বিষয়:
রবীন্দ্রসঙ্গীত।
গান সংখ্যা:
শিরোনাম:
মোর হৃদয়ের গোপন বিজন ঘরে
পাঠ ও পাঠভেদ:
মোর হৃদয়ের গোপন বিজন ঘরে
একেলা রয়েছ নীরব শয়ন-’পরে—
প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো॥
রুদ্ধ দ্বারের বাহিরে দাঁড়ায়ে আমি
আর কতকাল এমনে কাটিবে স্বামী—
প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো॥
রজনীর তারা উঠেছে গগন ছেয়ে,
আছে সবে মোর বাতায়ন-পানে চেয়ে—
প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো।
জীবনে আমার সঙ্গীত দাও আনি,
নীরব রেখো না তোমার বীণার বাণী—
প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো॥
মিলাব নয়ন তব নয়নের সাথে,
মিলাব এ হাত তব দক্ষিণহাতে—
প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো।
হৃদয়্পাত্র সুধায় পূর্ণ হবে,
তিমির কাঁপিবে গভীর আলোর রবে—
প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো॥
পাণ্ডুলিপির পাঠ: [ RBVBMS 229] [নমুনা]
পাঠভেদ: পাঠভেদ পাওয়া যায় নি।
ভাবসন্ধান: কবির অন্তর্গত সত্তা যেন তাঁর হৃদয়ের নিভৃত-গোপন কোনো প্রকোষ্ঠে নিদ্রাগত। আর, তাঁর ব্যক্তিসত্তা যেন বদ্ধ কপাটের বাইরে থেকে অন্তর্গত জনের নিদ্রাভঙ্গের অপেক্ষায় রয়েছে। কবি তাঁকে জাগ্রত হবার ব্যাকুল আহ্বান জানাচ্ছেন বারবার করে। আকাশ-ভরা তারাও যেন কবির বাতায়নের দিকে চেয়ে প্রতীক্ষা করছে। আমরা জানি, স্রষ্টা কিংবা ধরা যাক অন্তর্গত সত্তা, সচরাচর কবির হৃদয়বীণায় সুর বাজিয়ে তোলেন। কিন্তু এ-গানে বীণাটি নীরব। তাই, কবির জীবন গীতহারা হয়ে রয়েছে। তাইতে আর্ত আকুতি—‘প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো’। ‘তাঁর’ সঙ্গে মিলনের আশাতে মানবজীবন-তরী ভেসে চলে। চোখে চোখে মিলন হবে, ‘তাঁর’ দাক্ষিণ্যপূর্ণ হাতে কবি আপন হাতটি মিলাবেন বলে ‘তাঁকে’ জাগ্রত করবার এমন মিনতি। পরম-কাঙ্ক্ষিত এ মিলনে হৃদয় অমৃত-রসে ভরে উঠবে, পরিবেশের অন্ধকার কম্পিত হয়ে গভীরতর আলোর বার্তা জানাবে। তাই, তাঁর জাগরণের জন্য আহ্বান ফিরে ফিরে ধ্বনিত হয়ে চলে পুরো গানখানিতে।
তথ্যানুসন্ধান
ক. রচনাকাল ও স্থান:
রবীন্দ্রনাথের
পাণ্ডুলিপি
RBVBMS 229-তে
লিখিত এই গানের শেষে সময় ও স্থান লেখা আছে-
'৮ই আশ্বিন/সুরুল/প্রভাতে'।
উল্লেখ্য, ১৩২১ বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসে
রবীন্দ্রনাথের বড় ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুরুলের কুঠি বাড়িতে কৃষি-গবেষণার
জন্য বসবাস শুরু করেছিলেন। এই সময় রবীন্দ্রনাথ প্রতিদিনই গরুর গাড়িতে সকাল
বেলায় শান্তিনিকেতন থেকে সুরুল যেতেন এবং বিকেলে ফিরে আসতেন। রবীন্দ্রনাথের
এই যাতায়াত শুরু হয়েছিল ৮ই ভাদ্র থেকে এবং শেষ হয়েছিল
২২শে
আশ্বিন তারিখে রবীন্দ্রনাথ বুদ্ধগয়া যাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত।
রবীন্দ্রনাথের এই যাতায়াত
শুরু হয়েছিল ৮ই ভাদ্র থেকে এবং শেষ হয়েছিল
২২শে
আশ্বিন তারিখে রবীন্দ্রনাথ বুদ্ধগয়া যাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত।
তাঁর এই আসা-যাওয়ার ভিতরে ২০শে
আশ্বিন পর্যন্ত ৫৭টি গান রচনা করেছিলেন।
এর ভিতরে এই গানটি তিনি
৮ আশ্বিন [প্রভাত, শুক্রবার, ২৫
সেপ্টেম্বর]
সুরুল-এ রচনা করেছিলেন। এই সময় রবীন্দ্রনাথের বয়স ছিল ৫৩ বৎসর ৫ মাস।
[৫৩ বৎসর
অতিক্রান্ত বয়সে রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
খ. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
গ্রন্থ:
কাব্যগ্রন্থ, নবম খণ্ড। গীতালি গান: ৫০। (ইন্ডিয়ান প্রেস, ১৩২৩ বঙ্গাব্দ)। পৃষ্ঠা: ৪৭৪। [নমুনা]
গীতবিতান
স্বরবিতান ত্রয়শ্চত্বারিংশ (৪৩) খণ্ডের (মাঘ ১৪১২) ২০ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৫৮-৬১।
পত্রিকা:
আনন্দ-সঙ্গীত পত্রিকা (শ্রাবণ ১৩২৩ বঙ্গাব্দ)। ইন্দিরাদেবী-কৃত স্বরলিপি-সহ মুদ্রিত হয়েছিল।
তত্ত্ববোধিনী [ফাল্গুন ১৮৩৬ শকাব্দ, ১৩২১ বঙ্গাব্দ। পঞ্চাশীতিতম সাম্বৎসরিক ব্রহ্মোৎসবের সায়ংকালীন অধিবেশনের ষষ্ঠ গান। পৃষ্ঠা ১৯৪]
পরিবেশনা:
সোমবার,
১১ মাঘ ১৩২১ বঙ্গাব্দ [২৫ জানুয়ারি ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দ]-এ পঞ্চাশীতিতম (৮৫) সাংবৎসরিক
মাঘোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই মাঘোৎসব উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথের ১৬টি গান পরিবেশিত হয়েছিল।
এর ভিতরে প্রাতঃকালীন অধিবেশনে পরিবেশিত হয়েছিল ৬টি গান এবং সায়ংকালীন অধিবেশনে
১০টি গান পরিবেশিত হয়েছিল। এই গানটি পরিবেশিত হয়েছিল
সায়ংকালীন অধিবেশনে।
[মাঘোৎসব-৮৫'তে
পরিবেশিত গানের তালিকা]
প্রকাশের
কালানুক্রম:
১৩২১ বঙ্গাব্দের ১১ই মাঘ,
পঞ্চাশীতিতম (৮৫) সাংবৎসরিক মাঘোৎসবে গানটি পরিবেশিত হয়েছিল। এরপর
তত্ত্ববোধিনী
পত্রিকার
এই বৎসরে প্রকাশিত 'গীতালি'-তে গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৩২৩ বঙ্গাব্দে গানটি
কাব্যগ্রন্থ,
নবম খণ্ডের 'গীতালি' অংশে গৃহীত হয়েছিল।
ইন্দিরাদেবী-কৃত স্বরলিপি-সহ এই গানটি
আনন্দ-সঙ্গীত পত্রিকা
'শ্রাবণ ১৩২৩ বঙ্গাব্দ' সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
১৩৩৮ বঙ্গাব্দের আশ্বিন
মাসে প্রকাশিত গীতবিতানের দ্বিতীয় খণ্ডের প্রথম
সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৩৪৮
খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত গীতবিতানের প্রথম খণ্ডের দ্বিতীয় সংস্করণে এই গানটি
গৃহীত হয় পূজা পর্যায়ে। ১৩৮০ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত গীতবিতানের অখণ্ড সংস্করণে
পূজা পর্যায়ের ৩৯ সংখ্যক গান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।