খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর ভিতরে গ্রামরাগের সংখ্যা বৃদ্ধি
পেয়েছিল। জাতি গানে এসকল গানের ব্যবহার হয়েছে। এই সময় আদি কৌশিক রাগের সাথে
অন্যান্য রাগের সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়েছিল অন্যান্য রাগ।
এই সময়ের প্রচলিত গানগুলোর সাধারণ
নাম ছিল গীত। খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে মতঙ্গের রচিত বৃহদ্দদেশীতে এই
গীতগুলোকে ৭টি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। এগুলো হলো- শুদ্ধা, ভিন্নকা, গৌড়িকা, রাগগীতি,
সাধারণী, ভাষা ও বিভাষা। বৃহদ্দেশীতে উল্লেখ
আছে-চোক্ষকৈশিক রাগটি তৈরি হয়েছিল কৈশিকী এবং কর্মারবী জাতির সংমিশ্রণে।
সঙ্গীতরত্নাকরে এই রাগের পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে-
১. সা সা সা সা সা সা নী ধা
২. সা সা রী মা সা রী গা মা
৩. সা গা রী সা সা সা সা সা
৪. সা সা সা সা নী সা নী নীৰ
৫. মা মা গা রী মা মা পা পা
৬. ধা নী পা মা ধা মা ধা সা
৭. সা সা সা সা নী ধা পা পা
৮. ধা নী গা মা পা পা পা পা
[সঙ্গীতরত্নাকর: রাগবিবেকাধ্যয়-দ্বিতীয় প্রকরণ। ৩০ (খ)-৩২]
এর ভিন্নতর রূপ হিসেবে সৃষ্টি হয়েছিল ভিন্নকৌশিক। এটি ছিল
ভিন্নকা গীতের অন্তর্গত। এই রাগটি শুদ্ধকৈশিকের মতই। শুধু চলন ছিল ভিন্নরকম। শুদ্ধ
কৈশিকে তার সপ্তকের ব্যবহার ছিল। সে তুলনায় ভিন্ন কৈশিক ছিল মন্দ্রবহুল।
পরবর্তী সময়ে এই রাগটিকে ভাষারাগের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কৈশিকী ভাষারাগের
অংশস্বর ছিল মধ্যম এবং ন্যাস স্বর ছিল পঞ্চম এতে মধ্যম, পঞ্চম এবং ধৈবতের বাহুল্য
ছিল। বৃহদ্দেশীতে একে সংকীর্ণ রাগের পর্যায়ে ফেলা হয়েছিল। সঙ্গীতরত্নারে ভাষারাগ
কৈশিকীর গ্রহ, অংশ ও ন্যাস স্বর ছিল পঞ্চম এবং অপন্যাস ছিল মধ্যম। এটি মধ্যমগ্রামের
অন্তর্ভুক্ত হওয়াতে ষড়্জ, গান্ধার ও মধ্যম তার সপ্তকে ব্যবহৃত হতো।
খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতাব্দীতে রচিত লোচন শর্মার রচিত 'রাগ তরঙ্গিনী' গ্রন্থে
কৌশিক-কে আদি রাগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই রাগের অধীনে ছিল পাঁচটি রাগিণী। এগুলো
হলো- টোড়, খাম্বাবতী, গৌরী, ককুভ ও গুণকরি (গুণকেলী)।
বর্তমানে এটি অপ্রচলিত রাগ।
এই রাগে মালকোষের রূপ অধিক পাওয়া যায়। এত পঞ্চম ব্যবহারের ফলে মালকোষের রূপ থেকে পৃথক রূপ লাভ করে।
তবে এতে পঞ্চম ব্যবহারের ফলে ধানশ্রীর রূপ ফুটে ওঠে। এই রাগের সাথে কানাড়া অঙ্গের সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়েছে কৌশিক কানাড়া।
কৌশিক কানাড়া রাগটি একসময় বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছিল। বর্তমানে এটি প্রচলিত। বাংলা গানে কাজী নজরুল ইসলাম এই রাগে গান রচনা করেছিলেন। গানটি হলো- 'শ্মশানে জাগিছে শ্যামা'। গানটির স্বরলিপি প্রকাশিত হয়েছিল ভারতবর্ষ পত্রিকার শ্রাবণ ১৩৪৫ সংখ্যায় [পৃষ্ঠা ২০৩-২০৪]। স্বরলিপি করেছিলেন জগৎ ঘটক। ওই পত্রিকায় প্রকাশিত স্বরলিপির শেষে [পৃষ ২০৪], স্বরলিপিকার এই রাগটির বিশেষ পরিচয় দিয়েছেন।আরোহণ : ণ্ স, জ্ঞ, ম, ম, দ, ণ, র্স
অবরোহণ: র্স ণ দ ম, প, প ম, জ্ঞ র স
ঠাট: আশাবরী মতান্তরে: কাফি
জাতি: ষাড়ব-সম্পূর্ণ।
বাদীস্বর: মধ্যম
সমবাদী স্বর: ষড়্জ
অঙ্গ: পূর্বাঙ্গ।
সময়: মধ্য রাত।
পকড় : জ্ঞম দম, প, জ্ঞমরস।