বিষয়:
রবীন্দ্রসঙ্গীত।
শিরোনাম: বিশ্ববীণারবে বিশ্বজন মোহিছে
পাঠ ও পাঠভেদ:
- গীতবিতান (বিশ্বভারতী, কার্তিক ১৪১২)-এর পাঠ: প্রকৃতি ১।
বিশ্ববীণারবে
বিশ্বজন মোহিছে।
স্থলে জলে নভতলে
বনে উপবনে
নদীনদে
গিরিগুহা-পারাবারে
নিত্য জাগে সরস
সঙ্গীতমধুরিমা,
নিত্য নৃত্যরসভঙ্গিমা―
নব বসন্তে নব
আনন্দ, উৎসব নব।
অতি মঞ্জুল, অতি
মঞ্জুল, শুনি মঞ্জুল গুঞ্জন কুঞ্জে―
শুনি রে শুনি
মর্মর পল্লবপুঞ্জে,
পিককূজন
পুষ্পবনে বিজনে,
মৃদু
বায়ুহিলোলবিলোল বিভোল বিশাল সরোবর-মাঝে
কলগীত সুললিত
বাজে।
শ্যামল
কান্তার-পরে অনিল সঞ্চারে ধীরে রে,
নদীতীরে শরবনে
উঠে ধ্বনি সরসর মরমর।
কত দিকে কত
বাণী, নব নব কত ভাষা, ঝরঝর রসধারা
আষাঢ়ে নব
আনন্দ, উৎসব নব।
অতি গম্ভীর, অতি
গম্ভীর নীল অম্বরে ডম্বরু বাজে,
যেন রে
প্রলয়ঙ্করী শঙ্করী নাচে।
করে গর্জন
নির্ঝরিণী সঘনে,
হেরো ক্ষুব্ধ
ভয়াল বিশাল নিরাল পিয়ালতমালবিতানে
উঠে রব
ভৈরবতানে।
পবন মল্লারগীত
গাহিছে আঁধার রাতে,
উন্মাদিনী
সৌদামিনী রঙ্গভরে নৃত্য করে অম্বরতলে।
দিকে দিকে কত
বাণী, নব নব কত ভাষা, ঝরঝর রসধারা॥
আশ্বিনে নব
আনন্দ, উৎসব নব।
অতি নির্মল, অতি
নির্মল, অতি নির্মল উজ্জ্বল সাজে
ভুবনে নব
শারদলক্ষ্মী বিরাজে।
নব ইন্দুলেখা
অলকে ঝলকে
অতি নির্মল
হাসবিভাসবিকাশ আকাশনীলাম্বুজ-মাঝে
শ্বেত ভুজে
শ্বেত বীণা বাজে―
উঠিছে আলাপ মৃদু
মধুর বেহাগতানে,
চন্দ্রকরে
উল্লসিত ফুল্লবনে ঝিল্লিরবে তন্দ্রা আনে রে।
দিকে দিকে কত
বাণী, নব নব কত ভাষা, ঝরঝর রসধারা॥
-
পাণ্ডুলিপির
পাঠ: রবীন্দ্র-পাণ্ডুলিপিতে গানটি পাওয়া যায়।
RBVBMS 426 (i)
তথ্যানুসন্ধান
-
ক. রচনাকাল ও স্থান:
১৩০২ বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসের শেষ দিকে রবীন্দ্রনাথ উত্তরবঙ্গ সফর করেন। আশ্বিন মাসের পুরো সময়টুকু তিনি শিলাইদহে
কাটান।
RBVBMS 426 (i)
-তে লিখিত পাণ্ডুলিপি থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ এই গানটির
বসন্তের অংশ রচিত করেছিলেন ৪ আশ্বিন [২০ সেপ্টেম্বর ১৮৯৫
খ্রিষ্টাব্দ] এবং বর্ষা ও শরতের অংশ রচনা করেছিলেন '৯ আশ্বিনে [২৫
সেপ্টেম্বর ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দ]।
এই সময় রবীন্দ্রনাথের বয়স ছিল ৩৪ বৎসর ৫ মাস।
[রবীন্দ্রনাথের
৩৪ বৎসর বয়সে রচিত গানের তালিকা]
উল্লেখ্য, পাণ্ডুলিপির পাঠ দেখে মনে হয়, রবীন্দ্রনাথ ৪ঠা আশ্বিন 'বিশ্ববীণারবে
বিশ্বজন মোহিছে' গানটির 'বসন্ত'
অংশ রচনা করার 'আষাঢ় এবং আশ্বিন' অংশ রচনা করার ইচ্ছা ছিল না। গানটির
প্রথমাংশ এবং শেষাংশ রচনার ভিতরে ৫ দিনের একটি অবসর রয়েছে। এর ভিতরে তিনি
রচনা করেন এই মোট চারটি গান। অন্য তিনটি গান হল—
৫ আশ্বিন [২১
সেপ্টেম্বর ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দ]
ওলো সই, ওলো সই [প্রেম-৮১]
[তথ্য]
৫ আশ্বিন [রবিবার ২১
সেপ্টেম্বর ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দ]
মধুর
মধুর ধ্বনি বাজে [বিচিত্র-১০] [তথ্য]
৮ আশ্বিন [মঙ্গলবার
২৪ সেপ্টেম্বর ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দ]
বেলা গেল তোমার
পথ চেয়ে [পূজা-১৪৮
[তথ্য
]
৯ আশ্বিন [বুধবার ২৪ সেপ্টেম্বর
১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দ]-এর ভিতরে।
আজি মোর দ্বারে [প্রেম
ও প্রকৃতি ৫৪] [তথ্য]
খ.
প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
গ.সঙ্গীত বিষয়ক তথ্যাবলী:
-
ভাঙা গান:
এটি একটি ভাঙা গান। ইন্দিরাদেবী তাঁর
'রবীন্দ্রসংগীতের ত্রিবেণী সংগম' গ্রন্থে, এই গানের মূল গানটি উল্লেখ করেছেন-
নাদবিদ্যা পরব্রহ্মরস [শঙ্করাভরণ। তাল-ফেরতা]
-
স্বরলিপিকার:
-
সুর ও তাল:
-
গানটির সুর
ও স্বরলিপি'র দ্বন্দ্ব:
এই গানটি নিয়ে
ইন্দিরাদেবী এবং দিনেন্দ্রনাথের মধ্যে কিছু দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছিল।
এর সূত্রপাত হয়েছিল
মায়ার
খেলা'র স্বরলিপি নিয়ে। ১৩২৬ বঙ্গাব্দের
রবীন্দ্রনাথের সাথে ইন্দিরাদেবীর পত্র বিনিময়ের মধ্যে তা স্পষ্ট ধরা পরে। দিনেন্দ্রনাথের প্রতি
ইন্দিরা দেবী কি পরিমাণ ক্ষুব্ধ ছিলেন, তা বুঝা যায়>— ১৩২৬
বঙ্গাব্দের ১০ই অগ্রহায়ণ এবং ২১শে অগ্রহায়ণের দুটো চিঠি থেকে।
১০ই অগ্রহায়ণ, ১৩২৬ বঙ্গাব্দে
ইন্দিরাদেবীকে লেখা রবীন্দ্রনাথের চিঠি−
মায়ার খেলা'র স্বরলিপি বদল করে হাল
নিয়মানুগত করে লেখার জন্য দিনুর হাতে দিয়েছি। কিন্তু ওর হাত খুব সচল নয়। ওর
কাছ থেকে কাজ আদায় করার মজুরি পোষাবে কিনা জানিনে। ও নিজে যে স্বরলিপি লিখে
তাতে হাত চালিয়ে কাজ করে কিন্তু এ ক্ষেত্রে ওর বিশেষ উৎসাহের লক্ষণ এখনো
দেখ্চিনে।
দিনু এখানকার ছেলেদের 'বিশ্ববীণারবে'
যে ধাঁচায় গাইতে শিখিয়েচে সেই ধাঁচা অনুসারে স্বরলিপি লিখেচে। ঠিক মূলের
অনুবর্তন করা দরকার মনে করেনি। মৈথিলি বিদ্যাপতি বাংলায় এসে যেমন
স্বাতন্ত্র্য অবলম্বন করেচে এবং সেই স্বাতন্ত্র্যকে আমরা স্বীকার করেও
নিয়েচি এই সমস্ত বিদেশী সুরেরও সেই রকম কিছু পরিবর্তন হবেই−
হলে দোষই বা কি? এই সব যুক্ত মনে এনে ওকে আমি বেকসুর খালাস দিতে ইচ্ছে করি।
আমি জানি এ সম্বন্ধে তোর আইন অত্যন্ত কড়া কিন্তু আমার মনে হয় পরদ্রব্য
আত্মসাৎ করা সম্বন্ধে ঢিলেমি সাহিত্যে ললিতকলায় সকল অবস্থায় ফৌজদারী অথবা
দেওয়ানী আদালতের বিচার এলাকায় আসে না।
রবীন্দ্রনাথের 'বেকসুর খালাস' ইন্দিরাদেবী
পছন্দ করেন নি। তিনি এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। এর উত্তরে রবীন্দ্রনাথ ২১শে
অগ্রহায়ণ ইন্দিরাদেবীকে আরও একটি চিঠি লেখেন।
'বিশ্ববীণারবে'র বিকৃতি সম্বন্ধে তোর
আপত্তি সমর্থন করে তুই যে একটি অমোঘ যুক্তি সব শেষে নিক্ষেপ করেছিস সে
একেবারে শক্তিশেলের মত এসে আমার মন্তব্যটাকে এ-ফোঁড় ও-ফোঁড় করেচে।...দিনু
যখন ভুল করে 'বিশ্ববীণারবে' শেখালে আমি বল্লুম বেশ হচ্চে, এই রকম হওয়াই
উচিত। বুঝেছিস কেন? যদি বলি অন্যরকম হওয়া উচিত তাহলে হাঙ্গামা বাড়ে। তাউ হয়
ত রেগেমেগে শাপ দিয়ে বসবি, তোমার গান তাহলে সকলে যা ইচ্ছে তাই করে গাক।...
মানুষকে ক্ষমা করতে গেলে মানুষকে বুঝতে হয়−
সেইজন্যে এতক্ষণ ধরে
তোকে বোঝাবার চেষ্টা করা গেল−
কিন্তু ক্ষমা করবি কিনা আমার সন্দেহ রয়ে গেল।'
[সূত্র:
চিঠিপত্র ৫, পত্র সংখ্যা ৪, ৫। বিশ্বভারতী, পৌষ ১৪২২, পৃষ
্ঠা:
৩০-৩৩ ]
সুর ও তাল:
- রাগ: শঙ্করাভরণ (দক্ষিণী)। তাল:
ঝাঁপ-কাহারবা
[রবীন্দ্রসংগীত : রাগ-সুর নির্দেশিকা।
সুধীর চন্দ। (প্যাপিরাস, ডিসেম্বর, ২০০৬) পৃষ্ঠা:
৬৯]।
-
রাগ: শঙ্করাভরণ (দক্ষিণী)। তাল:
ঝাঁপতাল, কাহারবা
[রাগরাগিণীর
এলাকায় রবীন্দ্রসংগীত, প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী, জুলাই ২০০১,পৃষ্ঠা:
১২১।
গ্রহস্বর : সন্
লয় : মধ্য