বিষয়: 
		রবীন্দ্রসঙ্গীত। 
		গান সংখ্যা: 
		শিরোনাম: 
		
      তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে
পাঠ ও পাঠভেদ:
      তুমি যে    সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে,
      এ আগুন      ছড়িয়ে গেল সব খানে॥
      যত সব       মরা গাছের ডালে ডালে
                      
      নাচে আগুন তালে তালে   রে,
      আকাশে       হাত তোলে সে কার পানে॥
      আঁধারের      তারা যত অবাক্ হয়ে রয় চেয়ে,
      কোথাকার     পাগল হাওয়া বয় ধেয়ে।
      নিশীথের      বুকের মাঝে এই-যে অমল
                      
      উঠল ফুটে স্বর্ণকমল   রে,
      আগুনের      কী গুণ আছে কে জানে॥
পাণ্ডুলিপির পাঠ: RBVBMS 229। [পাণ্ডুলিপির নমুনা]
পাঠভেদ:
		এ 
		আগুন 
      ছড়িয়ে গেল                : 
		
		পাণ্ডুলিপি:
		MS. NO 229। ৬৯
                                            কথার অংশ, 
		গীতলেখা ২ (১৩২৫ বঙ্গাব্দ)
		    
		                              
		         গীতবিতান (আশ্বিন 
      ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ)
সে আগুন ছড়িয়ে গেল : স্বরলিপি, গীতলেখা ২ (১৩২৫ বঙ্গাব্দ)
		নাচে আগুন তালে তালে   রে       
		: গীতবিতান (বিশ্বভারতী, 
		কার্তিক ১৪১২)
		নাচে আগুন তালে তালে            
		: 
		[পাণ্ডুলিপি:
		MS. NO 229। ৬৯]
 
 উঠল ফুটে স্বর্ণকমল   রে,           
		:গীতবিতান (বিশ্বভারতী, 
		কার্তিক ১৪১২)
 উঠল ফুটে স্বর্ণকমল                  
		: 
		[পাণ্ডুলিপি:
		MS. NO 229। ৬৯]
		ভাবসন্ধান: মানবহূদয়ে সুরের 
		নিবিড় স্পর্শ ঘটলে, তা চিত্তের সীমায় না থেকে আগুনের মতো ব্যাপ্ত হয়ে ধেয়ে 
		চলে যেন। তখন চিত্তের শুষ্ক শাখা প্রশাখাতেও সুরের শিখা লেলিহান হয়ে জ্বলে 
		ওঠে। সে নৃত্যপর শিখা বিস্তৃত হয়ে আকাশের অভিমুখে উত্থিত হয়। এ সুরের আলো 
		তারকালোকের দৃষ্টিকে বিস্ময়ে নিষ্কলক করে দেয়। আগুনের শিখার সঙ্গে হাওয়াও 
		মেতে ওঠে পাগলামিতে। রাত্রির অন্ধকারে তখন, সুরের আগুনে দীপ্ত এক স্বর্ণকমল 
		বিকশিত হয়। এমনই জাদুকরী ক্ষমতা আছে সুরের আগুনে। 
		বাউল অঙ্গের গান হিসেবে গানটির গতিতে স্ফূর্তি রয়েছে। স্থায়ীতে “সব খানে,” 
		অন্তরায় “কার পানে,” আর আভোগে “কে জানে” বাক্যাংশের সুরের ক্রমোচ্চ হয়ে 
		তৃতীয় বারে তারার শুদ্ধ রেখাবে পৌঁছে তারার সা-তে ফিরে আসাতে উচ্চারণে 
		আনন্দের সৃষ্টি হয়। অন্তরা আর আভোগে বাউলসুলভ সুরের টানে দুবার ‘রে’—
		 
| । | পা | -া | -া | । | -ধা | -না | -ধা | । | পা | -া | -া | । | ধা | -না | -ধা | । | পা | -া | -া | 
| রে | ০ | ০ | ম | তো | ০ | উ | ০ | ০ | পু | রে | ০ | ০ | ০ | ০ | 
		
		সুরের এই পৌনঃপুনিক আবৃত্তিতেও খুশির উচ্ছ্বাস আছে। এতে গায়কের অন্তর থেকে 
		শ্রোতার অন্তরে ছন্দোময় আনন্দ সঞ্চারিত হতে থাকে।
 
তথ্যানুসন্ধান
	ক. রচনাকাল ও স্থান: ২৫ চৈত্র 
	 ১৩২০ বঙ্গাব্দ 
	[বুধ ৮ এপ্রিল, ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দ] তারিখে 
রবীন্দ্রনাথ 
শান্তিনিকেতন থেকে কলিকাতায় 
	যান।  শান্তিনিকেতনে অবস্থানকালে তিনি মোট ১৩টি 
গান রচনা করেছিলেন। এর 
আগে
এই গানটি-সহ তিনি মোট 
৪টি গান রচনা করেন  
২৪ চৈত্র ১৩২০ বঙ্গাব্দ 
[৭ এপ্রিল ১৯১৩] তারিখে। 
	রবীন্দ্রনাথের পাণ্ডুলিপি 
 MS. NO 229 
		-তে তারিখ উল্লেখ আছে '২৪ 
	চৈত্র'।
               
	[রবীন্দ্রনাথের 
	৫২ বৎসর 
	অতিক্রান্ত বয়সে রচিত গানের তালিকা]
	
	
	এই গানটি রচনার 
 
	প্রেক্ষাপট সম্পর্কে− 
শান্তিদেব ঘোষ 
তাঁর 'রবীন্দ্রসঙ্গীত'
	গ্রন্থে (বিশ্বভারতী, আশ্বিন ১৪১৫ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ২০১) লিখেছেন,- 
	"চিত্রশল্পী 
শ্রীযুক্ত অসিতকুমার হালদার মহাশয়ের একটি ছবি দেখে 
গুরুদেব গান বেঁধেছিলেন, 'একলা 
বসে একে একে অন্যমনে' এবং তাঁর 'অগ্নিবীণা'-কোলে 
সরস্বতীর ছবি উপলক্ষ করে 'তুমি 
	যে 
সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে 
মোর প্রাণে' 
	গানটির উদ্ভব।"
	
এই বিষয়ে অসিতকুমার হালদার তাঁর রবিতীর্থ  [ইন্ডিয়ান পাবলিশিং 
	হাউস, কলিকাতা ১৪১৫] গ্রন্থে লিখেছেন-   
	
	
"সেবার গরমের ছুটিতে রাঁচি গেছি, আমার ছাত্র মুকুলচন্দ্র দে আছেন আশ্রমে। আমার অনুপস্থিতিকালে নতুন ছবির জন্য বিষয়বস্তু ভাবতে না পেরে তিনি গেলেন গুরুদেবের কাছে। মুকুলের ছিল অবাধ গতি সর্বত্র এবং সকলের সঙ্গে জমিয়ে নেবারও অদ্বিতীয় ক্ষমতা। কবি তাঁকে বললেন, আমার উপযুক্ত একটি সরস্বতী আঁক, 'দিব্য প্রজ্ঞা' −ক্যালেন্ডারের সরস্বতী চাই না। মুকুল কোমর বেঁধে লেগে গেলেন একটার পর একটা সরস্বতী আঁকতে; রবিদার কিন্তু একটিও মনে ধরল না। অবশেষে গ্রীষ্মাবকাশের পর আমি ফিরে আসতেই রবিদা তাঁর সব কথা বললেন এবং পুনরায় আমাকে তাঁর জন্য দিব্যপ্রজ্ঞা সরস্বতীর চিত্রাভাস তৈরি করতে বললেন। তিনি যেভাবে বর্ণনাকালে জ্যোতিদৃপ্ত ভাব প্রকাশ করেছিলেন তাতে তাঁর সরস্বতীর আভাস পেয়ে একটি অগ্নিময়ী সরস্বতী আঁকলুম। রঙিন ছবিটি সম্পূর্ণ করে রবিদার সামনে ধরেতই তাঁর মনে সুরের রঙ ধরল, তিনি তুড়ি দিতে দিতে তাল দিয়ে গুঞ্জন করে রচনা করলেন: 'তুমি যে সুরে আগুন'।
যথানিয়মে এই গান দিনুদার মারফৎ আশ্রমের গানের দল শিখে নিলে।"
এই সময় রবীন্দ্রনাথের বয়স ছিল ৫২ বৎসর ১১ মাস।
খ. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
গ্রন্থ
কাব্যগ্রন্থ নবম খণ্ড (ইন্ডিয়ান প্রেস, ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দ, ১৩২৩ বঙ্গাব্দ)। গীতিমাল্য ৮৯। পৃষ্ঠা: ৩৮৭। [নমুনা]
প্রথম খণ্ড, দ্বিতীয় সংস্করণ (বিশ্বভারতী ১৩৪৮)। পূজা ৬, উপবিভাগ: গান ৬। পৃষ্ঠা: ৩। [নমুনা]
অখণ্ড সংস্করণ, তৃতীয় সংস্করণ (বিশ্বভারতী ১৩৮০)। পূজা: ৬, উপবিভাগ: গান ৬। পৃষ্ঠা: ৭। [ নমুনা]
গীতলেখা দ্বিতীয় ভাগ (১৩২৫ বঙ্গাব্দ ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ)। দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরকৃত স্বরলিপিসহ মুদ্রিত হয়েছিল।
গীতি-চর্চ্চা (বিশ্বভারতী, পৌষ ১৩৩২)। গান সংখ্যা: ১৮৪। পৃষ্ঠা: ১৪৪। [নমুনা]
সঞ্চয়িতা [বিশ্বভারতী, পৌষ ১৩৩৮, গীতিমাল্য, শিরোনাম: সুরের আগুন, পৃষ্ঠা: ৪৮২] [নমুনা]
স্বরবিতান চত্বারিংশ (৪০) খণ্ডের (বৈশাখ ১৪১৩) ১৪ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৪৩-৪৫। [নমুনা]
		প্রকাশের 
		কালানুক্রম:  
		আনন্দসঙ্গীত পত্রিকার 'জ্যৈষ্ঠ ১৩২১ বঙ্গাব্দ' সংখ্যায় গানটি প্রকাশিত 
		হয়েছিল। ১৩২১ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত 'গীতিমাল্য' নামক গন্থে গানটি অন্তর্ভুক্ত 
		হয়। 
		১৩২৩ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত গানটি 
		কাব্যগ্রন্থ নামক গ্রন্থের 'গীতিমাল্য' অংশে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ১৩২৫ 
		বঙ্গাব্দে দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পাদিত গীতলেখা নামক স্বরলিপি গ্রন্থের 
		দ্বিতীয় ভাগে এই 
		গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এরপর ১৩৩২ বঙ্গাব্দে বিশ্বভারতী থেকে প্রকাশিত 
		'গীতি-চর্চ্চা' নামক গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
		১৩৩৮ বঙ্গাব্দের 
		
			
			
			পৌষ
		মাসে, রবীন্দ্রনাথের সম্পাদিত 'সঞ্চয়িতা' নামক 
		কবিতা ও গানের সংকলন প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে গীতিমাল্য অংশে 'সুরের আগুন' 
		শিরোনামে আলোচ্য গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়। 
		
		১৩৩৮ বঙ্গাব্দের আশ্বিন 
		মাসে প্রকাশিত গীতবিতানের দ্বিতীয় খণ্ডের প্রথম
		সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত হয়। 
		১৩৪৮ 
		খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত গীতবিতানের প্রথম খণ্ডের দ্বিতীয় সংস্করণে এই গানটি 
		গৃহীত হয় পূজা পর্যায়ে। 
		১৩৭১ 
		বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে প্রকাশিত গীতবিতানের অখণ্ড সংস্করণে 
		গানটি 
		পূজা পর্যায়ের ষষ্ঠ গান হিসেবেই অন্তর্ভুক্ত হয়। 
		
		 
গ. সঙ্গীত বিষয়ক তথ্যাবলী:
ভাঙাগান: এটি ভাঙা গান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রবীন্দ্রনাথ গানটির সুর গ্রহণ করেছিলেন একটি বাউল গান থেকে। গানটির রচয়িতার নাম পাওয়া যায় না। গানটি হলো−
            আগুন আছে ছাইয়ের ভিতর
            আগুন বার করে নে ছাই নেড়ে।
যদি দৈবযোগে জন্মালো আগুন
কেউ কেউ বলে রে ভাই পোড়া শোলার গুণ
আগুন ইস্পাতে মজুদ ছিল
            রে ভাই মজুত আছে পাথরে।
[সূত্র : রবীন্দ্রসঙ্গীত : লোকসঙ্গীতের ধারায় রচিত গান। মৃদুলকান্তি 
চক্রবর্তী। বাংলাদেশের হৃদয় হতে (সাহিত্য-সংস্কৃত ত্রৈমাসিক পত্রিকা), 
চতুর্থ বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮। পৃষ্ঠা : ৮৭]
 
রাগ ও তাল:
		
		
		স্বরবিতান  চত্বারিংশ (৪০) খণ্ডের 
		(বৈশাখ ১৪১৩) 
গৃহীত এই গানের স্বরলিপিতে রাগ-তালের উল্লেখ  নেই।
			
		উক্ত স্বরলিপিতে ছন্দোবিভাজন 
			দেখানো 
হয়েছে,
			৩।৩ 
মাত্রা ছন্দে
		
		
		দাদরা
		 
তালে নিবদ্ধ।
			
                        
[দাদরা তালে 
নিবদ্ধ রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
                       
অঙ্গ: বাউল তাল:< দাদরা। [রবীন্দ্রসংগীত: রাগ-সুর নির্দেশিকা। সুধীর চন্দ। প্যাপিরাস, ডিসেম্বর ২০০৬। । পৃষ্ঠা: ৫৫]।