিক ১৩২৯ বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসে গ্রন্থাকারে
প্রকাশিত হয়।
এবং সপ্তম স্তবকের পরে আছে এরূপ-
'উৎসর্গ' গানটি 'অগ্নি-ঋষি' শিরোনামে ১৩২৮ শ্রাবণের
'উপাসনা'য় প্রকাশিত হইয়াছিল। শিরোনামের নীচে লেখা ছিল : "তিলক–কামোদ–ঝাপতাল"।
"সুরের ব্যথায় প্রাণ উদাসী" চরণের 'প্রাণ' স্থানে 'উপাসনা'য় ছাপা হইয়ছিল
'জান্'। 'উৎসর্গ'– গানটিতে শ্রীবারীন্দ্রকুমার ঘোষের 'দ্বীপান্তরের বাঁশী' নামক
আন্দামানে অবস্থান-কালে লেখা বইখানির প্রতি ইঙ্গিত করা হইয়াছে। "বারীন্দ্রের
দ্বীপান্তরের বাশী" সম্বন্ধে ১৩২৭ শ্রাবণের 'প্রবাসী' বলেন : "কৃষ্ণের বাঁশীর
রূপক বেশ সুসঙ্গত হয় নাই।" 'প্রলয়োল্লাস', ১৩২৯
জ্যৈষ্ঠের 'প্রবাসী'তে প্রকাশিত হইয়াছিল এবং 'প্রবাসী' হইতে ১৩২৯ আষঢ়ের
'নারায়ণ'-এ সংকলিত হইয়াছিল। নজরুল-গীতিকা'য় অন্তর্ভুক্ত এই গীতি-কবিতাটির ষষ্ঠ
স্তবকের শেষাংশের পাঠ নিম্নরূপ-
এই তো রে তাঁর আসার সময় ঐ রথ-ঘর্ঘর-
শোনা যায় ঐ রথ-ঘর্ঘর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
'বিদ্রোহী'
১৩২৮ কার্তিকে ২য় বর্ষের ৩য় সংখ্যক 'মোসলেম ভারত'-এ বাহির হইয়াছিল। ১৩২৮ সালের
২২শে পৌষের সাপ্তাহিক 'বিজলী'তে এবং ১৩২৮ মাঘের 'প্রবাসী'তে উহা সংকলিত
হইয়াছিল। 'মোসলেম ভারতে' প্রকাশিত 'বিদ্রোহী'র ৯১-৯৪ সংখ্যক চরণগুলি ছিল
নিম্নরূপ–
তাই সে এমন কেশে বেশে
প্রলয় ব'য়েও আসছে হেসে-
মধুর হেসে!
ভেঙে
আবার গড়তে জানে সে-চির-সুন্দর!
'মোসলেম
ভারতে' প্রকাশিত 'বিদ্রোহী'তে "আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার" পংক্তিটির পূর্বে ছিল
এই পাঁচটি পংক্তি-
হাসি হা-হা হা-হা হি-হি হি-হি,
তাজি বোররাক
আর উচ্চৈঃশ্রবা বাহন আমার
হাঁকে চিঁ-হিঁ হিঁ হিঁ চিঁ-হিঁ হিঁ-হিঁ।
১৩৩০
আশ্বিনে কলিকাতার আর্য পাবলিশিং হাউস হইতে প্রকাশিত 'অগ্নিবীণা'র দ্বিতীয়
সংস্করণেও এই পাঁচটি পংক্তি ছিল; কিন্তু পরবর্তীকালে এই পংক্তিগুলি পরিত্যক্ত
হইয়াছে। 'বিদ্রোহী' পাঠে কবি গোলাম মোস্তফা ১৩২৮ মাঘের 'সওগাতে' লেখেন
'নিয়ন্ত্রিত'। ১৩২৯ বৈশাখের 'সাধনা'–য়
'বিদ্রোহী' ও 'নিয়ন্ত্রিত' পুনর্মুদ্রিত হইয়াছিল।
আমি বিবসন, আজ ধরাতল নভ ছেয়েছে আমারি জটাজাল।
আমি ধন্য। আমি ধন্য!!
আমি মুক্ত, আমি সত্য, আমি বীর, বিদ্রোহী সৈন্য!
আমি ধন্য! আমি ধন্য!!
'রক্তাম্বরধারিণী মা' ১৩২৯ বঙ্গাব্দের ৫ই ভাদ্র তারিখে ১ম বর্ষের ৪র্থ সংখ্যক
'ধুমকেতু'তে প্রকাশিত হইয়াছিল।
'আগমনী'
১৩২৮ আশ্বিনের 'উপাসনা'য় প্রকাশিত হইয়াছিল। এ সম্পর্কে 'উপাসনা'- সম্পাদক
শ্রীসাবিত্রীপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায় লিখিয়াছেন
–কবিতা, কার্তিক-পৌষ, ১৩৫১]
'ধূমকেতু'
শীর্ষক কবিতাটি ১৩২৯ বঙ্গাব্দের ২৬শে শ্রাবণ মুতাবিক ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ১১ই
আগস্ট শুক্রবার ১ম বর্ষের ১ম সংখ্যক অর্ধ-সাপ্তাহিক 'ধূমকেতু' [সারথি ও
স্বত্ত্বাধিকারী: কাজী নজরুল ইসলাম] পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছিল।
'কামাল
পাশা' ১৩২৮ কার্তিকের 'মোসলেম ভারতে' বাহির হইয়াছিল। ১৩২৯ বঙ্গাব্দের ২৬শে ভাদ্র
তারিখের 'ধূমকেতু'তে কবিতাটির কিয়দংশ সংকলিত হইয়াছিল।
'শাত্-ইল্-আরব' ছাপা হইয়াছিল ১৩২৭ জ্যৈষ্ঠের 'মোসলেম ভারতে'। সে সংখ্যার
Frontispiece–রূপে
শোভিত হইয়াছিল 'শাতিল-আরবে'র চিত্র; তাহার নীচে
Caption–রূপে
ছাপা হইয়াছিল কবিতাটির প্রথম দুই চরণ। 'একজন সৈনিক' লেখেন এই 'চিত্র-পরিচয়'–
সাতিল্-আরব! সাতিল্-আরব! পূত যুগে যুগে তোমার তীর।
শহীদের
লোহু দিলীরের খুন ঢেলেছে যেখানে আরব-বীর।"
"বৃথা
ত্রাসে প্রলয়ের সিন্ধু ও দেয়া-ভার,
ঐ হলো
পুণ্যের যাত্রীরা খেয়া-পার।"
'খেয়া-পারের
তরণী' সম্বন্ধে ১৩২৭ ভাদ্রের 'মোসলেম ভারতে' কবি মোহিতলাল মজুমদার 'একখানি
পত্রে' লেখেন–
... "খেয়া-পারের তরণী" শীর্যক কবিতায়
ছন্দ সর্বত্র মূলত এক হইলেও মাত্রাবিন্যাস ও যতির বৈচিত্র্য প্রত্যেক শ্লোকে ভাবানুযায়ী সুর সৃষ্টি করিয়াছে; ছন্দকে রক্ষা
করিয়া তাহার মধ্যে এই যে একটি অবলীলা, স্বাধীন স্ফূর্তি, অবাধ আবেগ, কবি কোথাও
তাহাকে হারাইয়া বসেন নাই; ছন্দ যেন ভাবের দাসত্ব করিতেছে–কোনখানে আপন অধিকারের
সীমা লঙ্ঘন করে নাই– এই প্রকৃত কবি-শক্তিই পাঠককে মুগ্ধ করে। কবিতাটি আবৃত্তি
করিলেই বোঝা যায় যে, শব্দ ও অর্থগত ভাবের সুর কোনখানে ছন্দের বাঁধনে ব্যহত হয়
নাই। বিস্ময়, ভয়, ভক্তি, সাহস, অটল বিশ্বাস এবং সর্বোপরি প্রথম হইতে শেষ
পর্যন্ত একটা ভীষণ-গম্ভীর অতিপ্রাকৃত কল্পনার সুর, শব্দবিন্যাস ও ছন্দঝঙ্কারে
মূর্তি ধরিয়া ফুটিয়া উঠিয়াছে। আমি কেবল একটি মাত্র শ্লোক উদ্ধৃত করিব,–
আবুবকর
উস্মান উমর আলী-হাইদর
দাঁড়ী
যে এ তরণীর, নাই ওরে নাই ডর!
কাণ্ডারী এ তরীর পাকা মাঝি মাল্লা,
দাঁড়ী-মুখে সারি-গান–
'লা-শরীক আল্লাহ্!'
'কোরবানী
ছাপা হইয়াছিল ১৩২৭ ভাদ্রের 'মোসলেম ভারতে'। এ কবিতাটি সম্পর্কে অধ্যক্ষ
ইব্রাহীম খান লিখিয়াছেন:
"তরীকুল
আলম ব'লে একজন ডেপুটি-ম্যাজিস্ট্রেট 'কোরবানী'কে বর্বর-যুগের চিহ্ন ব'লে একটি
প্রবন্ধ লেখেন। এ প্রবন্ধ প'ড়ে নজরুল ইসলামের কলম গর্জে উঠল। নব্য তুর্কীরা তখন
স্বাধীনতার জন্য অকাতরে জান কোরবান করছিল। সেই ব্যাপারের সাথে মিলিয়ে তিনি
লিখলেন:
ওরে
হত্যা নয়, আজ সত্যাগ্রহ, শক্তির উদ্বোধন!"
"আজ এই
আনন্দ-উৎসবে আনন্দের চেয়ে বিষাদের ভাগই মনের উপর চাপ দিচ্ছে বেশী করে। যেদিকে
তাকাচ্ছি, সেই দিকে কেবল নিষ্ঠুরতার অভিনয়। অতীত এবং বর্তমানের ইতিহাস চোখের
সামনে অগণিত জীবের রক্তে ভিজে লাল হয়ে দেখা দিচ্ছে। এই লাল রঙ্ আকাশে-বাতাসে
চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে–
যেন সমস্ত প্রকৃতি তার রক্তনেত্রের ক্রুদ্ধদৃষ্টিতে
পৃথিবী বিভীষিকা ক'রে তুলেছে। প্রাণ একেবারে হাঁপিয়ে উঠছে।"
“শুধু
ঘন ঘন যুক্তাক্ষর-বিন্যাসই নয়– পর্বান্ত হসন্তবর্ণ যতদূর সম্ভব বর্জন করিতে
পারিলে, স্বর-প্রসারণের কোন অবকাশ আর থাকে না বলিয়া, এই বাংলা ছন্দেও প্রবল
আঘাতমূলক ছন্দস্পন্দের সৃষ্টি করা যায়, যথা–
ওরে
হত্যা নয় আজ সত্যাগ্রহ শক্তির উদ্বোধন
ওরে
র্হত্যা-র্নয়াজ ০ র্সত্যাগ্রহ ০ শক্তি-র্রুদ্ধো ০ র্ধন
ইহার কোনখানে স্বর-প্রসারণের অবকাশ মাত্র নাই।"
–বাংলা কবিতার ছন্দ, ২৮-২৯ পৃ:।]
দেখো মরু-সূর্যে এ খুন যেন শোষে না!'
লোহু
লাও, নাহি চাই নিষ্কাম বিশ্রাম।
পুনশ্চ
আমি
যুবরাজ, মম রাজবেশে ম্লান গৈরিক।
প্রথম
সংস্করণের বিভিন্ন কবিতার কয়েকটি শব্দের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় চতুর্থ
সংস্করণে। 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় “এই তো রে তার আসার সময় ঐ রথ-ঘর্ঘর” চরণটির পরে
একটি অতিরিক্ত চরণ পাওয়া যায়: “শোনা যায় ঐ রথ-ঘর্ঘর”।
মোসলেম
ভারত পত্রিকায় প্রকাশকালে এবং সংস্করণে 'সাত-ইল-আরব' কবিতার শিরোনামে ও পাঠে
সাত-ইল-আরব বা সাতিল আরব মুদ্রিত হয় দন্ত্য স দিয়ে। চতুর্থ সংস্করণে সেখানে
তালব্য শ ব্যবহৃত হয়েছে: শাত-ইল-আরব বা শাতিল আরব।
"খেয়াপারের তরণী'-প্রসঙ্গে মুজফ্ফর আহ্মদ-প্রদত্ত নিম্নলিখিত তথ্য
উদ্ধৃতিযোগ্য:
কি কারণে
জানিনা, আফ্জালুল হক সাহেব ঢাকা গিয়েছিলেন। তিনি তাঁর 'মোসলেম ভারতে' ছাপানোর
উদ্দেশ্যে ঢাকার বেগম মুহম্মদ আজম সাহেবার (খান বাহাদুর মুহম্মদ আজমের স্ত্রী)
আঁকা একখানা নৌকার ছবি সঙ্গে নিয়ে আসেন। পত্রিকায় ছাপানোর আগে ছবিখানার একটি
সংক্ষিপ্ত পরিচয় লিখিত হওয়ার প্রয়োজন ছিল। তার জন্যে ছবিখানা একদিন বিকালবেলা
নজরুল ইসলামের নিকটে আফ্জালুল হক সাহেব রেখে গেলেন। তিনি আশা করেছিলেন যে,
নজরুল ইসলাম গদ্যে এই আধ্যাত্মিক ছবিখানার একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় লিখে দিবে।
কিন্তু নজরুল তা করল না। সে রাত্রিবেলা প্রথমে মনোযোগ সহকারে ছবিখানা অধ্যয়ন
করল এবং তারপরে লিখল এই ছবির বিষয়ে তার বিখ্যাত কবিতা "খেয়াপারের তরণী"।
(কাজী নজরুল
ইসলাম: স্মৃতিকথা, দ্বিতীয় বাংলাদেশ সংস্করণ, ঢাকা ১৯৭৬, পৃ ৫৩-৫৪।)
নজরুল-রচনাবলীর জন্মশতবর্ষ সংস্করণে অগ্নি-বীণা কাব্যের তৃতীয় মুদ্রণ (নূর লাইব্রেরী
সংস্করণ), অগ্রহায়ণ ১৩৩১, অনুসরণ করা হয়েছে। প্রকাশক মঈনউদ্দীন হোসায়ন বি, এ,
নূর লাইব্রেরী, ১০ সারেঙ্গ লেন, তালতলা, কলিকাতা, বাসন্তি প্রেস ৭১ নং নেবুতলা
লেন, কলিকাতা, এন মুখার্জী কর্তৃক মুদ্রিত।
আবদুল
কাদির সম্পাদিত নজরুল-রচনাবলী প্রথম খণ্ড প্রথম সংস্করণে (২৫ মে ১৯৬৬/ জুন
১৯৮৩) 'বিদ্রোহী' কবিতার প্রতিক্রিয়ায় রচিত কবি গোলাম মোস্তফার 'নিয়ন্ত্রিত'
এবং সজনীকান্ত দাসের প্যারডি 'ব্যাঙ' গ্রন্থ-পরিচয় অংশে ছিল না, কবিতা দুটি
নজরুল-রচনাবলীর ১৯৯৩ সালের নতুন সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। যেহেতু আবদুল
কাদির সম্পাদিত নজরুল-রচনাবলীর প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণে কবিতা দুটি ছিল না,
সেই কারণে বর্তমান সংস্করণে কবিতা দুটি বাদ দেওয়া হলো। প্রসঙ্গক্রমে
উল্লেখযোগ্য যে, 'বিদ্রোহী' কবিতা প্রথম মুদ্রিত হয় মাসিক 'মোসলেম ভারত'
পত্রিকার কার্তিক ১৩২৮ সংখ্যায়। 'মোসলেম ভারত'নজরুল-জন্মশতবর্ষ
সংস্করণএর এই সংখ্যার সমালোচনা
সাপ্তাহিক 'বিজলী' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ২২শে পৌষ ১৩২৮ সংখ্যায় 'মোসলেম
ভারত'-এর সমালোচনা সূত্রে 'বিজলী' পত্রিকায় 'বিদ্রোহী' কবিতাটি পুনর্মূদ্রিত
হয়।
নজরুল-রচনাবলী জন্মশতবর্ষ সংস্করণে 'অগ্নি-বীণা' কাব্যের প্রথম সংস্করণে
মূদ্রিত দুষ্প্রাপ্য মুখবন্ধটি সংযোজিত হলো।