চন্দ্র দেবতা
বানান বিশ্লেষণ: চ্+অ+ন্+দ্+র্+অ।
পদ: বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা | হিন্দু দেবতা  | দেবতা | দৈবসত্তা | অতিপ্রাকৃতিক সত্তা | বিশ্বাস | প্রজ্ঞা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা | বিমূর্তন  | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

হিন্দু পৌরাণিক দেবতা। ইনি চাঁদের অধিপতি। এই দেবতার অপরাপর নাম: অত্রিজ, অত্রিজাত, অত্রিনেত্রজে, অত্রিনেত্রপ্রসূত, অত্রিনেত্রপ্রভব, অত্রিনেত্রভব, অত্রিনেত্রভূ, অব্জ, অব্জদেব, অব্দিজ, অভিরূপ, অম্ভোজ, অর্ণবোদ্ভব, চন্দ্র, চন্দ্রদেব, চন্দ্রদেবতা।

মহাভারতের মতে-
সমুদ্রমন্থনর সময় প্রথম চন্দ্রের উৎপত্তি হয়। এই কারণে একে বলা হয় অর্ণবোদ্ভব। সাগর থেকে উত্থিত হওয়ার পরে, চন্দ্র আকাশমার্গে গমন করেন এবং সেখান থেকে দেবতাদের পক্ষালম্বন করেন।  দেবতাদের লুকানো অমৃত
রাহু
নামক এক দানব গোপনে পান করার সময় সূর্য ও চন্দ্র বিষ্ণুকে জানিয়ে দেন। বিষ্ণু তাঁর সুদর্শনচক্র দ্বারা রাহুর শরীর দুইভাগে বিভক্ত করে ফেলেন। এই কারণে রাহু চন্দ্রের শত্রুতে পরিণত হন। সুযোগ পেলেই রাহু চন্দ্রকে গ্রাস করেন। কিন্তু, শরীরের নিম্নাংশ কাটা বলে- ওই পথে চন্দ্র পুনারায় বের হয়ে আসেন। হিন্দু মতে- এইভাবে সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে।
        [সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব। অষ্টাদশ-ঊনবিংশ অধ্যায়]

অন্যমতে, ব্রহ্মার মানসপুত্র অদ্রি'র পুত্র। জন্মের পর থেকেই ইনি ত্রিচক্র রথে পৃথিবীকে পরিক্রম করা শুরু করেন এবং আলো দান করতে থাকেন। দক্ষের ২৭টি কন্যাকে ইনি বিবাহ করেন। এর মধ্যে রোহিণী ছিলেন তাঁর প্রিয়তমা পত্নী। এই কারণে দক্ষের অন্যান্য কন্যারা দক্ষের কাছে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। দক্ষ প্রথমে চন্দ্রকে এরূপ পক্ষপাতিত্ব থেকে বিরত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরে ব্যর্থ হয়ে- চন্দ্রকে পুত্রকন্যাহীন ও যক্ষ্মারোগাগ্রস্ত হওয়ার অভিশাপ দেন। এই অভিশাপে ভীত হয়ে কন্যারা পিতাকে অভিশাপ ফিরিয়ে নিতে অনুরোধ করলে- দক্ষ বলেন যে,- চন্দ্র একপক্ষে ক্ষয়প্রাপ্ত হবেন এবং অন্য পক্ষে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে আগের রূপ পাবেন। চাঁদের এই দুই পক্ষ কৃষ্ণ ও শুক্ল নামে পরিচিত।

রাজসূয় যজ্ঞ করে চন্দ্র অত্যন্ত অহংকারী ও কামাসক্ত হয়ে পড়েন। ইনি দেবগুরু বৃহস্পতির স্ত্রী তারাকে হরণ করেন। এই কারণে এক যুদ্ধের সূচনা হয়। চন্দ্রে পক্ষে ছিলেন- দৈত্য, দানব ও দেব শত্রুরা। অন্যদিকে বৃহস্পতির পক্ষ নেন ইন্দ্রসহ অন্যান্য দেবতা। শেষ পর্যন্ত ব্রহ্মা এই যুদ্ধ নিবৃত্ত করেন। পরে তারাকে তাঁর স্বামী বৃহস্পতির কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এই সময় তারা অন্তঃসত্বা ছিলেন। বৃহস্পতির আদেশে তারা গর্ভত্যাগ করেন। ফলে যে পুত্র জন্মে- তার নাম রাখা হয় বুধ। ব্রহ্মা এই পুত্রের পিতা কে জিজ্ঞাসা করলে- তারা পুত্রের জনক হিসাবে চন্দ্রের নাম উল্লেখ করেন। পরে চন্দ্র পুত্রকে গ্রহণ করে তাঁকে আকাশে স্থাপন করেন। এই পুত্রই হলো বুধ গ্রহ।