আজাদ রহমান
(১৯৪৪-২০২০ খ্রিষ্টাব্দ)
সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীতশিল্পী।

১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিভাগের বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম খলিলুর রহমান ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী। মাতার নাম আশরাফ খাতুন ছিলেন গৃহিণী। তিনি ছিলেন পিতামাতার আটটি সন্তানের ভিতর প্রথম।

তিনি
কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খেয়াল গানে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। কৃতী শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেছিলেন। এই সময় তিনি খেয়াল গানের পাশাপাশি বাংলা লোকগান, ধ্রুপদ, কীর্তন, টপ্পা, পঞ্চকবির গানের চর্চা করেন। এই সময় তিনি জনৈক খ্রিষ্টান ফাদারের কাছ পিয়ানো বাজানো শেখেন।

১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ আগষ্ট রবি বসু পরিচালিত মিস প্রিয়ংবদা চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনার মধ্য দিয়ে, তিনি চলচ্চিত্র জগতে আসেন। এই চলচ্চিত্রে তাঁর সহযোগী সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন সুবীর সেন।

১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা
থেকে ঢাকাতে চলে আসেন এবং তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানের সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে যোগদান করেন। এর পাশাপাশি তিনি তৎকালীন আধুনিক ও চলচ্চিত্রের গানে সুরারোপ করা শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে দেশের অন্যতম সুরকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন।

১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের তিনি আগন্তুক ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেন।
১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সেলিনা আজাদকে বিবাহ করেন।
১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে মাসুদ পারভেজ পরিচালিত 'দস্যু বনহুর' ছবিতে তিনি 'ডোরা কাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়' গানটিতে কণ্ঠ দান করে সুখ্যাতি লাভ করেন।
১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পরিচালনায় মুক্তি পায় যৌন-শিক্ষা বিষয়ক চলচ্চিত্র 'গোপন কথা'।

১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কাজী হায়াৎ পরিচালিত 'চাঁদাবাজ' সিনেমায় শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক
২০০০ খ্রিষ্টাব্দ দিকে বাংলা খেয়াল রচনা ও প্রসারের উদ্যোগ নেন। তাঁর এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩১শে ডিসেম্বর চ্যানেল-আই টেলিভিশন মাধ্যমে বাংলা খেয়াল বিষয়ক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পরিবার: স্ত্রী সঙ্গীতশিল্পী সেলিনা আজাদ। সন্তান: তিন কন্যা। বড় মেয়ে রুমানা, মেজ মেয়ে রুবাব ছোট মেয়ে আনিকা।

তিনি দুইবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহা পরিচালক এবং সরকারি সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।  এছাড়া ছায়ানট সঙ্গীতবিদ্যায়তনে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিক্ষক হিসেবে ছিলেন।

১৯৭৭ ও ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দ শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক এবং ১৯৯৩ সালে শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

আজাদ রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের তালিকা

১৯৬৭: মিস প্রিয়ংবদা
১৯৬৯: আগন্তুক
১৯৭৩: রাতের পর দিন
১৯৭৪: মাসুদ রানা, বাদী থেকে বেগম
১৯৭৫:  এপার ওপার, মাস্তান
১৯৭৬: আগুন, দস্যু বনহুর, মায়ার বাঁধন
১৯৭৭: অনন্ত প্রেম, যাদুর বাঁশি, মতিমহল, কুয়াশা
১৯৭৮: ডুমুরের ফুল, তুফান, গোপন কথা (পরিচালক)
১৯৭৯: দি ফাদার
১৯৮১: লাগাম, আল্লা মেহরবান
১৯৮৩: নতুন বউ, আমার সংসার, মায়ার সংসার, পাগলা রাজা
১৯৯৩: চাঁদাবাজ
১৯৯৪:  দেশপ্রেমিক

সূত্র: