বিষয়: রবীন্দ্রসঙ্গীত।
গান সংখ্যা :
শিরোনাম:
বাজে
বাজে রম্যবীণা বাজে
পাঠ ও পাঠভেদ:
বাজে বাজে
রম্যবীণা বাজে-
অমলকমল-মাঝে, জ্যোৎস্নারজনী-মাঝে,
কাজলঘন-মাঝে, নিশি-আঁধার-মাঝে,
কুসুমসুরভি-মাঝে বীনরণন শুনি যে-
প্রেমে প্রেমে বাজে ॥
নাচে নাচে রম্যতালে নাচে-
তপন তারা নাচে, নদী সমুদ্র নাচে,
জন্মমরণ নাচে, যুগযুগান্ত নাচে,
ভকতহৃদয় নাচে বিশ্বছন্দে মাতিয়ে-
প্রেমে প্রেমে নাচে ॥
সাজে সাজে রম্যবেশে সাজে-
নীল অম্বর সাজে, উষাসন্ধ্যা সাজে,
ধরণীধুলি সাজে, দীনদুঃখী সাজে,
প্রণত চিত্ত সাজে বিশ্বশোভার লুটায়ে-
প্রেমে প্রেমে সাজে ॥
ক. রচনাকাল ও স্থান: ১৩১৫ বঙ্গাব্দের ৫ পৌষ তারিখে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে একটি ভাষণ দেন। এই ভাষণটি 'শোনা' শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তাঁর 'শান্তিনিকেতন' গ্রন্থে। এই ভাষণটির শুরুতেই রয়েছে-
'কাল সন্ধ্যা থেকে এই গানটি কেবলই আমার মনের মধ্যে ঝংকৃত হচ্ছে- "বাজে বাজে রম্যবীণা বাজে।"
এরপর গানটির
প্রথম স্তবক যুক্ত হয়েছে। যেহেতু এই ভাষণের সাথে গানটির প্রথম স্তবক পাওয়া যায়, তাই
নির্দ্বিধায় বলা যায়, এই অংশটুকু তিনি অন্তত ৪ পৌষ বা তার আগেই রচনা করেছিলেন। এই
গানটি তিনি একটি শিখ ভজন ভেঙে
তৈরি করেছিলেন। কিন্তু পুরো গানটি তিনি কোন সময়ে তৈরি করেছিলেন- তা স্পষ্ট
জানা যায় না। যদি পৌষ মাসেই তিনি গানটির পুরো অংশ রচনা করেন থাকেন, তাহলে ধারণা করা
যায় যে- গানটি রচনার সময়
তাঁর বয়স ছিল ৪৭ বৎসর ৮ মাস।
[রবীন্দ্রনাথের
৪৭ বৎসর অতিক্রান্ত বয়সে রচিত গানের তালিকা]
গ্রন্থ:
দ্বিতীয় সংস্করণ [ইন্ডিয়ান প্রেস ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দ, ১৩১৬ বঙ্গাব্দ। ব্রহ্মসঙ্গীত। ইমন কল্যাণ- তেওরা। পৃষ্ঠা: ৩৮৭। [নমুনা]
প্রথম খণ্ড, প্রথম সংস্করণ [বিশ্বভারতী, আশ্বিন ১৩৩৮।
গীতিচর্চ্চা [বিশ্বভারতী, পৌষ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ। গান ৯৩। পৃষ্ঠা ৭১] [নমুনা]
ব্রহ্মসঙ্গীত স্বরলিপি ষষ্ঠ ভাগ (জ্যৈষ্ঠ ১৩১৮ বঙ্গাব্দ)। ইমন কল্যাণ-তেওড়া। কাঙ্গালীচরণ সেন-কৃত স্বরলিপি-সহ মুদ্রিত হয়েছিল।
শান্তিনিকেতন প্রথম সংস্করণ (১৩৪১-১৩৪২)। শোনা। রবীন্দ্ররচনাবলী ত্রয়োদশ খণ্ড। পৃষ্ঠা ৪৮৫।
স্বরবিতান সপ্তবিংশ (২৭) খণ্ডের ১২ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৩৮-৪১। [নমুনা]
পত্রিকা:
সঙ্গীত প্রকাশিকা পত্রিকা (মাঘ ১৩১৫ বঙ্গাব্দ)। ইমন কল্যাণ-তেওরা। পৃষ্ঠা ৯১-৯৩।
তত্ত্ববোধিনী (ফাল্গুন ১৩১৫ বঙ্গাব্দ)। ইমন কল্যাণ-তেওরা। পৃষ্ঠা ১৭৯-৮০
রেকর্ডসূত্র: পাওয়া যায় নি।
এরপর ১৩৩৮ বঙ্গাব্দে গানটি গীতবিতান --এর প্রথম খণ্ড, প্রথম সংস্করণ অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এই গ্রন্থের সূচিতে আছে- গানটি '১৩১৫ সনে প্রকাশিত 'গান' গ্রন্থ হইতে'। কিন্তু ১৩১৫ সনে প্রকাশিত 'গান' গ্রন্থ'-এ গানটি ছিল না।
প্রকৃতপক্ষে গানটি মুদ্রিত হয়েছিল গান ১৩১৬ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত 'গান' গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণে। পৃষ্ঠা: ২৬৭]
মূল গান:
বাদে বাদে রম্ম বীণ বাদৈ
অমল কমল বীচ, বিমল রজনী বীচ,
কাজর ঘন বীচ, নিস আঁধিয়ারা বীচ,
কুসুম সুরভী বীচ, বীণ রণণ সুণায়ে
প্রেম প্রেম বাদৈ ॥
ইন্দিরাদেবী সংগৃহীত
দ্র : রবীন্দ্র্রসঙ্গীত গবেষণা গ্রন্থমালা/ ৩য় খণ্ড। প্রফুল্লকুমার দাস। পৃষ্ঠা ১০৫।
এই গানটির একটি পাঠান্তর
গীতবিতানের নাট্যগীতি পর্যায়ের ১০২ [নাট্যগীতি
-১০২] সংখ্যক হিসাবে গৃহীত হয়েছে।
আর
এর স্বরলিপি গৃহীত হয়েছে স্বরবিতান-৫২ খণ্ডে। গানটির বিস্তারিত দেওয়া হলো- বাজে রে
বাজে ডমরু বাজে' শিরোনামে।
দেখুন :
বাজে রে বাজে ডমরু বাজে [নাট্যগীতি
-১০২]
[তথ্য]
১৩১৫ বঙ্গাব্দের ২২ অগ্রহায়ণ [৭ ডিসেম্বর ১৯০৮] তারিখে রবীন্দ্রনাথ তাঁর ভৃত্য উমাচরণ-কে সাথে নিয়ে শান্তিনিকেতন আসেন। ২৩ অগ্রহায়ণ থেকে তিনি প্রাতঃকালীন ভাষণ দেওয়া শুরু করেন। এই পর্যায়ে- ৫ পৌষ তারিখে তিনি যে ভাষণ দেন- তার নাম ছিল 'শোনা'। এই ভাষণটি 'শান্তিনিকেতন' নামক গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে গৃহীত হয়েছে। দ্রষ্টব্যঃ শোনা : শান্তিনিকেতন, রবীন্দ্র্ররচনাবলী ত্রয়োদশ খণ্ড। পৃষ্ঠা ৪৮৫।
উক্ত প্রবন্ধে রবীন্দ্র্র লিখেছেন,-কাল সন্ধ্যা থেকে এই গানটি কেবলই আমার মনের মধ্যে ঝংকৃত হচ্ছে- 'বাজে বাজে রম্যবীণা বাজে'। ........ কাল রাত্রে ছাদে দাঁড়িয়ে নক্ষত্রলোকের দিকে চেয়ে আমার মন সম্পূর্ণ স্বীকার করেছে, বাজে বাজে রম্যবীণা বাজে। এ কবিকথা নয়, এ বাক্যালংকার নয়- আকাশ এবং কালকে পরিপূর্ণ করে অহোরাত্র সংগীত বেজে উঠেছে।'
স্বরলিপিকার: কাঙ্গালীচরণ সেন-কৃত স্বরলিপিটি ব্রহ্মসঙ্গীত স্বরলিপি ৬ষ্ঠ ভাগ থেকে স্বরবিতান-২৭'-এর সুরভেদ /ছন্দোভেদ পত্রে পৃষ্ঠা ৮০ গৃহীত হয়েছে। স্বরবিতান-২৭-এ গৃহীত স্বরলিপিটি কার তা জানা যায় না।
সুর ও তাল:
রাগ-ইমন কল্যাণ। তাল-তেওরা। [স্বরবিতান-২৭]
বিষয়াঙ্গ: ব্রহ্মসঙ্গীত।
সুরাঙ্গ: ভজনাঙ্গ (পাঞ্জাবী ভজন ভাঙা গান)।
গ্রহস্বর: সা।
লয়: মধ্য। [জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বরলিপি-গীতিমালা]