দিন
বানান বিশ্লেষণ:দ্+ই+ন্+অ
উচ্চারণ: d̪in
(দিন্)।
শব্দ-উৎস:
সংস্কৃত দিন>
বাংলাদিন।
রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ:
দো
(ছেদন করা)
+
ইন্ (ইনচ্),
কর্তৃবাচ্য।
পদ:
বিশেষ্য
অর্থ:
১.
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { |
সময়-একক
| মাপ
| বিমূর্তন |
বিমূর্ত-সত্তা |
সত্তা |
}
অর্থ:
১.১. পৃথিবী তার নিজ অক্ষের উপর একটি আবর্তন শেষ করতে যে সময় নেয়। এই সময় একক ২৪ ঘণ্টার সমতুল্য,
যা পৃথিবীর বিচারে দিন হিসাবে বিবেচিত হয়
সমার্থক শব্দ: দিন,দিব, দিবস, দিবা, বার, বাসর, রোজ।
ইংরেজি:
day, twenty-four hours, twenty-four hour period,
24-hour interval, solar day, mean solar day ।
যুক্তশব্দ:
১.২. অনিরদিষ্ট সময় একক। যেমন- দুঃখের দিন শেষ। দিনের পরে দিন চলে যায়।
সমার্থক শব্দাবলি: দিনকাল, দিনক্ষণ
যুক্ত শব্দ:
- পূর্বপদ: দিনকাল, দিনগত, দিনক্ষণ, দিনক্ষয়, দিনপত্রী, দিনমুজুর।
পদগুচ্ছ:
- দিনকে দিন: দিনের পরে দিন
- দিনকে রাত করা: সত্যকে মিথ্য প্রতিপন্ন করা
- দিন খাটা: প্রাত্যহিক সময় ধরে শ্রম দেওয়া
- দিন ঘনিয়ে আসা: মৃত্যুদশা এগিয়ে আসা
- দিন গুজরান: জীবনযাপন, সময় অতিবাহিত করা
- দিনদগ্ধা: জ্যোতিষশাস্ত্রে বার ও তিথির একত্রে যোগের ফলে, যে দিন পূজা বা শুভ কাজে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
- দিন দিন: একাধিক দিনের ক্রমাগত অতিবাহিত হওয়ার সূত্র।
- দিনে দিনে: একাধিক দিনের ক্রমাগত অতিবাহিত হওয়ার সূত্র।
২.
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{সময়-কাল
|
মৌলিক পরিমাপ |
মাপ |
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত-সত্তা |
সত্তা |
}
অর্থ: সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়কে দিন বলা হয়।
সমার্থক শব্দাবলি:
অংশক,
অহঃ,
অহ,
অহন,
অহ্ন,
দিন,
দিনমান।
ইংরেজি:
day
যুক্ত
শব্দ:
-
পূর্বপদ:
দিনকর,
দিনকাল,
দিননাথ,
দিনপতি,
দিনমণি,
দিনমান, দিনযামিনী, দিনরাত, দিনশেষ, দিনাত্যয়, দিনান্ত, দিনাবসান,
দিনেশ,
-
উত্তরপদ: নিশিদিন
পদগুচ্ছ:
-
দিনকাল: অতিবাহিত চলমান সময়
-
দিন দুপুরে: প্রকাশ্য দিবালোকে
-
দিনে ডাকাতি: প্রকাশ্যে এবং নির্লজ্জভাবে
অসৎ কাজ করা বা প্রতারণা করা
-
দিনের মুখ: সূর্যালোকিত দিন।
জ্যোতির্বিজ্ঞান মতে
পার্থিব সময় নিরূপক সময়-একক বিশেষ। পৃথিবী তার নিজ অক্ষের উপর একবার সম্পূর্ণ
ঘূর্ণনের জন্য যে সময় নেয়,
তাকে সাধারণ অর্থে দিন বলা হয়।
কোনো বিশেষ স্থানের বিচারে
দিনের সময়-দৈর্ঘ্য হিসাব করা হয়। সারা বছর ধরে এই হিসাব একই রকম থাকে না। যেমন
ডিসেম্বর মাসে দিনের দৈর্ঘ্য ২৪ ঘণ্টা ৩০ সেকেণ্ড। আবার সেপ্টেম্বর মাসে এই
সময়-দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ২৩ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট ৩৯ সেকেণ্ড। সাধারণভাবে দিনের
সময়-দৈর্ঘ্যকে ধরা হয় ২৪ ঘণ্টা। এই সময়কে মোটা দাগে বলা হয় এক সৌর দিন। কিন্তু
সাধারণভাবে যতক্ষণ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়কে দিন বলা হয়।
ভারতীয় মতে দিনের বিভাজন যেভাবে করা
হয়, তা হলো−
৬০ ক্ষণ=১ লব
৬০ লব=১ নিমেষ
৬০ নিমেষ=১ কাষ্ঠা
৬০ কাষ্ঠা=১ অতিপল
৬০ অতিপল=১ বিপল
৬০ বিপল= ১ পল [২৪ সেকেন্ড]
৬০ পল=১ দণ্ড [২৪ মিনিট]
৬০ দণ্ড=১ অহোরাত্র [২৪ ঘণ্টা=১ দিন]
৬০ অহরাত্র=১ ঋতু
৬ ঋতু=১ বৎসর।
ভারতী মতে চান্দ্রমাসের দিনের নাম তিথি। এই
মাস শুরু হয় প্রতিপদ থেকে। প্রতিপদ থেকে অমাবশ্যা পর্যন্ত হলো চান্দ্রমাসের প্রথম
পক্ষ। এরপর অমাবস্যা থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত দ্বিতীয় পক্ষ।
কিন্তু সূর্য নামক নক্ষত্রের বিচারে নাক্ষত্রদিবস বিচার করা হয়, অত্যন্ত
সূক্ষ্মভাবে। মূলত মহাবিষুব রেখার উপর একই রকম দুটি স্থানের মধ্যবর্তী সময়
পার্থক্যকে বলা হয়- এক নাক্ষত্রদিবস। পৃথিবীর গড় নাক্ষত্রদিবসের পরিমাণ ২৩
ঘণ্টা ৫৬ মিনিটি ৪.০৯ সেকেণ্ড। আন্তর্জাতিকভাবে সৌরদিনের স্বীকৃত মান হলো-
৮৬,৪০০ সেকেন্ড।
বর্ষ গণনায়
দিনের নামটি প্রাধান্য পায় না। এক্ষেত্রে মাসের দিন হিসাবে পরিচিতি পায়। যেমন ২০০০
খ্রিষ্টাব্দে জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ। মাসের ক্ষেত্রেও দিনের সংখ্যাকেই বিবেচনা
করা হয়। যেমন- মাঘ মাসের ১০ তারিখ বা ১০ই মাঘ। দিনের নামকরণ আসে সপ্তাহের বিচারে।
এক্ষেত্রে সপ্তাহের কততম দিন তার পরিবর্তে দিনের নাম উল্লেখ করা হয়।
মাসের দিন গণনার ক্ষেত্রে বাড়তি তথ্য হিসেবে দিনের নাম ব্যবহৃত হয়। যেমন− বুধবার,
২৮ আগস্ট ২০১৩, ১৩ ভাদ্র ১৪২০, ২০ শাওয়াল ১৪৩৪।
সপ্তাহের দিনের নাম একটি অনুক্রমে সাজানো থাকে। সপ্তাহের আরম্ভ যে দিন থাকে,
সপ্তাহের শেষে সেই নামটি দিয়ে আবার নতুন সপ্তাহ শুরু হয়। যেমন−
- বঙ্গাব্দের
দিনগুলো : শুক্র, শনি, রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি।
- গ্রেগোরিয়ানের পঞ্জিকার দিন গুলো :
Sunday, Monday, Tuesday, Wednesday, Thursday, Friday, Saturday
সূত্র:
- চলন্তিকা। রাজশেখর বসু। এমসি
সরকার অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিঃ। ১৪০৮। পৃষ্ঠা: ৩৩১
- বঙ্গীয় শব্দকোষ (প্রথম খণ্ড)।
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সাহিত্য অকাদেমী। ২০০১। পৃষ্ঠা: ১১০৪
- বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা
অভিধান। বাংলা একাডেমী, ঢাকা। মার্চ ২০০৫।
পৃষ্ঠা: ৬০৪।
- শব্দবোধ অভিধান। আশুতোষ দেব।
দেব সাহিত্য কুটির। মার্চ ২০০০। পৃষ্ঠা: ৪৫৭।
- শব্দসঞ্চয়িতা। ডঃ অসিতকুমার
বন্দোপাধ্যায়। নিউ সেন্ট্রাল বুক এজেন্সি প্রাঃ লিমিটেড। ২৩শে জানুয়ারি, ১৯৯৫।
পৃষ্ঠা: ৪৫৫
- সরল বাঙ্গালা অভিধান (সপ্তম
সংস্করণ, নিউবেঙ্গল প্রেস ১৯৩৬)। সুবলচন্দ্র মিত্র। পৃষ্ঠা: ৬৬০।