নিশি-রাতে রিম্ ঝিম্ ঝিম্ বাদল-নূপুর
বাজিল ঘুমের মাঝে সজল মধুর॥

দেয়া গরজে বিজলি চমকে
জাগাইল ঘুমন্ত প্রিয়তমকে
আধো ঘুম-ঘোরে চিনিতে নারি ওরে
কে এলো কে এলো' ব'লে ডাকিছে ময়ূর॥

দ্বার খুলি’ পড়শি কৃষ্ণা-মেয়ে-আছে চেয়ে’
        মেঘের পানে আছে চেয়ে―
কারে দেখি আমি কারে দেখি
মেঘলা আকাশ না ঐ মেঘ্‌লা-মেয়ে।

ধায় নদী-জল মহাসাগর পানে
বাহিরে ঝড় কেন আমায় টানে
জমাট হয়ে আছে বুকের কাছে
নিশীথ-আকাশ যেন মেঘ-ভারাতুর॥

• ভাবসন্ধান: বর্ষণমুখর রাতে 'প্রকৃতি এবং নারী' বিমূর্ত রূপে ধরা দিয়েছে এই গানে। এই গানের স্থায়ীতে বর্ষণমুখর সুপ্ত রাত্রির বৃষ্টির মধুর নূপুর-ধ্বনির কথা জানা যায় মাত্র। এই গানের স্থায়ী একটি সাধারণ বিবৃতি মাত্র।
  
  স্থায়ীর এই বিবৃতি অন্তরাতে ভিন্ন রূপের জন্ম দেয়। এই রূপের ভিতরে চিরন্তন নারী সত্তার সাথে প্রকৃতির রূপ একাকার হয়ে যায়। গভীর রাতে সুপ্ত প্রকৃতি জেগে উঠে  বিজুলির আলোক ছটা আর মেঘের গর্জনের ভিতরে, তেমনি জেগে উঠে চিরন্তন নারী সত্তা। সে  অনুভব করে তার প্রিয়তমের  জাগরণ। আধো ঘুমের বিবশিত ঘোরে সে প্রিয়তমকে  চিনে উঠতে পারে না। চেনা-অচেনার সংশয়কে সে খুঁজে পায় বৃষ্টিস্নাত ময়ুরের ডাকের ভিতরে । ময়ুরে ডাকের ভিতরে সে শুনতে পায় 'কে এলো কে এলো' ধ্বনি। এ যেনো গভীর রাতের জেগে উঠে নারী সত্তার অচেনাকে চেনার আকুতি। দ্বার খুলে পড়শি কালো মেয়ে যখন বাইরে এসে দাঁড়ায়, তাকায় মেঘের পানে। তখন কালো রাত্রি আর প্রেম জাগানিয়া নারী একাকার হয়ে যায়। নারীর প্রেমের শাশ্বত রূপ আর মহিমান্বিত মেঘলা আকাশ মোহময় করে দেয়। কাউকে অবহেলা করা যায় না। যেনো প্রকৃতির ভিতরে জেগে উঠে কালো মেয়ের রূপ, কিম্বা নারী সত্তায় জেগে উঠে প্রকৃতির রূপ।
  
  মহাসাগরের সাথে মিলনের জন্য নদী ধেয়ে চলে, তার স্পর্শ অনুভব করে বর্ষণমুখর গভীর রাতে জেগে উঠা নারী সত্তা। তার ভিতরেও জেগে উঠে মিলনের আকাঙ্ক্ষার ঝড়। কিন্তু তার প্রকাশ ঘটে না, তাই গভীর রাতের মেঘভারাতুর আকাশের মতো সে অচঞ্চলা হয়ে শুধু অনুভব করে বৃষ্টির রিম্‌ঝিম্ নূপুর ধ্বনি।
  
  
• রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি (২০ মাঘ ১৩৪৬) তারিখে, বেতারে 'কাবেরী তীরে‌' নামক একটি গীতিনাট্য প্রচারিত হয়। এই গীতিনাট্যে প্রথম এই গানটি ব্যবহার করা হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ৮ মাস।
   
• গ্রন্থ:
  • মদিনা। নজরুল রচনাবলী জন্মশতবর্ষ সংস্করণ অষ্টম খণ্ড  [১২ই ভাদ্র ১৪১৫, ২৭শে আগষ্ট ২০০৮।  ৭। আমার 'মদিনা' নাটকে (শৈল দেবী গাইবে)/প্রতাপ বরালী-আদ্ধা কাওয়ালি। পৃষ্ঠা: ৩০৩-৩০৪।
  •  নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২)। ২৪৮ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৭৭-৭৮।
  • নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (চতুর্থ খণ্ড)। দ্বিতীয় মুদ্রণ [নজরুল ইন্সটিটিউট। অগ্রহায়ণ ১৪০২। নভেম্বর ১৯৯৫। ১০ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৬৬-৬৯]  [নমুনা]
   
• পত্রিকা:
  • বেতার জগৎ [১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০ (শুক্রবার, ৩ ফাল্গুন ১৩৪৬)] কাবেরী তীরে  [কাবেরী তীরের গাননের নমুনা]
  • 'নজরুল ইন্সটিটিউট পত্রিকা' জ্যৈষ্ঠ ১৩৯২ সংখ্যা। মদিনা।
• বেতার:
  • কাবেরী তীরে (গীতি-নাট্য)।
    • প্রথম প্রচার। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। [শনিবার ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০ (২০ মাঘ ১৩৪৬)। ৭.০৫-৭.৪৪ মিনিট।  চরিত্র: বণিক কুমার। শিল্পী: বিমল মুখোপাধ্যায় (বিমল ভূষণ)।  শিল্পী- শৈল দেবী।
      • সূত্র: বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ ৩য় সংখ্যা।  বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪০, ১৮ মাঘ ১৩৪৬
    • দ্বিতীয় প্রচার: কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ৮ নভেম্বর ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ২২ কার্তিক ১৩৪৮)।
      • সূত্র: বেতার জগৎ। ১২শ বর্ষ ২১শ সংখ্যা। অনুষ্ঠান সূচী। পৃষ্ঠা: ১২৮০
  • হারামণি । রাগ: প্রতাপ বরালী [২২ জুলাই ১৯৪০ (সোমবার ৬ শ্রাবণ ১৩৪৭)]। কলকাতা বেতার কেন্দ্র ক। চতুর্থ অধিবেশন। সময়: সন্ধ্যা ৬.৪০-৭টা। শিল্পী: কাজী নজরুল ইসলাম
    • সূত্র:
      • বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ, ১৪শ সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ৭৬৪
      • The Indian Listener, Vol, V No 14  page 1073]
• রেকর্ড:
  • কলাম্বিয়া  [জুলাই ১৯৪০ (আষাঢ়-শ্রাবণ ১৩৪৭)। জিই ২৫৫১। শিল্পী: শ্রীমতী রাধারাণী। রাগ: প্রতাপবরালী। তাল: আদ্ধা কাওয়ালী। সুর নজরুল]
  • মেগাফোন [এপ্রিল ১৯৪৩ ( চৈত্র ১৩৪৯-বৈশাখ ১৩৫০)। জে.এন.জি. ৫৭০৬.। শিল্পী ধীরেন্দ্রচন্দ্র মিত্র]
     
• স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: আসাদুল হক। নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (চতুর্থ খণ্ড)। দ্বিতীয় মুদ্রণ [নজরুল ইন্সটিটিউট। অগ্রহায়ণ ১৪০২। নভেম্বর ১৯৯৫। ১০ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৬৬-৬৯]  [নমুনা]
• সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
   
• পর্যায়:
  • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (বর্ষা, প্রেম)
  • সুরাঙ্গ: খেয়ালাঙ্গ
    • রাগ: প্রতাপবরালী
    • তাল: আদ্ধা
    • গ্রহস্বর: ^মরা