জ্ঞান
বানান বিশ্লেষণ: ঞ্+জ্+আ+ন্+অ।
উচ্চারণ:
gæ̃n
(গ্যাঁন্)
শব্দ-উৎস:
সংস্কৃত জ্ঞান>
বাংলা জ্ঞান
সংস্কৃত জ্ঞান>বাংলা জ্ঞান
রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: √
জ্ঞা
(জানা) +
অন্ (ল্যুট)
ভাববাচ্য। ক্লীবলিঙ্গ ।
পদ :
বিশেষ্য
১.
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{জ্ঞান |
অভিজ্ঞা |
মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা |
বিমূর্তন |
বিমূর্ত সত্তা |
সত্তা
}
অর্থ:
১.১ জ্ঞান (দর্শন): মানুষ ইন্দ্রিয় দ্বারা যে সকল অনুভূতি লাভ করে, তার
বৈশিষ্ট্যসমূহ মন দ্বারা শনাক্ত হয়। এই অনুভূতি থেকে জ্ঞানের উদ্ভব ঘটে।
অনুভূতিগুলো প্রাথমিকভাবে যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জ্ঞ (জানা)-এর জন্ম দেয়, তাকে বলা
হয় অভিজ্ঞা। আর একাধিক অভিজ্ঞার সূত্রে উৎপন্ন হয় জ্ঞান।
[বিস্তারিত দেখুন:জ্ঞান (দর্শন)]
সমার্থক শব্দাবলি:
অকল,
আক্কল,
আক্কেল, জ্ঞান।
১.২.সাধারণ ধারণা অর্থে: সাধারণভাবে কোনো বিষয়ের ধারণা উপলব্ধিকে
জ্ঞান বলা হয়।
সমার্থক শব্দাবলি: উপলব্ধি, বোধ, চেতনা, ধারণা।
উদাহরণ: আমার এই বিষয়ে ভালমন্দ কোন জ্ঞানই নাই
১.৩. অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান: ক্রমাগত চর্চা এবং বা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা ধারণা।
সমার্থক শব্দাবলি: অভিজ্ঞতা, পূর্বজ্ঞান।
উদাহরণ: তার ব্যবসায়ীক জ্ঞান খুবই কম।
১.৪.বিশেষজ্ঞান: কোনো
বিষয়ে বিশেষভাবে অর্জিত জ্ঞানের সার্বিক গুণের বিচারে সৃষ্ট ধারণা। এই বিচারে পাণ্ডিত্য
অর্থে জ্ঞান শব্দ ব্যবহার করা হয়।
উদাহরণ: তাঁর অঙ্কের জ্ঞান সর্বজনবিদিত।
১.৫. গভীর জ্ঞান: গভীরভাবে
জ্ঞাত হয়েছে এমন ধারণা ভিত্তিক জ্ঞান। এই জ্ঞানের সৃষ্টি হয় প্রজ্ঞা এবং
অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে। এই জ্ঞানের সাথে যুক্ত থাকে বিচার-বুদ্ধিগত বিশ্লেষণ এবং
সিদ্ধান্ত গ্রহণের পারঙ্গমতা।
সমার্থক শব্দ:
প্রতীতি, বুদ্ধি, বুদ্ধিমত্তা, ধী, ধীশক্তি, ধীগুণ
উদাহরণ: তাঁর জ্ঞানের গভীরতা প্রশংসনীয়
১.৬.তত্ত্বগত জ্ঞান: কোনো বিষয়ের উপদেশ বা মৌলিক ধারণাজাত জ্ঞান।
সমার্থক শব্দাবলি: তত্ত্ব-উপদেশ,তত্ত্বজ্ঞান
উদাহরণ:
অবসর গ্রহণের পর তাঁর প্রধান কাজ হয়েছে জ্ঞান বিতরণ করা।
১.৭.সাধারণভাবে যে কোনো শিক্ষা প্রদানের কার্যক্রম।
সমার্থক শব্দাবলি: শিক্ষা, বিদ্যা।
উদাহরণ:জ্ঞান বিতরণে জ্ঞান বাড়ে।
২. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{ চৈতন্য |
সুপ্রজ্ঞা দশা |
মনোগত দশা |
সত্তাগুণ |
বিমূর্তন |
বিমূর্ত সত্তা |
সত্তা
}
অর্থ: নিদ্রাহীন অবস্থায় মানুষ যে চৈতন্য দশায় অতিবাহিত করে তাকে বাংলাতে জ্ঞান হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
সমার্থক শব্দবলি: সংজ্ঞা, চেতনা
উদাহরণ: অত্যধিক গরমে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল
পদান্তর: জ্ঞানী, জ্ঞানিনী (বিশেষণ)
বিপরীত: অজ্ঞান, জ্ঞানহীনতা, অজ্ঞানতা।
[বোধবুদ্ধিহীন অর্থে]
অজ্ঞান
[চেতনাহীন অর্থে]।
উপসর্গজাত শব্দ: অজ্ঞান, অজ্ঞানতা, প্রজ্ঞান, বিজ্ঞান।
প্রত্যয়জাত শব্দ: জ্ঞানত, জ্ঞানিনী, জ্ঞানী, জ্ঞানবতী, জ্ঞানবান, জ্ঞানময়।
- যুক্তশব্দ
- পূর্বপদ: জ্ঞানকৃত,
জ্ঞানগম্যি, জ্ঞানগরিমা, জ্ঞানগর্ভ, জ্ঞানগোচর, জ্ঞানচক্ষু, জ্ঞানতৃষা, জ্ঞানতৃষ্ণা,
জ্ঞানদ, জ্ঞানদগ্ধ, জ্ঞানদা, জ্ঞানদাতা, জ্ঞানদায়ক, জ্ঞানদাত্রী, জ্ঞাননিষ্ঠ,
জ্ঞানপতি, জ্ঞানপাপী, জ্ঞানপিপাসা, জ্ঞানপিপাসু, জ্ঞানবাদ, জ্ঞানবাদিনী, জ্ঞানবাদী,
জ্ঞানবিজ্ঞান, জ্ঞানবুদ্ধি, জ্ঞানবৃদ্ধ, জ্ঞানযজ্ঞ, জ্ঞানযোগ, জ্ঞানলক্ষণা,
জ্ঞানলাভ, জ্ঞানলিপ্সা, জ্ঞানলিপ্সু, জ্ঞানশক্তি, জ্ঞানশালী, জ্ঞানশূন্য,
জ্ঞানসঞ্চার, জ্ঞানসাধন, জ্ঞানহত, জ্ঞানহারা, জ্ঞানহীন, জ্ঞানাঙ্কুর, জ্ঞানাঙ্কুশ,
জ্ঞানাগম, জ্ঞানাঞ্জন, জ্ঞানাতীত, জ্ঞানাভ্যাস, জ্ঞানেন্দ্রিয়, জ্ঞানোদয়।
- পরপদ : কর্তব্যজ্ঞান,
কাণ্ডজ্ঞান, কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন, কাণ্ডজ্ঞানহীন, কাণ্ডাকাণ্ডজ্ঞান, প্রকরণজ্ঞান,
ভালোমন্দজ্ঞান, রসজ্ঞান, লঘুগুরুজ্ঞান, সত্যজ্ঞান,
হতজ্ঞান, হিতাহিতজ্ঞান,
হ্রস্বদীর্ঘজ্ঞান।
- মধ্যপদ : রসজ্ঞানহীন।
সূত্র:
- চলন্তিকা। রাজশেখর বসু। এমসি সরকার অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লি: ১৪০৮। পৃষ্ঠা:
২৬৭।
- নন্দনত্ত্বের প্রথম পাঠ। কামরুল হায়দার। নবযুগ প্রকাশনী, ফেব্রুয়ারি ২০১৭। পৃষ্ঠা: ৯০
- বঙ্গীয় শব্দকোষ (প্রথম খণ্ড)। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সাহিত্য অকাদেমী। ২০০১। পৃষ্ঠা:১৫০।
- বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান। বাংলা একাডেমী, ঢাকা, মার্চ ২০০৫। পৃষ্ঠা: ১।
- বাঙ্গালা ভাষার অভিধান (প্রথম খণ্ড)। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস। সাহিত্য সংসদ। নভেম্বর ২০০০। পৃষ্ঠা: ১১৩
- শব্দবোধ অভিধান। আশুতোষ দেব। দেব সাহিত্য কুটির। মার্চ ২০০০। পৃষ্ঠা: ৭৩
- শব্দসঞ্চয়িতা। ডঃ অসিতকুমার বন্দোপাধ্যায়। নিউ সেন্ট্রাল বুক এজেন্সি প্রাঃ লিমিটেড। ২৩শে জানুয়ারি, ১৯৯৫। পৃষ্ঠা: ৯০।
- সচিত্র প্রকৃতিবাদ অভিধান (চতুর্থ সংস্করণ)। রামকমল বিদ্যালঙ্কার। ১২৯৫। পৃষ্ঠা: ৯৯ ।
- সরল বাঙ্গালা অভিধান (সপ্তম সংস্করণ, নিউবেঙ্গল প্রেস ১৯৩৬)। সুবলচন্দ্র মিত্র। পৃষ্ঠা: ৯৬।
wordnet 2.1