অঙ্গ
[অভিধান
অঙ্গ]
খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম-ষষ্ঠ শতকের প্রাচীন ভারতের ষোড়শ মহাজনপদের একটি অন্যতম জনপদ।
বর্তমান ভারতের বিহার রাজ্যের ভাগলপুর ও মুঙ্গের জেলায় এই মহাজনপদ গঠিত হয়েছিল।
ঋগ্বেদ
অঙ্গের উল্লেখ পাওয়া যায় না। অথর্ববেদে অঙ্গবাসীদের ব্রাত্য জাতি নামে অভিহিত করা
হয়েছে। এ সময় অঙ্গবাসীরা শোণ ও গঙ্গা নদীর অববাহিকায় বসবাস করতো।
পাণিনি অঙ্গ দেশকে বঙ্গ, কলিঙ্গ ও পুণ্ডেরকে ভারতের মধ্যদেশের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে
উল্লেখ করেছেন।
মহাভারতে উল্লেখ আছে যে,
বলি
রাজের অনুরোধে ঋষি
দীর্ঘতমা মহিষী সুদেষ্ণার
গর্ভে পাঁচটি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন।
এই পাঁচটি সন্তান হলেন−অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুণ্ড্র ও সুহ্ম।
বলি
রাজা তাঁর রাজত্বকে এই পাঁচজন ক্ষেত্রজ পুত্রকে পাঁচটি অঞ্চল শাসনের অধিকার প্রদান
করেন। এই পুত্রদের নামে রাজ্যগুলোর নাম হয়েছিল অঙ্গদেশ, বঙ্গদেশ, কলিঙ্গদেশ,
পুণ্ড্রদেশ ও সুহ্মদেশ।
রামায়ণে অঙ্গদেশের উৎপত্তি নিয়ে
ভিন্নতর কথা জানা যায়।
রামায়ণে কথিত হয়েছে যে,
কামদেব
মহাদেবর ক্রোধে এইস্থানেই অঙ্গ পরিত্যাগ করিয়া
অনঙ্গ নামপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। সেখান থেকে এই রাজ্যের নামকরণ করা হয়েছিল অঙ্গ। রাজা দশরথের অন্তরঙ্গ মিত্র ছিলেন অঙ্গরাজ লোমপদ। তিনি ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির
সাহায্যে যজ্ঞানুষ্ঠান করেন ও নিজকন্যা শান্তার সহিত মুনির বিবাহ দেন।
মহাভারতে
কথিত হয়েছে- দুর্যোধন
কর্ণকে অঙ্গরাজ্যের অধিপতি করেছিলেন।
এই রাজ্যের রাজধানীর নাম ছিল চম্পা (চম্পাপুরী, চম্পানগরী)।
বর্তমান
ভারতের ভাগলপুরের সন্নিকটে এই নগরীর ধ্বাংসবশেষ পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়।
মহাভারতে ও বিভিন্ন পুরাণে এই নগরীকে মালিনী বা মালিন নামে অভিহত করা হয়েছে।
গৌতমবুদ্ধের গৃহত্যাগের সময়ে অঙ্গরাজ্য
মগধের অন্তর্ভুক্ত
ছিল। এই সময়
বিম্বিসার ছিলেন অঙ্গ-মগধের রাজা। অজাতশত্রু যুবরাজ অবস্থায় অঙ্গের শাসনকর্তা ছিলেন।
গৌতমবুদ্ধ ও
মহাবীরেরর
জীবনের একাধিক ঘটনার সহিত সংশ্লিষ্ট হওয়ায় চম্পা উভয় সম্প্রদায়ের কাছেই পুণ্যতীর্থস্থান।
প্রাচীন ভারতের শিল্পসমৃদ্ধ এবং
বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিল। পঞ্চম শতাব্দীতে ও সপ্তম শতাব্দীতে ভারতভ্রমণকালে
চীনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন চম্পা বা চান্-পোতে এসেছিলেন।