মেঘমল্লার
সমনাম: মেঘ, মল্লার।
উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে বর্ষা ঋতুর  রাগ বিশেষ।

বর্তমানে একে কাফি ঠাটের রাগ অন্তর্গত রাগ হিসেবে মান্য করা হয়। প্রাচীন ভারতীয় রাগশাস্ত্র মতে এই রাগট ষড়্‌জ গ্রামের উত্তরমন্দ্রা মূর্চ্ছনা থেকে উৎপন্ন হয়েছিল। এই বিচারে এই রাগটি একালের উত্তরভারতীয় দশ ঠাটের মধ্যে বিলাবল ঠাটের রাগ  হিসেবে উল্লেখ করা যায়। পণ্ডিত অহোবলের 'সঙ্গীত পারিজাত' গ্রন্থে এর আরোহণ-অবরোহণ উল্লেখ আছে-
    ‌    স র ম প ধ র্স- র্স ধ প ম র স

ভরত মতে এই রাগের ছিল- ৫টি রাগিণী, ৫টি পুত্র, ৫টি পুত্রবধূ। এগুলো ছিলো কালক্রমে এই রাগের শুদ্ধ নিষাদ-এর পরিবর্তে কোমল নিষাদের ব্যবহার শুরু হয়। ফলে রাগ রূপের পরিবর্তন ঘটে। এই সূত্রে এই রাগকে কাফি ঠাটের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে এই রাগের যে সাধারণ পরিচিতি উল্লেখ করা হয়, তা হলো-
আরোহণ: স র ম প ণ র্স
অবরোহণ; র্স ণ প, মর, ণ্‌স।
ঠাট: কাফি
জাতি: ঔড়ন-ঔড়ব (গান্ধার ও ধৈবত বর্জিত)
বাদীস্বর: ষড়্‌জ
সমবাদী স্বর: পঞ্চম
অঙ্গ: পূর্বাঙ্গ।
পকড়: স মর প, মপ, ণ, ণ, র্স।

এই রাগের প্রকৃতি গম্ভীর। বর্ষাকালের রাগ হিসেবে মেঘমল্লার সর্বাধিক পরিচিত। এ রাগে স্বরগুলো বিশেষভাবে আন্দোলিত হয়। এই রাগে কোমল নিষাদের ষড়্জ সহযোগে বিশেষ আন্দোলিত হয়। এছাড়া অবরোহণে ঋষভ আন্দোলিত হয়। সঙ্গীতগুরুরা কোমল নিষাদের আন্দোলেনর মধ্যে মেঘ সঞ্চারের অনুভব ধারণ করেন এবং প্রকাশ করেন। এই রাগের সাথে মধুমদ সারং-এর মিল আছে। উভয় রাগের উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হলো- মধুমদ সারং-এ কোমল নিষাদ সরসারি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু মেঘ মল্লারে কোমল নিষাদ ষড়্‌জকে সাথে নিয়ে আন্দোলিত হয়। যদিও এই রাগকে সাধারণভাবে বর্ষার রাগ বলা হয়। বর্ষার নানা রূপ রয়েছে। এর মধ্যে বিশেষ একটি রূপ আকাশের ঘন মেঘের সঞ্চার এবং গুরুগম্ভীর মেঘ গর্জনের সাথে রুমঝুম নৃত্যের ছন্দে বর্ষণ। মেঘ মল্লার ঝঞ্ছাবিক্ষুব্ধ বর্ষার রাগ নয়। কারণ এই রাগের প্রকৃত শান্ত, স্নিগ্ধ এবং গম্ভীর। এই রাগের প্রেমের অনুভূতি জাগ্রত হয়, তাই একে শৃঙ্গারধর্মী রাগ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আরোহণ: স র ম প ণ র্স
অবরোহণ; র্স ণ প, মর, ণ্‌স।
ঠাট: কাফি
জাতি: ঔড়ন-ঔড়ব (গান্ধার ও ধৈবত বর্জিত)
বাদীস্বর: ষড়্‌জ
সমবাদী স্বর: পঞ্চম
অঙ্গ: পূর্বাঙ্গ।
পকড়: স মর প, মপ, ণ, ণ, র্স।

তথ্যসূত্র: