বেনজিন
বানান বিশ্লেষণ :
ব্+এ+ন্+অ+জ্+ই+ন্।
উচ্চারণ :
ben.ɟin
(বেন্.জিন্)।
বিদেশী শব্দের উচ্চারণ অনুসারে।
শব্দ-উৎস : ইংরেজি
Benzene>বাংলা
বেনজিন। ইউরোপে
ঐতিহাসিকভাবে
gum benzoin
(কখনো কখনো
benjamin,
benzoin resin নামেও অভিহিত করা হতো) থেকে
benzene
শব্দটি ফ্রেন্স, জার্মান, ইংরেজি
ইত্যাদি ভাষায় গৃহীত হয়েছে। খ্রিষ্টীয় ১৫শ
শতাব্দী পর্যন্ত এশিয়া থেকে গাম বেনজিন ইউরোপে রফতানি হতো। এটি ইউরোপের ঔষধশিল্পে
এবং সুগন্ধী প্রস্তুতকারকরা ব্যবহার করতেন। এই দ্রব্য থেকে ঊর্ধ্ব-পাতন পদ্ধতিতে
বেনজোইক এ্যাসিড তৈরি করা হতো। এই এ্যাসিডের অপর নাম ছিল বেনজোইন পুস্প (flowers
of benzoin)। আর বেনজোইক এ্যাসিড থেকে
যে হাইড্রোকার্বন অংশ পৃথক করা হয়, তার নাম দেওয়া হয় বেনজিন (
benzin, benzene) বেনজোল (benzol)।
১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে মাইকেল ফ্যারাডে প্রথম
প্রদ্যোতন গ্যাস (illuminating gas) থেকে উদ্ভূত দ্রব্যের তৈলাক্ত অবশিষ্টাংশ থেকে বেনজিন পৃথক করেন
এবং একটি পৃথক যৌগ-যৌগ হিসেবে শনাক্ত করেন। তিনি এর নাম দিয়েছিলেন
bicarburet of hydrogen। ১৮৩৩
খ্রিষ্টাব্দে Eilhard Mitscherlich
পাতন প্রক্রিয়ায় বেনজোয়িক এ্যাসিড থেকে যে জৈবযৌগটি পৃথক করেন, তার নাম দেন
benzin।
১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসি রসায়ন বিজ্ঞানী অগাস্টাস লরেন্ট (Auguste
Laurent) ফেনল নামক জৈব-যৌগের ভিত্তি
হিসেবে এর নাম রেখেছিলেন ফেন (phène
পদ : বিশেষ্য
একটি এ্যারোম্যাটিক হাইড্রোকার্বন শ্রেণির জৈব রাসায়নিক যৌগ। এর আণবিক সঙ্কেত C6H6। এর ভিত্তি হিসেবে থাকে ৬টি কার্বন পরমাণুর একটি বলয়। এর প্রতিটি কার্বনের সাথে ১টি করে হাইড্রোজেন থাকে। প্রতিটি বেনজিন অণুতে শুধু হাইড্রোজেন ও কার্বন থাকে। এই কারণে একে হাইড্রোকার্বন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বেনজিন বর্ণহীন, উচ্চদাহ্য, গ্যাসোলিনের মতো মিষ্টি গন্ধযুক্ত
এবং উচ্চ গালনাঙ্কের তরল পদার্থ। আণবিক ভর : ৭৮.১১ গ্রাম
মোল -১।
ঘনত্ব ০.৮৭৬৫ গ্রাম/ঘন সেন্টিমিটার। গলনাঙ্ক ৫.৫ সেন্টিগ্রেড এবং স্ফুটনাঙ্ক
৮০.১ সেন্টিগ্রেড। পানি,
এ্যাল্কোহল, ক্লোরোফর্ম, কার্বন-টেট্রাক্লোরাইড, ডাইইথাইল
ঈথার, এ্যাসিটোনে দ্রবীভূত হয়।
বেনজিনকে এ্যারোম্যাটিক হাইড্রোকার্বন-এর
মাতৃ যৌগ বলা হয়। কারণ,
বেনজিন ও বেনজিনজাত বিশেষ অসম্পৃক্ততা বিশিষ্ট
বলয়াকার সমধর্মী জৈব যৌগসমূহকে এ্যারোমেটিক যৌগ বলা হয়।
বিভিন্ন উৎস থেকে বেনজিন তৈরি করা হয়। কয়লার অন্তর্ধূম পাতন, আলকাতরা, পেট্রোলিয়াম
তেল থেকে বেনজিন পৃথক করা হয়। কয়লার অন্তর্ধূম পাতন প্রক্রিয়া প্রাপ্ত কোলগ্যাস বা
আলকাতরা থেকে প্রাপ্ত লঘু তেল তৈরি করা হয়।
আলকতরা ও কোলগ্যাস থেকে প্রাপ্ত
লঘু তেলে
বেন্জিন,
টলুইন, জাইলিন, থায়োডিন,
পিরিডিন, এ্যানিলিন, ফিনোল ইত্যাদি থাকে। এই তেলের সাথে সালফিউরিক এ্যাসিড
যুক্ত করলে, এ্যানিলিন, পিরিডিন ও অধিকাংশ থায়োডিন দূরীভূত হয়। এরপর এর সাথে
সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড মিশ্রিত করলে, ফিনোল ও সালফিউরিকি এ্যাসিড দ্রবীভূত হয়। এরপর
এই মিশ্রিত তরল পদার্থটিকে পানি দিয়ে ধৌত করা হয়। পরে এই তরল
পদার্থকে ৭০-১১১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় আংশিক পাতন করলে ৯০% বেনজল পাওয়া
যায়। বেনজলে প্রায় ৮০%
বেন্জিন থাকে। বেনজলকে ৮০-৮১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বার বার পাতন করে
প্রাথমিকভাবে প্রায় বিশুদ্ধ
বেন্জিন সংগ্রহ করা হয়। কারণ এর ভিতরে তখনও
টলুইন ও থায়িডিন থেকে
যায়। এরপর এই ভেজাল
বেন্জিন-কে ৫.৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে কেলাসিত করলে বিশুদ্ধ বেনজিন পাওয়া যায়।
ঔষধ, প্লাস্টিক, কৃত্রিম রাবার ও ডাই প্রস্তুত
করতে বেনজিন একটি বাণিজ্যিক দ্রাবক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
সূত্র :
বাংলা একাডেমী বিজ্ঞান বিশ্বকোষ। প্রথম খণ্ড।
রাসায়নিক মৌল। দ,ন, ত্রিফোনভ, ভ.দ. ত্রিফোনভ। মির
প্রকাশন, ১৯৮৮।