দক্ষ
হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র
১.
ঋগ্বেদ
এর মতে-
আদিত্যদের
একজন।
ঋগ্বেদের
২য় মণ্ডলের ২৭ সূক্তে ছয়জন
আদিত্য-এর
নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন
অংশ,
অর্যমা,
দক্ষ,
মিত্র ,
এবং
বরুণ।
কশ্যপের ঔরসে
অদিতির গর্ভে এঁর জন্ম
হয়েছিল।
২. হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি
মতে – প্রজাপতি বিশেষ। এঁর জন্ম এবং এঁর সন্তানাদি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত রয়েছে।
- ভাগবতের (প্রথম অধ্যায়) মতে
দক্ষ
ব্রহ্মার
মানসপুত্র। ব্রহ্মার অঙ্গুষ্ঠ থেকে জন্মেছিলেন বলে- এঁর নাম দক্ষ।
- মহাভারতের মতে–
ব্রহ্মা প্রথমে সাতটি পুত্রের সৃষ্টি করেন। এঁদের নাম ছিল-
মরীচি,
অত্রি,
অঙ্গিরা,
পুলস্ত্য,
পুলহ,
ক্রতু
ও
বশিষ্ঠ ।
এর ভিতরে– অত্রির বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন- প্রাচীনবর্হি। প্রাচীনবর্হির মোট দশজন পুত্র ছিল।
এঁরা প্রচেতা নামে পরিচিত।
এঁদের একমাত্র পুত্র ছিলেন দক্ষ। জনসমাজে ইনি 'ক' নামে পরিচিত ছিলেন।
[ মহাভারত। শান্তিপর্ব। অষ্টাধিকদ্বিশততম অধ্যায়। প্রজাপতিবিবরণ-সৃষ্টিবিস্তার। ]
কালিকা পুরাণ মতে- দক্ষ মহামায়াকে [দুর্গা] কন্যারূপে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা করেন। তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মহামায়া দক্ষকে ওই বর প্রদান করার পর, স্ত্রীসঙ্গ ছাড়াই অসংখ্য (সহস্র সহস্র) পুত্রের জন্ম দিলেন, কিন্তু নারদের পরামর্শের এঁরা সবাই পৃথিবী পর্যটন করতে লাগলেন। এরপর দক্ষ প্রজা উৎপাদনের জন্য বীরণের কন্যা অসিক্লীকে বিবাহ করেন। এঁরই গর্ভে প্রথম কন্যা রূপে মহামায়া [দুর্গা] জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
মার্কেণ্ডেয় পুরাণের মতে- দক্ষ স্বায়ম্ভুব মনু ও শতরূপা'র কন্যা প্রসূতিকে বিবাহ করেছিলেন। এঁদের কন্যা জন্মেছিল ২৪টি। এই চব্বিশটি কন্যার ১৩টির সাথে ধর্মের বিবাহ হয়। এই ১৩টি কন্যার নাম ছিল- শ্রদ্ধা, লক্ষ্মী, ধৃতি, তুষ্টি, পুষ্টি, ক্রিয়া, মেধা, বুদ্ধি, লজ্জা, বপু, শান্তি, সিদ্ধি ও কীর্তি। অবশিষ্ট ১১টি কন্যাকে ১০ জন ঋষি ও পিতৃগণের মধ্যে দান করেন। এই ১১টি কন্যার নাম হলো- খ্যাতি, সতী, সম্ভুতী, স্মৃতি, প্রীতি, ক্ষমা, সন্নতি, অনসূয়া, ঊর্জা, স্বাহা ও স্বধা। [সৃষ্টির কথা। মার্কেণ্ডেয় পুরাণ]
মহাভারতের মতে- দক্ষের
কদ্রু ও
বিনতা
নামক দুটি কন্যা ছিল। এদের বিবাহ করেছিলেন
কশ্যপ।
কশ্যপের
ঔরসে
কদ্রুর গর্ভে সহস্র সর্প জন্মগ্রহণ করেছিল। আর
বিনতার
গর্ভে জন্মগ্রহণ
করেছিল অরুণ ও
গরুড়
পক্ষী।
[মহাভারত। আদিপর্ব। ষোড়শ অধ্যায়]
মহাদেবের সাথে
সতীর বিবাহ হয়।
মহাদেব
দক্ষকে যথোচিত সম্মান প্রদর্শন করেন নি বিবেচনা করে ইনি ক্রমে ক্রমে
মহাদেবের
প্রতি বিরূপ হয়ে উঠেন।
সতীর বিবাহের এক বৎসর পর, দক্ষ এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করেন। এই যজ্ঞে দক্ষ মহাদেব ও
সতীকে নিমন্ত্রণ করলেন না।
সতী
নারদের মুখে এই যজ্ঞের কথা জানতে পেরে অযাচিতভাবে যজ্ঞে উপস্থিত হন। যজ্ঞস্থলে দক্ষ
মহাদেবের নিন্দা করলে-
সতী পতি নিন্দা সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ করেন।
সতীর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ক্রুদ্ধ
মহাদেব নিজের জটা ছিন্ন করলে, সেই জটা থেকে
বীরভদ্র নামক এক শক্তিশালী পুরুষের আবির্ভাব ঘটে। এরপর এই
বীরভদ্র মহাদেবের অন্যান্য অনুচরসহ দক্ষের যজ্ঞানুষ্ঠানে উপস্থিত হন। মহাদেবের
আদেশে তাঁর অনুচরেরা যজ্ঞানুষ্ঠান পণ্ড করে দেন এবং দক্ষের মুণ্ডুচ্ছেদ করেন। এরপর দক্ষের মৃত্যুতে আকুল হয়ে দক্ষপত্নী
অসিক্লী
ব্রহ্মার
শরণাপন্ন হন। ব্রহ্মার অনুরোধে মহাদেব দক্ষের ঘাড়ে একটি ছাগলের মুণ্ডু স্থাপন করেন। সেই থকেই দক্ষের নাম হয় অজমুখ।
এরপর জীবিত হয়ে দক্ষ মহাদেবের স্তব করেন।
মহাদেবের অভিশাপের কারণে
প্রচেতার ঔরসে মারিষার গর্ভে দক্ষ
দ্বিতীয়বার জন্মগ্রহণ করেন।
এই জন্মে এঁর সাতটি পুত্র জন্মগ্রহণ করে।
এই
পুত্ররা হলেন-
ক্রোধ,
তামস,
দম,
বিকৃত,
অঙ্গীরা,
কর্দম ও অশ্ব।