সমনাম:
ধন্নাসিকা, ধানেশ্রী, ধানুশী, ধানসী।
উত্তর ভারতীয়
সঙ্গীত প্রাচীন রাগ বিশেষ।
পণ্ডিত অহোবল তাঁর 'সঙ্গীত-পারিজাত'
গ্রন্থের রাগ-প্রকরণ অধ্যায়ে এই রাগের বিবরণ দিয়েছেন হনুমন্ত মতানুসারে। এই
মতানুসারে স্বরসংখ্যার বিচারে ধানশ্রী রাগের তিনটি জাতির হতে পারে। এগুলো হলো-
-
ঔড়ব- সম্পূর্ণ: একে রিধ হীনা বলা
হয়েছে। কারণ এর আরোহণে ঋষভ ও ধৈবত ব্যবহৃত হয় না। একে অনেকে একালের বেলাবলীর মতো
মনে করেন। এর গ্রহস্বর গান্ধার এবং ন্যাস স্বর মধ্যম। এর বাদী ও সম্বাদী স্বর স
ও প।
-
আরোহণ: স গ ম প ন র্স
-
অবরোহণ: র্স ন ধ প ম গ র স
-
ষাড়ব-ষাড়ব
-
আরোহণ: স র গ ম প ন
র্স
-
অবরোহণ: র্স ন প ম গ র স
-
ঔড়ব-ঔড়ব
-
আরোহণ: স গ ম প ন র্স
-
অবরোহণ: র্স ন প ম গ র স
এই রাগটি আধুনিক ধানী রাগের অনুরূপ।
এই রাগের বাদী স ও সম্বাদী পা। এর গ্রহস্বর গা। পরিবেশনের সময় প্রাতঃকাল।
উল্লেখ্য
হনুমন্ত মতে এটি শ্রীরাগের পত্নী রাগিণী।
সঙ্গীতরত্নকারে এই রাগের নাম ধন্নাসিকা। মেলের নাম চন্দ্রপ্রিয়। এর বাদীস্বর স এবং
সমবাদী ম। এর ন্যাস স্বর মা। এই রাগে ঋষভ বর্জিত। জাতি ষাড়ব ষাড়ব। এতে গান্ধার অল্প
ব্যবহৃত হয়। গান্ধারকে এই রাগের অনুবাদী স্বর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি ধীর ও
বীর রসের রাগ।
রাগ-বিরোধ গ্রন্থে রাগটিকে শিবমতে বর্ণনা করা হয়েছে।
এই মতে এটি শ্রী মেলের অন্তরগত। এই রাগে র
এবং ধা দুর্বল। এর এই রাগে স বাদীস্বর, গ্রহস্বর এবং ন্যাসস্বর হিসেবে উল্লেখ করা
হয়েছে। পরিবেশনের সময় প্রাতঃকাল।
কল্পিনাথের মতে রাগটি মেঘ রাগের একটি রাগিণী। পক্ষান্তরে ভরতমতে
শ্রীরাগের চতুর্থ রাগিণী। এতে
তীব্রগান্ধার এবং কোমল ঋষভ ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া ঋষভ ও ধৈবত বক্রভাবে ব্যবহৃত হয়।
এই সূত্রে আরোহের রূপ হয়- স গ ঋ ম ধ প ন র্স। এর বাদী স্বর নিষাদ, সমবাদী গান্ধার
এবং গ্রহস্বর পঞ্চম। এতে কড়ি মধ্যমের ব্যবহার রয়েছে। পরিবেশনের সময় দিবা তৃতীয়
প্রহর।
সঙ্গীত দামোদরে একে মালব রাগের রাগিণী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মালব রাগের রাগিণীগুলো ছিল- ধানসী (ধনাশ্রী), মানসী, রামকীরী (রামকেলী),
সিন্ধুতা (সৈন্ধবী), আসাবরী, ভৈরবী। এই রাগে গান্ধার এবং নিষাদ কোমল।
একালের মতে রাগটি কাফি ঠাটের অন্তর্ভুক্ত
হয়।
আধুনিক মতে আরোহে ঋষভ ও ধৈবত ব্যবহৃত
হয় না। ঠাটের বিচারে
কাফি হলেও এর চলন ভৈরবী অঙ্গের প্রাধান্য
লক্ষ্য করা যায়। এই রাগে মধ্যম দুর্বল। এর সাথে
ভীমপলশ্রী
রাগের মিল আছে। এর একটি কোমল প্রকরণ আছে। এর নাম কোমল ধানেশ্রী।এই
রাগে প জ্ঞ, জ্ঞ প সঙ্গতি বেশি লক্ষ্য করা যায়।
ভৈরবী
ঠাটের ধনাশ্রীতে কোমল ধৈবত ব্যবহৃত হয়।
বাংলা গানে এই রাগ প্রথম
ব্যবহৃত হয়েছে চর্যাপদে (৬৫০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দ)।
চর্যাগীতিতে অবশ্য এই রাগের ধনসী উল্লেখ আছে। এই রাগে নিবদ্ধ গানের সংখ্যা ১টি। এই
গানটি হলো ১৪।
তথ্যসূত্র:
-
উচ্চাঙ্গ ক্রিয়াত্মক সঙ্গীত। শক্তিপদ ভট্টাচার্য। ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭।
-
চর্যাগীতিকোষ। নীলরতন সেন সম্পাদিত।
সাহিত্যলোক। কলকাতা। জানুয়ারি ২০০১।
- চর্যাগীতি
পদাবলী, সুকুমার
সেন, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৯৯৫
- চর্যাগীতি পরিক্রমা। দে'জ সংস্করণ।
জানুয়ারি ২০০৫।
- চর্যাগীতি পাঠ। ড. মাহবুবুল হক।
পাঞ্জেরী পাবলিকেশান লি.। ঢাকা। জুলাই ২০০৯।
- চর্যাগীতিকা। সম্পাদনায় মুহম্মদ
আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা। স্টুডেন্ট ওয়েজ। অগ্রহায়ণ ১৪০২।
-
ভারতবর্ষ [মাঘ ১৩৪৫ বঙ্গাব্দ (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯)।
- রাগ-রূপায়ণ, প্রথম খণ্ড। সুরেশ
চক্রবর্তী। জেনারেল প্রিন্টার্স য়্যান্ড পাংব্লিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড।
- সঙ্গীত-পারিজাত। অহোবল।
- মারিফুন্নাগমাত। রাজা নওয়াব আলী খান। অনুবাদ মকসুদুর রহমান।
- হাজার বছরের
পুরাণ বাঙ্গালা বৌদ্ধ গান ও দোঁহা, হরপ্রসাদ
শাস্ত্রী, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, কলকাতা, ১৩২৩