বিষয়:
রবীন্দ্রসঙ্গীত।
গান সংখ্যা:
শিরোনাম:
কূল থেকে মোর গানের তরী দিলেম খুলে
পাঠ ও পাঠভেদ:
কূল থেকে মোর গানের তরী দিলেম খুলে,
সাগর-মাঝে ভাসিয়ে দিলেম পালটি তুলে॥
যেখানে ঐ কোকিল ডাকে ছায়াতলে
সেখানে নয়,
যেখানে ঐ গ্রামের বধূ আসে জলে
সেখানে নয়,
যেখানে নীল মরণলীলা উঠছে দুলে
সেখানে মোর গানের তরী দিলেম খুলে ॥
এবার, বীণা, তোমায় আমায় আমরা একা―
অন্ধকারে নাইবা কারে গেল দেখা
কুঞ্জবনের শাখা হতে যে ফুল তোলে
সে ফুল এ নয়,
বাতায়নের লতা হতে যে ফুল দোলে
সে ফুল এ নয়―
দিশাহারা আকাশ-ভরা সুরের ফুলে
সেই দিকে মোর গানের তরী দিলেম খুলে॥
পাণ্ডুলিপির পাঠ:
দুটি পাণ্ডুলিপিতে এই গানটি পাওয়া যায়। পাণ্ডুলিপি দুটি হলো-
পাঠভেদ:
যেখানে
নীল মরণলীলা উঠছে দুলে [গীতবিতান
(বিশ্বভারতী,
কার্তিক ১৪১২)]
যেখানে নীল মরণলীলা উঠ্চে দুলে [RBVBMS 112
]
স্বরবিতান চতুস্ত্রিংশ (৩৪, গীতিবীথিকা ) খণ্ডের (আষাঢ় ১৪১৩) ৭০ পৃষ্ঠায় গানটির পাঠভেদ নিম্নরূপ দেখানো হয়েছে।
বাতায়নের লতা হতে
:
প্রবাসী
,
অগ্রহায়ণ
১৩২১
বাতায়নের পাতা হতে
:
গীতিবীথিকা
(বৈশাখ ১৩২৬ বঙ্গাব্দ)
: গীতবিতান (আশ্বিন ১৩৩৮)
সেই দিকে মোর গানের তরী
: কথার অংশ,
গীতিবীথিকা
(বৈশাখ ১৩২৬)
:
গীতবিতান (আশ্বিন ১৩৩৮)
সেই খানে মোর গানের তরী : স্বরলিপি,
গীতিবীথিকা
(বৈশাখ ১৩২৬)
উল্লেখ্য, প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত গানটির শুরু হয়েছে 'এবার' শব্দ দিয়ে। দেখুন: [প্রবাসী অগ্রহায়ণ,
১৩২১
বঙ্গাব্দ]
ভাবসন্ধান: কূল ছুঁয়ে-থাকা
গানের তরীকে অকূল সাগরে ভাসিয়ে দেবার কথা বলা হয়েছে গানখানিতে। এ নৌকো পাল তুলে
স্বচ্ছন্দে ভেসে চলবে আপন লক্ষ্যপথে। সে-লক্ষ্য কাছে-ধারের নিসর্গ-সৌন্দর্য নয়
কিন্তু। কোকিল-ডাকা বনতল নয়, নয় পল্লীবধূর জলভরনে আসার সৌন্দর্যও। সাগরের দূর
প্রান্তে তরঙ্গিত মরণলীলার অভিমুখে যাত্রা এ তরীর। সেখানকার একাকার-অন্ধকারে
অ-দৃষ্ট বীণার সঙ্গে বীণাবাদকের চলবে একান্ত আলাপন। আকাশ-ছাওয়া তারার মতো সুরের
ফুলে দিশাহারা আকাশের দিকে গানের তরীর ভেসে-চলা। সুরের ফুলের লক্ষ্যেই
এ-যাত্রা, কুঞ্জবীথি কিংবা লতায় দোদুল কোনো প্রাকৃতিক ফুল উদ্দিষ্ট নয় এ তরীর
যাত্রীর।
এ গানে বাস্তবের সীমা-ছাড়ানো এক সুদূর নির্জন যাত্রা এবং গানের আলাপনের প্রসঙ্গ
রয়েছে। দূরের আবহ এসেছে দুই অন্তরাতে তারার উঁচু সুরে বক্তব্য উচ্চারণের দরুন।
তথ্যানুসন্ধান
ক. রচনাকাল ও স্থান:
রবীন্দ্রনাথের
পাণ্ডুলিপি
RBVBMS
131-তে
লিখিত এই গানের শেষে সময় ও স্থান লেখা আছে-
'১৯ আশ্বিন/শন্তিনিকেতন'।
উল্লেখ্য, ১৩২১ বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসে
রবীন্দ্রনাথের বড় ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুরুলের কুঠি বাড়িতে কৃষি-গবেষণার
জন্য বসবাস শুরু করেছিলেন। এই সময় রবীন্দ্রনাথ প্রতিদিনই গরুর গাড়িতে সকাল
বেলায় শান্তিনিকেতন থেকে সুরুল যেতেন এবং বিকেলে ফিরে আসতেন। রবীন্দ্রনাথের
এই যাতায়াত শুরু হয়েছিল ৮ই ভাদ্র থেকে এবং শেষ হয়েছিল
২২শে
আশ্বিন তারিখে রবীন্দ্রনাথ বুদ্ধগয়া যাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত।
রবীন্দ্রনাথের এই যাতায়াত
শুরু হয়েছিল ৮ই ভাদ্র থেকে এবং শেষ হয়েছিল
২২শে
আশ্বিন তারিখে রবীন্দ্রনাথ বুদ্ধগয়া যাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত।
তাঁর এই আসা-যাওয়ার ভিতরে ২০শে
আশ্বিন পর্যন্ত ৫৭টি গান রচনা করেছিলেন।
এর ভিতরে এই গানটি তিনি
১৯
আশ্বিন [মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর]
তারিখে রচনা করেছিলেন।
এই সময় রবীন্দ্রনাথের বয়স ছিল ৫৩ বৎসর ৫ মাস।
[৫৩ বৎসর
অতিক্রান্ত বয়সে রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
খ. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
গ্রন্থ
কাব্যগ্রন্থ ৯। গীতালি, ৭৫ (ইন্ডিয়ান প্রেস, ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দ, ১৩২৩ বঙ্গাব্দ)। পৃষ্ঠা: ৫০১-৫০২। [নমুনা: প্রথমাংশ, শেষাংশ]
- দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথম সংস্করণ (বিশ্বভারতী, আশ্বিন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ)। পৃষ্ঠা: ৫০৮-৫০৯ [নমুনা: ৫০৮, ৫০৯]
- প্রথম খণ্ড, দ্বিতীয় সংস্করণ (বিশ্বভারতী, মাঘ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ)। পর্যায়: পূজা ১৬। উপবিভাগ: গান ১৬। পৃষ্ঠা: ৮ [নমুনা]
- অখণ্ড সংস্করণ, তৃতীয় সংস্করণ (বিশ্বভারতী ১৩৮০)। পর্যায়: পূজা ১৬। উপবিভাগ: গান ১৬। পৃষ্ঠা: ১২ [নমুনা]
প্রথম সংস্করণ [ইন্ডিয়ান প্রেস, ১৩২১ বঙ্গাব্দ। ৭৫ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৮২] [নমুনা]।
রবীন্দ্ররচনাবলী একাদশ খণ্ড, গীতালি (বিশ্বভারতী, আশ্বিন ১৩৯৩)। গান সংখ্যা: ৭৫। পৃষ্ঠা: ২৬৯।
গীতিবীথিকা (বৈশাখ ১৩২৬ বঙ্গাব্দ)। দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর-কৃত স্বরলিপি-সহ মুদ্রিত হয়েছিল।
প্রবাহিনী (অগ্রহায়ণ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ)। গীতগান ১৪। পৃষ্ঠা: ১২-১৩। [নমুনা: প্রথমাংশ, শেষাংশ]
স্বরবিতান চতুস্ত্রিংশ (৩৪, গীতিবীথিকা ) খণ্ডের (আষাঢ় ১৪১৩) ১৮ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৫৯-৬১।
পত্রিকা
প্রবাসী [অগ্রহায়ণ, ১৩২১ বঙ্গাব্দ। গীতিগুচ্ছ ২৩। পৃষ্ঠা: ১০৯] [নমুনা]
[প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]প্রকাশের কালানুক্রম: প্রবাসী পত্রিকার অগ্রহায়ণ ১৩২১ বঙ্গাব্দ সংখ্যায় গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। একই বছরে 'গীতালি' গ্রন্থের সাথে গানটি প্রকাশিত হয়েছিল। ১৩২৩ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত 'কাব্যগ্রন্থ'-এর নবম খণ্ডের 'গীতালি' অংশে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়। এরপর ১৩২৬ বঙ্গাব্দে গানটি 'গীতিবীথিকা'-তে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৩৩২ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ মাসে প্রকাশিত 'প্রবাহিনী' নামক গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৩৩৮ বঙ্গাব্দে গীতবিতানের দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথম সংস্করণে গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে গানটি গীতবিতানের প্রথম খণ্ডের দ্বিতীয় সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৩৮০ বঙ্গাব্দে গীতবিতানের অখণ্ড সংস্করণে গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।
গ. সঙ্গীত বিষয়ক তথ্যাবলী:
স্বরলিপিকার:
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
[দিনেন্দ্রনাথ
ঠাকুর-কৃত রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্বরলিপির তালিকা]
[স্বরলিপি]
রাগ ও তাল:
স্বরবিতান চতুস্ত্রিংশ
(৩৪,
গীতিবীথিকা
) খণ্ডে (আষাঢ়
১৪১৩)
গৃহীত স্বরলিপিতে রাগ-তালের উল্লেখ নেই।
উক্ত
স্বরলিপিটি ৩।৩
মাত্রা ছন্দে
'দাদরা'
তালে
নিবদ্ধ।
[দাদরা
তালে নিবদ্ধ রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
তাল: দাদরা [রবীন্দ্রসংগীতের ক্রমবিকাশ ও বিবর্তন। ডঃ দেবজ্যোতি দত্ত মজুমদার (সাহিত্যলোক, ডিসেম্বর ১৯৮৭, পৃষ্ঠা ১১০)]
রাগ:
বেহাগ।
তাল: দাদরা [রবীন্দ্রসংগীত:
রাগ-সুর নির্দেশিকা। সুধীর চন্দ। প্যাপিরাস, ডিসেম্বর ২০০৬।
পৃষ্ঠা: ৪৫।
[বেহাগ রাগে নিবদ্ধ
রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
রাগ: বেহাগ। তাল: দাদরা । [রাগরাগিণীর এলাকায় রবীন্দ্রসংগীত, প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত আকাদেমী, জুলাই ২০০১।] পৃষ্ঠা: ৮২।