' এ দিকে বিষ্ণুর কাছে দিশি গান শুরু হয়েছে শিশুকাল থেকে। গানের এই পাঠশালায় আমাকেও ভর্তি হতে হল। বিষ্ণু যে গানে হাতেখড়ি দিলেন এখনকার কালের কোনা নামী বা বেনামী ওস্তাদ তাকে ছুঁতে ঘৃণা করবেন। সেগুলো পাড়াগেঁয়ে ছড়ার অত্যন্ত নীচের তলায়। দুই-একটা নমুনা দিই-বিষ্ণুচন্দ্র চক্রবর্তীর গান শেখানোর ধরন ছিলে সেকালের ধরন থেকে আলাদা। এই প্রসঙ্গে তাঁর রবীন্দ্রনাথ ছেলেবেলাতে লিখেছেন-এক যে ছিল বেদের মেয়ে
এল পাড়াতে
সাধের উল্কি পরাতে।
আবার উল্কি-পরা যেমন-তেমন
লাগিয়ে দিল ভেল্কি
ঠাকুরঝি,
উল্কির জ্বালাতে কত কেঁদেছি
ঠাকুরঝি!
আরো কিছু ছেঁড়া ছেঁড়া লাইন মনে পড়ে, যেমন-
চন্দ্র সূর্য হার মেনেছে, জোনাক জ্বালে বাতি।
মোগল পাঠান হদ্দ হল,
ফার্সি পড়ে তাঁতি।
...গণেশের মা, কলাবউকে জ্বালা দিয়ো না,
তার একটি মাচা ফললে পরে
কত হবে ছানাপানা।
অতি পুরানা কালের ভুলে-যাওয়া খবরের আমেজ আসে এমন লাইনও পাওয়া যায়, যেমন-এক যে ছিল কুকুর-চাটা
শেয়ালকাঁটার বন
কেটে করলে সিংহাসন।
মিলে সবে ভারত সন্তান [তথ্য]
১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে দেবেন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথের গান শুনে মুগ্ধ হন।
এই সূত্রে তিনি তিনি রবীন্দ্রনাথের শিক্ষক হিসেবে কৃষ্ণচন্দ্রকে পুরস্কৃত করেন।
১২৮৯ বঙ্গাব্দে (১৮৮২-১৮৮৩
খ্রিষ্টাব্দ) ব্রহ্মসমাজের গায়কের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর অবসরের বিষয়টি
জানা যায় তত্ত্বোধিনী পত্রিকার ফাল্গুন ১৮৮৯ সংখ্যায় লিখিত বিবরণ থেকে।
বিবরণে বলা হয়-
'পঞ্চাশ বৎসর অতীত হইল মহাত্মা রামমোহন রায়ের সময় হইতে শ্রীযুক্ত বিষ্ণুচন্দ্র চক্রবর্তী আদি ব্রাহ্মসমাজে অতি নিপুণতার সহিত সঙ্গীত করিয়া আসিয়াছেন। তিনি এক্ষণে বার্দ্ধক্য নিবন্ধন অবসর গ্রহণ করিয়াছেন। অতঃপর ব্রাহ্মেরা এইরূপ মধুর কণ্ঠে ব্রহ্মসঙ্গীত আর শুনিতে পাইবেন কি না সন্দেহ। যাহারা শ্রদ্ধান্বিত হইয়া উপাসনায় যোগ দিয়া আসিয়েছেন, তাঁহাদের মধ্যে প্রায় এমন কেহই নাই বিষ্ণুর মধুর সঙ্গীতে যাঁহার অশ্রুপাত না হইয়াছে। বহু দিনের পর ব্রাহ্মসমাজে গায়কের একটী অভাব উপস্থিত হইল। পূরণ হইবে কি না ঈশ্বর জানেন।'
১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যবরণ করেন।
সূত্র :