তাঁর উল্লেখযোগ্য উপাধি ছিল 'বল্লভ' ও 'পৃথিবী-বল্লভ', 'পরমেশ্বর
পরম ভক্ত'। তাঁর সিংহাসন লাভের পর
মঙ্গলেশ
ও তাঁর পুত্রের অনুসারীরা বিদ্রোহ করে।
তিনি এ সকল বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করেন। এরপর তিনি রাজ্য বিস্তারে মনোযোগ দেন।
রবিকীর্তি নামক জৈন কবি কর্তৃক রচিত 'আইহেল-লিপি'তে পুলকেশী'র (দ্বিতীয়)
রাজ্যবিস্তারের বিবরণ পাওয়া যায়। এই বিবরণ অনুসারে পুলকেশী কাদম্ব ও মহীশূরের
গঙ্গাবংশীয় রাজাদের পরাজিত করেছিলেন। উত্তরে কঙ্কনের
মৌর্য
রাজাকে পরাজিত করে
তাঁদের রাজধানী পুরী দখল করেন। এরপর তিনি আরও উত্তরে অগ্রসর হয়ে মালব ও
গুজরাটের রাজাদের আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য করেছিলেন।
এরপর তিনি কাবেরী নদী অতিক্রম করলে
চোল,
চের ও
পাণ্ড্যদের পরাজিত
করেন। ৬২৪-৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে দক্ষিণ ভারত জয় করার উদ্দেশ্য
পুষ্যভূতি রাজবংশের
হর্ষবর্ধন বিরুদ্ধে অভিযান
পরিচালনা করেন। পুলকেশী
নর্মদা নদীর তীরে
হর্ষবর্ধনকে বাধা দেন। এই যুদ্ধে
হর্ষবর্ধন পরাজিত হয়ে ফিরে
যান।
হর্ষবর্ধনকে পরাজিত করে পুলকেশী 'পরমেশ্বর' উপাধি ধারণ করেন।
এরপর পুলকেশী দাক্ষিণাত্যের পূর্বভাগ এবং সুদূর দক্ষিণাঞ্চলের দিকে মনোযোগ দেন। তিনি দক্ষিণের তুঙ্গাভদ্রা পার হয়ে চালুক্য রাজশক্তির মুখোমুখী হন। তিনি পল্লব রাজবংশের মহেন্দ্রবর্মণ প্রথমকে পরাজিত করেন। এর ফলে পল্লবদের রাজধানী কাঞ্চী বিপন্ন দশায় পৌঁছায়। পুলকেশী আরও দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে কাবেরী নদী অতিক্রম করেন এবং রণকৌশল হিসেবে চোলদের সাথে মিত্রতা করেন। এই সময় তিনি দুই দিক থেকে পল্লবদের দ্বারা আক্রমণের সম্ভাবনা দেখে তিনি রাজধানী বাতাপীতে ফিরে আসেন।
এরপর পল্লব রাজ নরসিংহবর্মণ হৃত রাজ্য উদ্ধরের জন্য চালুক্য রাজ্য আক্রমণ করেন। প্রথম বারের এই যুদ্ধে নরসিংহবর্মণ পরাজিত হন। পরে তিনি দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করেন এবং মনিলিঙ্গমের যুদ্ধে তিনি পুলকেশীকে পরাজিত করেন। পুলকেশী তুঙ্গাভদ্রার দিকে পিছু হটে গেলে, নরসিংহবর্মণ পুনরায় আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধেও পুলকেশী পরাজিত হন। পরপর দুটি যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পুলকেশী দুর্বল হয়ে পড়েন। এই সুযোগে নরসিংহবর্মণ তৃতীয় বার আক্রমণ করে ৬৪২ খ্রিষ্টাব্দে চালুক্য রাজধানী বাতাপি অধিকার করেন। ধারণা করা হয় এই যুদ্ধে পুলকেশী নিহত হন। এরপর চালুক্য রাজশক্তি হীনবল হয়ে পড়লেও পল্লব রাজ্যের উত্তরভাগ চালুক্যদের অধিকারে ছিল। ৬৪২ খ্রিষ্টাব্দে চালুক্যের সিংহাসন লাভ করেন তাঁর পুত্র বিক্রমাদিত্য প্রথম। তাঁর রাজত্বকাল ছিল ৬৯৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।