সুমেরীয় সভ্যতা
প্রাচীন মেসোপটেমিয়া দক্ষিণাঞ্চলে (বর্তমান ইরাক দক্ষিণাঞ্চল) ইউফ্রেটিস (ফোরাত) টাইগ্রিস (দজলা) নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলের গড়ে মানব-সভ্যতা বিশেষ।

এই অঞ্চলে মানুষের পদার্পণ সম্পর্কে দুটি মতবাদ আছে।

জিনোম পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে- এই অঞ্চলের মানুষের সাথে নাটুফিয়ান সভ্যতার মানুষ এবং প্রাক্-মৃৎপাত্র নির্মাণকারী মানুষের সাথে মিল রয়েছে। অন্যদিকে উত্তর আফ্রিকার মানুষের রয়েছে নাটুফিয়ান সভ্যতার মানুষের মিল রয়েছে। এই বিচারে বলা যায়, উত্তর আফ্রিকার মানুষ সবুজ সাহারা থেকে মধ্য-প্রাচ্যে প্রবেশ করেছিল। রয়েছে নাটুফিয়ান সভ্যতার মানুষের মিল রয়েছে। ১৫,০০০ থেকে ১১,৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে নাটুফিয়ান সভ্যতার প্রাথমিক অধ্যায়ের বিকাশ ঘটেছিল। ১১,৫০০ থেকে ৯,৫৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে নাটুফিয়ান সভ্যতা পূর্ণ রূপে বিকশিত হয়েছিল।

এই সভ্যতাকে বিবেচনা করা হয়- প্রাক্-প্রস্তরযুগ-সভ্যতা হিসেবে। সম্ভবত এরা ছিল বর্তমান প্যালেস্টাইন অঞ্চলের
জেরিকা সভ্যতার আদি মানবগোষ্ঠী। এই অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার সূত্রে জানা যায় জানা যায় যে, ১২,৫০০ থেকে ১০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে ভূমধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চলে একদল শিকারী মানবগোষ্ঠী বসবাস শুরু করেছিল। এর দক্ষিণে ছিল জুদাহ সাম্রাজ্য, মোয়াব সাম্রাজ্য এবং মৃত সাগর, পূর্বে ছিল আম্মান সাম্রাজ্য।  ৯৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে বরফযুগ শেষ হয়ে গেলে সেকালের প্যালেস্ট্যান অঞ্চল বেশ উষ্ণ হয়ে উঠেছিল।  ৯০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে  জেরিকো অঞ্চলে কিছু মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করেছিল। এর ভিতর দিয়ে জেরিকা সভ্যতার শুরু হয়েছিল। এদেরই একটি অংশ- মেসোপটেমিয়া দক্ষিণাঞ্চলে ইউফ্রেটিস (ফোরাত) টাইগ্রিস (দজলা) নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০০ অব্দের ভিতরে এই অঞ্চলটি হয়ে উঠেছিল এদের স্থায়ী বসবাসের স্থান।

পোড়ামাটির ফলকে লেখা সুমেরীয় বাণিজ্যিক দলিল

কালক্রমে এদের হাতে তৈরি  হয়েছিল নতুন ধারার সভ্যতা। এতে হাতে কৃষির উন্নতি ঘটেছিল ব্যাপকভাব এবং পেশাদারি পশুপালন গড়ে উঠেছিল এদের হাত ধরে। এরা চাষাবাদের জন্য লাঙ্গল ব্যবহার করা শিখেছিল। সেকালে ঐ অঞ্চলে ধাতু ছিলো খুবই দুর্লভ। তাই লাঙ্গলে ব্যবহার করতো পাথরের তীক্ষ্ণ ফলা। কৃষি কাজের জন্য সেচের মাধ্যমে এছাড়া নদী থেকে পানি আনার কৌশল আবিষ্কার করেছিল এরা।

এরা প্রথম চাকা আবিষ্কার করেছিল বলে অনেকে মনে করেন। অনেকে মনে করেন, চাকা আবিষ্কার হয়েছিল সুমেরীয় সভ্যতার শেষে খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের দিকে।

প্রাচীন লোগোগ্রাম থেকে এরা উদ্ভাবন করেছিল চিত্রলিপি এবং কীলকলিপি। মাটির ফলকে তীক্ষ্ণ দ্বণ্ড ব্যবহার করে লেখার কাজ করতো। এদের ভিতরে কাব্য ও সঙ্গীতের চর্চা ছিল। উরুক রাজ্যের রাজা গিলগামেশের রাজ্যশাসন এবং অমরত্বের জন্য দুঃসাহসিক অভিযান-ভিত্তিক মহাকাব্য রচিত হয়েছিল এই সময়।

এরা কাদামাটি দিয়ে ইট তৈরি করার কৌশল শিখেছিল। এই ইট দিয়ে এরা প্রথম পাকা বাড়ি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। এই ইট মূলত উপাসনালয় এবং রাজবাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হতো।

গণনার পদ্ধতি সুমেরীয়দের আগেই উদ্ভাবিত হয়েছিল। আগের মানুষেরা হাড়ের গায়ে দাগ কেটে হিসাব সংরক্ষণ করতো। এছাড়া এর ৬০ এককের হিসাব প্রণয়ন করেছিল। হিসাব সংরক্ষণের জন্য এরা মাটির ফলক ব্যবহার করতো।

সুমেরীয় সভ্যতার কালানুক্রমিক বিকাশ

 


https://en.wikipedia.org/wiki/Sumer