মৎস্যেন্দ্রনাথ
নাথ মতালম্বীদের গুরু।
সমনাম: মচ্ছিন্দ্রনাথ, মচ্ছেন্দ্রপাদ, মৎস্যেন্দ্রপাদ, মীননাথ, মীনপাদ, মোছন্দর।

বৌদ্ধধর্মের মহাযান শাখার শূন্যবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নাথধর্ম। আদি দেবতা ছিলেন নিরঞ্জন। নিরঞ্জনের সাথে যুক্ত হয়েছিল শৈবশক্তির ভাবনা। তাই শিবকে নাথপন্থীরা আদি গুরু হিসেবে আদিনাথ বলা হয়। আদিনাথ-রূপী শিবের শিষ্য ছিলেন মীননাথ বা মৎস্যেন্দ্রনাথ। তাই পার্থিব জগতে নাথ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য করা হয় এই মীননাথকেই ধরা হয়।
 

মৎস্যেন্দ্রনাথের জন্ম-মৃত্যুর কোনো সুনির্দিষ্ট সময় জানা যায় না। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁর 'বাংলা সাহিত্যের কথা' গ্রন্থে নানা যুক্তির মধ্য দিয়ে দেখিয়েছেন মৎসেন্দ্রনাথ সপ্তম শতকের মধ্যভাগের সাধক ছিলেন। অবশ্য অন্যান্য গবেষকদের সাথে তাঁর এই ধারণার মতানৈক্য রয়েছে। তাঁর জন্মস্থানের নাম হিসেবে পাওয়া যায় চন্দ্রদ্বীপ (আধুনিক বরিশাল অঞ্চল)। কথিত আছে মৎস্যের উদরে থেকে হরপার্বতী রহস্য কথা শুনে সিদ্ধিলাভ করেন। এর অন্যতম শিষ্য ছিলেন গোরক্ষনাথ ও চৌরঙ্গী নাথ।

মৎস্যেন্দ্রনাথগোরক্ষনাথকে নিয়ে ‘গোরক্ষ-বিজয়’ রচিত হয়েছিল। এই গ্রন্থ থেকে জানা যায়, একবার তাঁর গুরু মীননাথ আত্মবিস্মৃত হয়ে কদলী নামক প্রমীলারাজ্যে প্রবেশ করেন এবং সেখানকার ষোলোশত রমণীর ভোগচক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়েন। গুরুর এই দশা থেকে উদ্ধারের জন্য গোরক্ষনাথ নর্তকীর বেশে ওই রাজ্যে যান। এরপর মৃদঙ্গবোলের সঙ্গত দ্বারা গুরুকে তাঁর যোগশিক্ষা স্মরণ করিয়ে দেন। এই সঙ্কেত বুঝতে পরে মৎস্যেন্দ্রনাথের চৈতন্য হয় এবং এই ভোগচক্র থেকে উদ্ধার পান। এই কাহিনি গোরক্ষবিজয় নামে অভিহিত হয়ে থাকে। এই কাহিনি অনুসরণে একাধিক গ্রন্থ পাওয়া যায়। তবে গোরক্ষবিজয়ের প্রথম রচয়িতা ছিলেন শেখ ফয়জুল্লা


তথ্যসূত্র :
চর্যাগীতিকা/মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা সম্পাদিত। ষ্টুডেন্ট ওয়েজ। অগ্রহায়ণ ১৪০২।
চর্যাগীতি কোষ/নীলরতন সেন। সাহিত্যলোক।  জানুয়ারি ১৯৭৮।
চর্যাগীতি পরিক্রমা/ড. নির্মল সেন। দে'জ পাবলিশিং, জানুয়ারি ২০০৫।
চর্যাগীতি প্রসঙ্গ/সৈয়দ আলী আহসান। মৌলি প্রকাশনা, জুন ২০০৩।
বাংলাভাষার ইতিবৃত্ত/ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। মাওলা ব্রাদ্রার্স, মার্চ ২০০০।
ভাষার ইতিবৃত্ত। আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড। নভেম্বর ১৯৯৪।
হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা/হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। (বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, ১৩২৩)
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনা-সংগ্রহ (দ্বিতীয় খণ্ড)। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ, নভেম্বর ২০০০