কার্বোনিফেরাস অধিযুগ
(Carboniferous period)
৩৫.-২৯.৮৯ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।

ক্যাম্রিয়ান মহাকালের অনতর্গত
ফ্যানেরোজোয়িক কালের- তিনটি যুগের প্রথম যুগ হলো প্যালোজোয়িক।  আর প্যালোজোয়িক যুগের পঞ্চম অধিযুগ হলো ক্যাম্ব্রিয়ান। ৩৫ কোটি ৮৯ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই যুগের সূচনা হয়েছিল আর শেষ হয়েছিল ২৯ কোটি ৮৯ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে।

ল্যাটিন
carbo (coal) এবং ferre (to carry), শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে এই Carboniferous শব্দটি গৃহীত হয়েছে। ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে Conybeare এবং  William Phillips এই অধিযুগের নামকরণ করেন। বিজ্ঞানীরা এই অধিযুগকে আরও কিছু ছোটো ছোটো ভাগে ভাগ করেছেন। তবে প্রাথমিকভাবে এর প্রধান দুটি ভাগ নির্ধারণ করেছেন মিসিসিপিয়ান (Msissippian) এবং প্যানসিলভ্যানিয়ান (Pennsylvanian) নামে। এই সময় পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান বিশাল অরণ্যসহ ভূগর্ভে প্রোথিত হয়। কালক্রমে তা ভূগর্ভে কয়লা বা উদ্ভিদজাত নানারকম উপাদান সঞ্চিত হয়। কার্বনসমৃদ্ধ জীবাশ্ম প্রাপ্তির সূত্রে এই অধিযুগকে  কার্বোনিফেরাস অধিযুগ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মূলত ভূগর্ভের প্রাচীন কয়লাভাণ্ডারসমূহ সৃষ্টি পর্ব শুরু হয়েছিল এই সময়ে।

৩৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে কারু বরফযুগের সূচনা হয়েছিল এবং শেষ হয়েছিল ২৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। এই বিচারে বলা যায়, কার্বোনিফেরাস অধিযুগের পুরাটাই কেটেছে  কারু বরফযুগের বরফশীতল পরিবেশে। এছাড়া
৩৮ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে ওল্ডেরিয়  মহা-মহাদেশ বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল। কারু বরফযুগের হিমবাহ এবং বরফের চাপ, সেই সাথে ভূভাগের পাতসঞ্চালন নবতর মহাদেশ সৃষ্টির সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল। ভূবিজ্ঞানীরা এই অধিযুগের অধীনস্থ কারুযুগকে  দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। এর প্রথম ভাগ মিসিসিপ্পিয়ান আন্ত-বরফযুগ। এর শুরু হয়েছিল ৩৫ কোটি ৮৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে, আর শেষ হয়েছিল থেকে ৩১ কোটি ৮০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। এই সময় আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত বরফের আস্তরণে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। এই বরফযুগের দ্বিতীয় ভাগের নাম পেনসিলভেনিয়ান আন্ত-বরফ যুগ। এর ব্যাপ্তীকাল ৩১ কোটি ৮০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ২৯ কোটি ৯০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এই সময় অষ্ট্রেলিয়া থেকে ভারতবর্ষ পর্যন্ত বরফে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। তবে এ্যান্টর্কটিকা পর্যন্ত এই বরফস্তর সম্প্রসারিত হয়েছিল কিনা তার নমুনা পাওয়া যায় না। এই বরফশীতল পরিবেশে এই অধিযুগের শেষের দিকে সৃষ্টি জন্ম নিয়েছিল ইউরোমেরিকা এবং প্যাঙ্গিয়া। উল্লেখ্য বিশালাকার তবে প্যাঙ্গিয়া তৈরির সময় বিশালাকারের বিভিন্ন ভূখণ্ড যুক্ত হয় এবং বহু বড় বড় পর্বতমালার সৃষ্টি হয়েছিল।

কার্বোনিফেরাস অধিযুগে বঙ্গীয় অববাহিকার ভূত্বকে বিরাট প্রভাব ফেলেছিল। এই অধিযুগে ক্রমাগত ভূভাগের পার্শ্বীয় প্রসারণ এবং মহাদেশীয় ভূত্বকের একটি অংশের নিম্নগামী বাঁক নেওয়ার ফলে অগভীর নিম্নভূমির সৃষ্টি হয়েছিল। এই সূত্রে বঙ্গীয় অববাহিকায় এই চ্যুতিখাদসমূহ পশ্চিমাঞ্চলীয় অন্তরীপ সোপান তৈরি হয়েছিল। 

প্যাঙ্গিয়া মহা-মহাদেশ

একই সময় ইউরোমেরিকা এবং গোণ্ড্‌ওয়ানা মিলিত একটি বড় মহা-মহাদেশ তৈরি হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন প্যাঙ্গিয়া। এই মহা-মহাদেশের উত্তরে ছিল ইউরেশিয়া। এর দক্ষিণ-পূর্ব দিক জুড়ে ছিল উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা। মধ্য দক্ষিণাঞ্চলে ছিল আফ্রিকা। আর দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে ছিল ভারত, এন্টার্ক্টিকা, অস্ট্রেলিয়া। এই দুটি মহাদেশের মিলিত হওয়ার সময় পারস্পরিক সংঘর্ষে তিনটি বড় ধরনের ঘটনা ঘটেছিল।

১. কোথাও কোথাও ভূভাগ বসে গিয়েছিল।
২. কোথাও কোথাও উচ্চভূমির সৃষ্টি হয়েছিল।
৩. কোথাও কোথাও বিশালাকারের পর্বতমালা তৈরি করেছিল।

এই সময় ভূগর্ভে প্রোথিত বনভূমি থেকে কয়লাভাণ্ডারসমূহের সৃষ্টপর্ব শুরু হয়েছিল। অন্যদিকে উত্থিত ভূমি এবং পর্বতমালার অধিকাংশ বৃহদাকারের বনভূমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। মূলত প্যাঙ্গিয়া গঠনের সময় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল উদ্ভিদকুলের।

এই মহা-মহাদেশটির স্থায়ীত্বের পুরো সময়টুকুই কারু বরফযুগের অধীনে ছিল। প্যাঙ্গিয়া তৈরির সময় বিশালাকারের বিভিন্ন ভূখণ্ড যুক্ত হয় এবং এই ভূখণ্ড যুক্ত হওয়ার সময় বিশালাকার সব পর্বতমালার সৃষ্টি হয়েছিল। এ সময় প্যাঙ্গিয়া মহা-মহাদেশের একটি অংশ বিষুবরেখা বরাবর ছিল। 

ই সময়ে হোলোসেফালি উপশ্রেণির প্রাণীকূল বিবর্তিত উদ্ভব হয়েছিল ইনিয়োপ্টেরিগিফর্মস (Iniopterygiformes) বর্গের মৎস্য। পরবর্তী সময়ে এই বর্গের সকল প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এছাড়া  সিনাপ্সিডা জাতীয় প্রাণীকূল থেকে উৎপন্ন হয় ক্যাসিসোরিয়া (Caseasauria) নামক প্রাণীকূল থেকে উদ্ভব ঘটেছিল ক্যাসিডি
(Caseidae) গোত্রের প্রাণীকূল। তবে মোলাস্কা পর্বের সেফালোপোডা (Cephalopoda) শ্রেণির প্রাণিকুলে উদ্ভব হয় এই সময়।


সূত্র :