সীতাকুণ্ড উপজেলা
বাংলাদেশের
চট্টগ্রাম বিভাগের সদর জেলা-
চট্টগ্রাম জেলার
একটি উপজেলা।
এই উপজেলার অবস্থান উত্তর অক্ষাংশের ২৩°২৯' এবং
২৩°৪২' এর মধ্যে ৯০°৫৯' এবং ৯১°০৫' দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। এর উত্তরে
মীরসরাই উপজেলা,
দক্ষিণাংশে পাহাড়তলী (সিটি গেইট), পশ্চিমে সন্দ্বীপ চ্যানেল এবং পূর্বে
হাটহাজারী উপজেলা। এই জেলার সদর
থানা থেকে চট্টগ্রামের দুরত্ব ৩৭ কি.মি এবং ঢাকার দুরত্ব ২২৭ কি.মি ।
সীতাকুণ্ডের নামকরণের
নানা ধরনের লোক গল্প প্রচলিত আছে। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের একাংশ মনে করেন যে,-
রামায়ণে বর্ণনানুসারে জানা যায় পিতৃ আদেশে রামচন্দ্র সীতা এবং তাঁর ভাই লক্ষ্মণকে
সাথে নিয়ে বনবাসী হন। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী মনে করেন যে, বনবাসী রাম
এখানে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন। উল্লেখ্য, এখানকার শম্ভুনাথ মন্দিরের পাদদেশে
রামকুণ্ড, লক্ষ্মণকুণ্ড এবং সীতাকুণ্ড নামে তিনটি কুণ্ড আছে। সেই সাথে এখানে একটি
সীতার নামে একটি মন্দিরও আছে। প্রাচীন জনগোষ্ঠীর পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে ওই পাহাড়টি
সীতাকুণ্ড নামে অভিহিত হয়। কালক্রমে ওই পাহাড়সংলগ্ন জনপদ সীতাকুণ্ড নামে পরিচিতি
লাভ করে। এই সূত্রে এখানে প্রতি বৎসর শিবচতুর্দশী মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র
দক্ষ
রাজার যজ্ঞের সূত্রে সীতাকুণ্ড নামের ব্যাখ্যা করেন।
দক্ষ
কর্তৃক আয়োজিত এক যজ্ঞে
মহাদেব
নিন্দা করেন। এই সময়
মহাদেবের
নিন্দা পত্নী এবং দক্ষের কন্যা
সতী (দুর্গা-
পূর্বজন্মের নাম)
ওই যজ্ঞস্থানে উপস্থিত ছিলেন। সতী স্বামীর নিন্দা শুনে দেহত্যাগ করেন।
মহাদেব
এই সংবাদ পেয়ে দক্ষের যজ্ঞ পণ্ড করে দেন। এরপর
মহাদেব
সতীর দেহ নিয়ে তাণ্ডবনৃত্য শুরু করেন। এর ফলে পৃথিবী ধ্বংসের উপক্রম হলে, বিষ্ণু
তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহকে ৬৪টি খণ্ডে বিভক্ত করেন। এই সময় তাঁর
দক্ষিণ হস্তার্ধ্ব
সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে পতিত হয়। অনেকে মনে করেন এই সূত্রে এই স্থানের নাম
ছিল সতীকুণ্ড। কালক্রমে লোকমুখে তা সীতাকুণ্ড হয়ে যায়। এই কাহিনিটি হিন্দু
ধর্মাবলম্বীদের অনেকে মানেন না। কিন্তু সতীর পতিত দেহাংশ বিশ্বাসে চন্দ্রনাথ
পাহাড়কে
পীঠস্থান
হিসেবে মান্য করেন।
১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে
প্রশাসনিক সুবিধার জন্য সীতাকুণ্ডকে থানা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর ১৯৭৯
খ্রিষ্টাব্দে সীতাকুণ্ডকে উপজেলায় পরিণত করা হয়।