পল্লব রাজবংশ
প্রাচীন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের একটি রাজবংশ।

সাতবাহন রাজবংশের পতনের এই রাজবংশের উদ্ভব হয়েছিল। পল্লবদের উৎপত্তির বিষয়ে মতভেদ আছে। যেমন-

১. পল্লবরা ছিল উত্তর ভারত থেকে আগত প্রাকৃত ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী। কারণ লিপিগুলো দক্ষিণা ভারতের তামিল ভাষার পরিবর্তে রচিত হয়েছিল প্রকৃত ভাষায়।
২. পল্লবরা ছিল পারসীক পহ্লবদের সাথে সম্পর্কিত। এরা প্রথমে উত্তর-পশ্চিম ভারতে বসবাস করতো। এরপর এরা তোণ্ডামণ্ডলমে বসবাস করতো।

৩. পল্লবরা ছিল তোণ্ডামণ্ডলমে বসবাসকারী আদিবাসী। এদের আদি পরিচয় ছিল 'পুলিন্দ' বা 'পালদ'। অশোকের শিলালিপিতে যে পুলিন্দ জাতির নাম পাওয়া যায়, কালক্রমে তারাই পল্লব নামে পরিচিতি লাভ করেন। অশোকের সময় তোণ্ডামণ্ডলম তাঁর সাম্রাজ্যের অংশ ছিল।
 

সাতবাহন শাসনামলে পল্লবরা সাতবাহনদের সামন্ত ছিল। ২২৫ খ্রিষ্টাব্দে সাতবাহন রাজ্যের পতনের পর, এরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম পর্যায়ে এঁরা ২৫০ থেকে ৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে এদের রাজত্ব কাল ছিল ৩৫০ থেকে ৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দ।  তৃতীয় পর্যায়ের রাজত্বকাল ছিল ৫৭৫ থেকে ৯০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।

পল্লব রাজবংশের প্রথম পর্যায় (২৫০ থেকে ৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ)
২২৫ খ্রিষ্টাব্দে সাতবাহন রাজ্যের পতনের পর, এরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তবে সে সময়ে সামন্ত রাজাদের মতো ক্ষুদ্র শক্তির অধিকারী ছিল। ৩৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এরা প্রকৃতপক্ষে সার্বভৌম রাজত্ব কায়েম করে। এই সময়ে পল্লবরাজ্যের রাজধানী কাঞ্চীতে ছিল।

পল্লব রাজবংশের দ্বিতীয় পর্যায় (৩৫০ থেকে ৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দ)
দ্বিতীয় পর্যায়ের পল্লব রাজবংশে মোট ১৫ জন রাজার নাম নানা সূত্র থেকে জানা যায়। তবে এদের বিশেষ কোনো কৃতিত্বের কথা জানা যায় না। এরা ছোট পরিসরে নির্বিবাদে রাজত্ব করেছেন। এই সময়ে ছোট ছোট কিছু অংশে নতুন জনবসতি গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে রাজ্যসীমা বৃদ্ধি করেছিলেন। এই সময় কোনো বড় ধরনে শত্রুর মোকাবেলা করতে হয় নি বা তারও কোনো রাজ্য আক্রমণ করার চেষ্টা করে নি। এই সময়ে পল্ল্বদের অগ্রগতির ধারাবাহিক উন্নতির কোনো ইতিহাসও জানা যায় না।

পল্লব রাজবংশের দ্বিতীয় পর্যায় (৫৭৫ থেকে ৯০০ খ্রিষ্টাব্দ)
এই পর্যায়ে প্রথম কৃতিত্ব সৃষ্টি করেন সিংহবিষ্ণু। ঐতিহাসিকভাবে তিনিই প্রথম পল্লব রাজবংশের বি্জয়ে গৌরব অর্জন করেন। নিচে সিংহবিষ্ণু থেকে অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পল্লবরাজাদের তালিকা দেওয়া হলো।

৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে চোল-রাজ আদিত্যের কাছে অপরাজিত বর্মণ পরাজিত হন। আদিত্য টোণ্ডামণ্ডলম দখল করেন এবং দাক্ষিণ্যাত্যের উপর পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। এর মধ্য দিয়ে পল্লব রাজবংশের শাসন বিলুপ্ত হয়ে যায়।