বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: এলো ঐ বনান্তে পাগল বসন্ত
এলো ঐ বনান্তে পাগল বসন্ত
বনে বনে মনে মনে রঙ সে ছড়ায় রে চঞ্চল তরুণ দুরন্ত॥
বাঁশিতে বাজায় সে বিধুর
পরজ-বসন্তের সুর
পাণ্ডু কপোলে জাগে রঙ নব অনুরাগে রাঙা হ'ল ধূসর দিগন্ত॥
কিশলয় পর্ণে অশান্ত
ওড়ে তার অঞ্চল প্রান্ত
পলাশ কলিতে তার ফুল ধনু লঘু ভার ফুলে ফুলে হাসি অফুরন্ত।
এলোমেলো দখিনা মলয় রে
প্রলাপ বকিছে বনময় রে
অকারণ মন-মাঝে বিরহের বেণু বাজে জেগে ওঠে বেদনা ঘুমন্ত॥
- ভাবসন্ধান: এটি একটি প্রকৃতি পর্যায়ের বসন্ত ঋতুর গান। বসন্তের আগমনে
প্রকৃতিতে যে বর্ণাঢ্য, যৌবন-চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে, তারই চিত্ররূপ ফুটে উঠেছে এই
গানে। কবির চোখে বসন্তের আগমন যেন বন-বনান্তে ছড়িয়ে পড়া দুরন্ত পাগালামি।
বসন্তের আগমনে পুষ্পপল্লবে ছড়িয়ে পড়া রঙের খেলা বনে বনে ছড়িয়ে পড়ে এবং তার আবেশ
মোহিত হয় জনচিত্ত।
বসন্তের আগমনে শিল্পীর বাঁশীতে পরজ-বসন্ত রাগের রঙ ছড়ায়, গ্রীষ্মের তাপদগ্ধ
পাণ্ডুর প্রকৃতিতে জাগে নবযৌবনের অনুরাগের রঙ। ধূসর প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে সে
রঙের ছোঁয়া। নিষ্প্রভ বৃক্ষ শাখায় নবীন পাতা যেন তারুণ্যের স্পর্শে অশান্ত হয়ে
ওঠে। বসন্ত বায়ু-হিল্লোলে পল্লবশাখা উত্তরীয়ের অঞ্চল প্রান্তের মতো আন্দোলিত হয়।
বসন্তের আগমনে পলাশ ফুলের অফুরন্ত রঙিন হাসির ছটা ছড়িয়ে পড়ে বনে বনে। বসন্তের
এলোমেলো দখিনা বাতাস আন্দোলিত করে বনরাজিকে। কবির কাছে মনে হয়, যেন সে দখিনা
বাতাস যেন অর্থহীন অবিরাম কথা কয়ে চলে বনে বনে। এরই ভিতরে কবির মনে জেগে ওঠে
মানসপ্রিয়ার সাথে মিলনে আকাক্ষা। জেগে ওঠে কাছে না পাওয়ার বিরহ-কাতরতা। মনের
গভীরে ঘুমিয়ে থাকা প্রণয় জেগে ওঠে না পাওয়ার বিরহবেদনা। বসন্তের ছোঁওয়ায় কবির
মন হয়ে ওঠে প্রণয় ব্যাকুলত।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে
সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
১৩৪১ বঙ্গাব্দের আশ্বিন (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ) মাসে গানটি
গানের মালা
গ্রন্থের প্রথম সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত হয়ে
প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৫ বৎসর ৪ মাস।
- রেকর্ড:
এইচএমভি
[ফেব্রুয়ারি ১৯৩৫ (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৪১)। এন ৭৩৩২। শিল্পী:
হরিমতী। নাটিকা: বাসন্তিকা]
[শ্রবণ নমুনা]
- বেতার:
বাসন্তীকুঞ্জ
[সঙ্গীতানুষ্ঠান] কলকাতা বেতার কেন্দ্র। [২৭শে এপ্রিল ১৯৪০ (শনিবার ১৪ বৈশাখ
১৩৪৭)] সান্ধ্য অনুষ্ঠান। ৭.১৫-৭.৪৪।
[সূত্র:
বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ, ৮ম সংখ্যা। [১৬ এপ্রিল ১৯৪০] পৃষ্ঠা: ৪৩৩
- গ্রন্থ:
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২]। গান সংখ্যা ৩৭৩]
- গানের মালা প্রথম সংস্করণ
[আশ্বিন ১৩৪১ বঙ্গাব্দ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ)।
গানের মালা -৭৭। পরজ-বসন্ত-তেতালা]
- নজরুল রচনাবলী।জন্মশতবর্ষ সংকলন ষষ্ঠ খণ্ড। বাংলা একাডেমী, ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯, জুন ২০১২। গানের মালা।
৭৭। পরজ-বসন্ত-তেতালা। পৃষ্ঠা ২৩৯]
-
'বাসন্তিকা'
নাটিকা।
- অপ্রকাশিত
নজরুল [১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে আব্দুল আজিজ সম্পাদিত]।
- নজরুল রচনাবলী।জন্মশতবর্ষ সংকলন ষষ্ঠ খণ্ড। বাংলা একাডেমী, ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯, জুন ২০১২।
প্রথম দৃশ্য। ভ্রমর, মধু-মক্ষী, প্রজাপতি, দোয়েল, শ্যামা প্রভৃতি বৈতালিকদলের
সমবেত গান। পৃষ্ঠা: ৩৫৫।
[বাসন্তিকার মুদ্রিত পাঠ]
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
সুধীন দাশ।
[নজরুল-সঙ্গীত
স্বরলিপি, ত্রয়োদশ খণ্ড।
প্রথম সংস্করণ। নজরুল ইন্সটিটিউট জ্যৈষ্ঠ ১৪০১/মে ১৯৯৪। প্রথম গান। চতুর্থ গান]
[নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (ঋতু, বসন্ত)
- সুরাঙ্গ:
খেয়ালাঙ্গ
- রাগ: পরজ-বসন্ত [পরজ
ও
বসন্ত রাগের মিশ্র রূপ]
ভাঙা গান:
- মূল গান: ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে
[রবীন্দ্রসঙ্গীত। গীতবিতান (বিশ্বভারতী, কার্তিক ১৪১২)।
প্রকৃতি ২০৭। (উপ-বিভাগ : বসন্ত ২০)পর্যায়ের সংখ্যক গান।
- তাল:
ত্রিতাল
- গ্রহস্বর: র্সা