বিষয়: রবীন্দ্রসঙ্গীত।
গান সংখ্যা:
শিরোনাম: 
তোমার  সুরের ধারা ঝরে যেথায় তারি পারে
পাঠ ও পাঠভেদ:
তোমার  সুরের ধারা ঝরে যেথায় তারি পারে
দেবে কি গো বাসা আমায় একটি ধারে?।
               
      আমি  শুনব ধ্বনি কানে,
               
      আমি  ভরব ধ্বনি প্রাণে,
সেই ধ্বনিতে চিত্তবীণায় তার বাঁধিব বারে বারে॥
আমার  নীরব বেলা সেই তোমারি সুরে সুরে
ফুলের ভিতর মধুর মতো উঠবে পুরে।
                 
      আমার  দিন ফুরাবে যবে,
                 
      যখন    রাত্রি আঁধার হবে,
হৃদয়ে মোর গানের তারা উঠবে ফুটে সারে সারে॥
পাণ্ডুলিপির পাঠ: রবীন্দ্রনাথের পাণ্ডুলিপি অনুসরণ করা সম্ভব হয় নি।
পাঠভেদ: পাওয়া যায় নি।
	ভাবসন্ধান: "গান" 
	উপবিভাগের এই গানটিতে রয়েছে, সুরের ধারা-প্রবাহের তীরে বসতি করে সমস্ত প্রাণ 
	সুরে ভরে নেবার জন্য মিনতি। সুরে-বাণীতে একই কথা ফিরে ফিরে উচ্চারণ করা-তে 
	লোকসুরের গানটিতে কীর্তনের ভাববিহ্বলতার গুণ সঞ্চারিত হয়েছে। তাতে সামান্য 
	বক্তব্য আশ্চর্য নিবিড়তা পেয়েছে। সুর, ধ্বনি আর গানের প্রসঙ্গ কথায়-সুরে 
	বারংবার আবৃত্ত হচ্ছে। একাধিকবার বলা কিছু বাক্যাংশ উল্লেখ করা যায়, যেমন,
	'আমি শুনব ধ্বনি' তিনবার,
	'আমি ভরব ধ্বনি' দুবার,
	'আমার দিন ফুরাবে' 
	তিনবার, 'রাত্রি আঁধার' 
	আর 'আমার নীরব বেলা' 
	দুবার। এই আবৃত্ত উচ্চারণ কীর্তনের আখরের আবহ তৈরি করেছে।
	
	গানটির স্থায়ী, অন্তরা আর আভোগে আছে শুদ্ধস্বরের প্রয়োগ। সঞ্চারীতে অনুভূতির 
	আকর্ষণে দুটি বিকৃত স্বরের আগম বক্তব্যের আবেগকে মর্মস্পর্শী করে তুলল। “ফুলের 
	ভিতর মধুর মতো উঠবে পুরে” বলতে কোমল ধৈবত আর কোমল নিখাদের বিশেষ সমাবেশ:
 
| । | মা | পা | -া | । | পা | পা | -দা | । | দপা | -ণা | ণা | । | ণদা | পা | -া | । | 
| ম | ধু | র | ম | তো | ০ | উ | ঠ্ | বে | পু | রে | ০ | 
এই বিন্যাসে বিবরণটি বড় আন্তরিকতাপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তথ্যানুসন্ধান
		ক. রচনাকাল ও স্থান:
		
		শান্তিনিকেতন পত্রিকার 'বৈশাখ ১৩২৯' সংখ্যায় গানটি প্রকাশিত হয়েছিল। গানটির 
	শেষে তারিখ উল্লেখ ছিল, 'ফাল্গুন পূর্ণিমা ১৩২৮'। 
		
		
		স্বরবিতান পঞ্চদশ (১৫,
		নবগীতিকা ২য় খণ্ড) খণ্ডের (চৈত্র ১৪১৩) রচনার তারিখ উল্লেখ আছে 
	'ফাল্গুন পূর্ণিমা ১৩২৮'। উল্লেখ্য, 
		
		১৩২৮ সালের 
	ফাল্গুন মাসের ১৩ থেকে ২৯ তারিখের মধ্যে রবীন্দ্র মোট ৬টি গান রচনা করেন। 
	প্রশান্তকুমার পাল তাঁর রচিত 'রবিজীবনী' নবম খণ্ডে 
		 [আনন্দ 
	পাবলিশার্স, ডিসেম্বর ২০০৫, পৃষ্ঠা ১৭৪]
		এই গানটির তারিখ নির্দেশ 
	করেছেন '২৯  
		[13 Mar] ফাল্গুন পূর্ণিমা ১৩২৮'। এই 
	সময় রবীন্দ্রনাথের বয়স ছিল 
৬০ বৎসর ১২ মাস।
		
প্রসঙ্গত
	রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের জ্যেষ্ঠপুত্র কেদারনাথের সাথে নীলরতন সরকারের কন্যা 
	অরুন্ধতীর বিবাহ সম্পন্ন হয় ১৩২৮ বঙ্গাব্দের ১৬ই ফাল্গুন তারিখে। এই বিবাহে যোগদানের জন্য তাঁর 
	কলকাতা যাওয়ার কথা ছিল। রবীন্দ্রনাথ এই বিবাহে উপস্থিত হতে না পেরে, ২৬শে 
	ফাল্গুন তিনি অরুন্ধতীকে লেখা চিঠিতে জানান যে-  
		
        '...আজকাল রেলপথের বিঘ্ন ঘটাতে তোমাদের 
		বিবাহে উপস্থিত থাকতে পারি নি। ... এখানে সোমবারে ফাল্গুন পূর্ণিমায় 
		সন্ধ্যার সময় গান বাজনা হবে, যদি তোমরা কোনো সুযোগে আস্তে পার তাহলে খুব 
		খুসি হব―
		অনেক নতুন গান শুন্তে 
		পাবে। কিছু নতুন গান এইবার তোমার সঞ্চয় করা উচিত হবে। ...।' [চিঠিপত্র ১২ 
		খণ্ড, বিশ্বভারতী, ২৫ বৈশাখ, ১৩৯৩ পৃষ্ঠা: ২৩৬]
এই চিঠি অনুসারে ধারণা করা যায়, 
		২৯শে ফাল্গুনে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতন ছিলেন 
	এবং সেখানেই এই গানটি রচনা করেছিলেন।
        
		[দেখুন: 
		
		৬০ 
		বৎসর অতিক্রান্ত বয়সে রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
		 
		
 
খ. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
সুর ও
				
				স্বরবিতান  
পঞ্চদশ খণ্ডে (চৈত্র ১৪১৩, পৃষ্ঠা ৩৯-৪১) 
গৃহীত স্বরলিপিতে রাগ-তালের উল্লেখ নেই।
				উক্ত স্বরলিপিটি ৩।৩ 
মাত্রা ছন্দে
				
				'দাদরা'
				
				তালে নিবদ্ধ। 
				
			
				
				 [স্বরলিপির 
				নমুনা]
            
				
				 
রাগ: কাফি-কানাড়া । তাল: দাদরা [রবীন্দ্রসংগীত : রাগ-সুর নির্দেশিকা। সুধীর চন্দ। (প্যাপিরাস, ডিসেম্বর
বাউল, তাল দাদরা। [রাগরাগিণীর এলাকায় রবীন্দ্রসংগীত, প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী, জুলাই ২০০১], পৃষ্ঠা: ১০০।
সুরাঙ্গ:
			
			
			কীর্তনাঙ্গ
			
			[রবীন্দ্রসংগীতের ক্রমবিকাশ ও বিবর্তন। ডঃ দেবজ্যোতি দত্ত 
মজুমদার (সাহিত্যলোক, ডিসেম্বর ১৯৭৮)]
                
[কীর্তনাঙ্গের 
রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
বাউল, তাল দাদরা। [রাগরাগিণীর এলাকায় রবীন্দ্রসংগীত, প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী, জুলাই ২০০১], পৃষ্ঠা: ১০০।
গ্রহস্বর: ধা।