তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী,
আমি অবাক্ হয়ে শুনি কেবল শুনি ॥সুরের আলো ভুবন ফেলে ছেয়ে,
সুরের হাওয়া চলে গগন বেয়ে,
পাষাণ টুটে ব্যাকুল বেগে ধেয়ে
বহিয়া যায় সুরের সুরধুনী॥
মনে করি অমনি সুরে গাই, কণ্ঠে আমার সুর খুঁজে না পাই। কইতে কী চাই, কইতে কথা বাধে— হার মেনে যে পরান আমার কাঁদে,
আমায় তুমি ফেলেছ কোন্ ফাঁদে
চৌদিকে মোর সুরের জাল বুনি
সভাপতির বক্তৃতার পর বেদীর উপর যাঁরা ছিলেন তাঁরা সকলে কবিকে ধরে বসলেন গান গাইবার জন্য। কবি আপত্তি জানালেন। সকলে জিদ করতে লাগলেন। কবির আপত্তি প্রবল থেকে প্রবলতর হতে লাগলো, তিনি বললেন,― শরীর ক্লান্ত, পূর্বের স্বরও আর নেই, তাছাড়া এই ওস্তাদের কাছে মুখ খুলতে আমি কিছুতেই রাজী নই। যাঁরা জিদ করছিলেন তাঁদের মধ্যে গুরুদাস বন্দোপাধ্যায়ই ছিলেন প্রধান।...শেষে গুরুদাস বলে ফেললেন― (বেদীর খু্ব নিকটেই বসেছিলুম ব'লে স্পষ্ট শুনলুম)― 'আপনার ভালো গাইতে পারেন ব'লে অহংকার আছে, সেই অহংকারে পাছে কোনদিক দিয়ে ঘা লাগে তাই গাইতে চাচ্ছেন না'। তখন রবীন্দ্রনাথ আর না গেয়ে পারলেন না। প্রথম হারমোনিয়াম নিয়ে চেষ্টা করে পরে শুধু গলাতেই গাইলেন সেই বিখ্যাত গান ― 'কেমন ক'রে গান করো যে গুণী,আমি অবাক হয়ে শুনি।' .....সেটি ছিল তখনো অ-পূর্ব প্রকাশিত। কাজেই স্থান কাল পাত্র বিবেচনায় গানের অর্থ মিলিয়ে সকলে ধরে নিলেন গুণী এনায়েত খাঁকে উদ্দেশ করেই সেই গান তখনি মুখে মুখে রচিত হয়েছিল। সমস্ত হল-ভর্তি শ্রোতৃমণ্ডলীর ওপর আশ্চর্য মায়াজাল বিস্তার করেছিল কবির কণ্ঠ এমন অপরূপ সময়োচিত ভাবে বিকশিত হয়ে।"এই তথ্যটি যে যথার্থ নয়, তা বুঝা যায়, গানটি রচনার তারিখ দেখে। পাণ্ডুলিপি অনুসারে গানটির রচনাকাল ১০ ভাদ্র। আর এর প্রায় একমাস পরে, রবীন্দ্রনাথ উল্লিখিত আসরে গানটি গেয়েছিলেন।