বাঁকখালি নদী
বাংলাদেশের
বান্দরবান
ও
কক্সবাজার জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৯ কিলোমিটার
এবং গড় প্রস্থ ৯৫ মিটার। পাহাড়ি অঞ্চলের কারণে এর গতিপথ সর্পিল।
কক্সবাজার এই নদীর তীরে অবস্থিত।
ভারতের
মিজোরাম
রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড় থেকে উৎপন্ন ঝর্ণাধারাগুলো
বাংলাদেশের
নাইক্ষ্যাংছড়ি
উপজেলায় মিলিত হয়ে বাঁকখালি নদীর উৎপত্তি হয়েছে। এরপর নদীটি
নাইক্ষ্যাংছড়ি
অতিক্রম করে
কক্সবাজার জেলার
রামু উপজেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে
মহেশখালী
চ্যানেলে পতিত হয়েছে।
১৪০৬ খ্রিষ্টাব্দে বার্মার রাজা ত্রিশ হাজার সৈন্য নিয়ে
আরাকান রাজ্য
আক্রমণ করেন। এই সময়ে বাঁকখালির তীরবর্তী অঞ্চলে আরকানের মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। এরপর
থেকে আরাকান রাজ্যের উত্থান-পতনের মধ্য এই অঞ্চলে মানুষ শরানর্থী হিসেবে আশ্রয়
নিয়েছে বহুবার। সবচেয়ে অধিক সংখ্যক আরাকান থেকে শরনার্থী এই অঞ্চলে এসেছিল অষ্টাদশ
শতাব্দীতে। ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বার্মার রাজা ভোদপায়া আরাকান আক্রমণ করেন। এই সময় হাজার
হাজার আরাকানী
পালিয়ে বাকখালী নদীর তীরবর্তী
রামু এবং
কক্সবাজারে আশ্রয়
নিয়েছিল। এই সময়
ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষ থেকে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স শরনার্থীদের আশ্রয়ের
ব্যবস্থা করেছিলেন। ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে হিরাম কক্স মৃত্যুবরণ করেন। এই সময়ের ভিতরে
বহু আরাকানী এই অঞ্চলে স্থায়ী আবাস খুঁজে পেয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ভিতের প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার মানুষ
চট্টগ্রাম
অঞ্চলে চলে আসে। এই সময় ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নামানুসারে
কক্সবাজার নাম চালু হয়। মৃত্যুর পর বাঁকখালীর তীরে হিরাম কক্সকে সমাহিত করা
হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের সমাধী বাঁকখালী নদীর ভাঙনে নদীগর্ভে
বিলীন হয়ে গেছে।
এই নদীপথে চট্টগ্রাম অঞ্চলে আরব বণিক, পর্তুগিজ ও হার্মাদ-আরাকান জলদস্যুরা
হানা দিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে কক্সবাজারে ব্রিটিশ-মার্কিন সৈন্যসহ মিত্র সৈন্যরা এসে
বাঁকখালী নদীতে কাঠের তৈরী জেটি নির্মাণ করেছিল। এখানে অস্ত্র-গোলাবারুদ সরবরাহের জন্য
জেটিতে জাহাজ ভিড়ত।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, ১৫ ডিসেম্বর ভারতীয় বিমানবাহী জাহাজ
'বিক্রান্ত'সহ অন্যান্য জাহাজ থেকে মিত্রবাহিনীর সৈন্যরা জলযানযোগে বাঁকখালী নদী
হয়ে কক্সবাজারে অবতরণ করেছিল।