নজরুল ইন্সটিটিউট কর্তৃক প্রকাশিত
নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি চুয়ান্নতম খণ্ড

বাংলা গানের ক্ষেত্রে কাজী নজরুল ইসলাম কিংবদন্তী স্বরুপ। মার্গ-সংগীত ধারা থেকে সর্বত্র তার বাণী ও সুর এক অসীম বৈচিত্র্যে এবং স্বকীয় মহিমায় সমুজ্জ্বল। নজরুল-সংগীত যেন এক যাদুকরী প্রতিভার লীলাময় সৃষ্টি; শুধু বৈচিত্র্যময়তা এবং আকর্ষণীয়তাই নয়, এর ব্যাপক জনপ্রিয়তায়ও আমাদের সীমাহীন মুগ্ধতা জাগে।

কিন্তু নজরুল-সংগীতের ক্ষেত্রে যে সমস্যাটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হলো গানের বাণী ও সুরের বিকৃতি-সংক্রান্ত। ১৯৪২ সাল পর্যন্ত নজরুলের সুস্থাবস্থায় তাঁর নিজের দেওয়া সুরে এবং অন্যের দেওয়া কবির অনুমোদিত সুরে যে-সব গান রেকর্ড করা হয়েছিল এবং খ্যাতনামা কণ্ঠশিল্পীদের কণ্ঠে যে-সব গান ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল, গত কয়েক দশকে সে-সব গানের বাণী ও সুর যথেষ্ট পরিমাণে বিকৃত হয়েছে এবং শিল্পীদের কণ্ঠে গীত গানের বাণী ও সুর অনুসরণ না করার ফলেই যে নজরুল-সংগীতের এইরুপ বিকৃতি এবং তার বাণীরুপের বিপর্যয় ঘটেছে- সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মনে আজ আর কোনো দ্বিধা নেই। এ যুগের কৃতি শিল্পীদের মধ্যে ভিন্ন কারণেও এই বিকৃতি ঘটেছে কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে এই বিকৃতি-প্রিয়তা একটা প্রবণতারই নামান্তর মাত্র এবং তা আদৌ শুভসূচক নয়।
বলা বাহুল্য কবি নজরুল ইনস্টিটিউট প্রথমাবধি নজরুল সংগীতের এই বিকৃতি বিষয়ে সচেতন এবং এই বিকৃতি রোধে তথা নজরুল অনুমোদিত সুর (আদি গ্রামোফোন রেকর্ডের বাণী ও সুরসহ) সংরক্ষণ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রচারের জন্যে নানা কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবেই নিয়োজিত। নজরুল-সংগীত প্রমাণীকরণ পরিষদের প্রয়োজনীয়তা ও তার সৃষ্টির কারণ এখানেই নিহিত।

প্রমাণীকরণ পরিষদ মনে করে নজরুল-সংগীতের বাণী ও সুরের বিকৃতি রোধ করতে হলে কবি ও সুরকার নজরুলের নিজের দেওয়া এবং তাঁর দ্বারা অনুমোদিত ও গ্রামোফোন রেকর্ডে ধৃত বাণী এবং সুর অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। এ বিষয়ে সরকার নির্ধারিত নীতিমালাতে (দ্রষ্টব্য : পরিশিষ্ট) এ কথা যথার্থভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। একালের ও ভবিষ্যতের শিল্পীরা যদি বাণী ও সুরের দিকে নজরুল-সংগীতের আদি গ্রামোফোন রেকর্ড অনুসরণ করেন এবং সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও সংগীত পরিবেশনের দায়িত্ব পালন করেন তবেই নজরুল সংগীতের বাণী ও সুরের বিকৃতি রোধের পথ প্রশস্ত হতে পারে। লক্ষ্যযোগ্য যে, এর অভাবেই, পশ্চিমবঙ্গে এবং বাংলাদেশে প্রকাশিত নজরুল সংগীতের অনেক স্বরলিপি গ্রন্থেই বাণী ও সুরের বিচ্যুতি এমনকি বিকৃতিও ঘটেছে এবং এখনও ঘটছে।

সরকার নজরুল-সংগীতের স্বরলিপির শুদ্ধতা যাচাই, প্রমাণীকরণ ও সত্যায়নের জন্য ʻনজরুল-সংগীত স্বরলিপি প্রমাণীকরণ পরিষদʼ নামে যে বিশেষজ্ঞ-কমিটি গঠন করেছে, এই কমিটিও স্বরলিপির শুদ্ধতা যাচাই, প্রমাণীকরণ ও সত্যায়নের ব্যাপারে নজরুল-সংগীতের আদি গ্রামোফোন রেকর্ডকেই নির্ভরযোগ্য এবং প্রামাণ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নীতিমালার ভিত্তিতে আদি গ্রামোফোন রেকর্ড অনুসরণ করেই নজরুল-গবেষক, কণ্ঠশিল্পী ও স্বরলিপিকার জনাব ইদ্রিস আলী বর্তমান গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত নজরুলের ২৫টি গানের স্বরলিপির শুদ্ধতা যাচাই, প্রমাণীকরণ ও সত্যায়ন করা হয়েছে। তবে একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সংগীতের স্বরলিপি প্রণয়ন যেমন দুরুহ, শ্রম ও সময়সাপেক্ষ কাজ, তেমনি প্রণীত স্বরলিপির শুদ্ধতা যাচাই, প্রমাণীকরণ ও সত্যায়নও এক দুরুহ, শ্রম ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বিশেষ করে আদি ও পুরানো গ্রামোফোন রেকর্ডের বাণী ও সুরের সঙ্গে মিলিয়ে এই দায়িত্ব পালন সত্যিই দুরুহতর। ʻনজরুল-সংগীত স্বরলিপি প্রমাণীকরণ পরিষদʼ এর সদস্যবৃন্দ তাদের উপর অর্পিত এ দায়িত্ব যে যথাসম্ভব নিষ্ঠা ও শ্রমের সঙ্গে পালন করেছেন, এতে আমি নিঃসন্দেহ। আমি তাদেরকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত এই কমিটির সদস্যদের অজান্তে স্বরলিপির শুদ্ধতা যাচাই, প্রমাণীকরণ ও সত্যায়নের ব্যাপারে যদি কোনো ত্রুটি বিচ্যূতি ঘটে থাকে তাহলে আগামী সংস্করণে তা অবশ্যই সংশোধনের জন্য ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

ʻনজরুল সংগীত স্বরলিপি প্রমাণীকরণ পরিষদʼ কর্তৃক শুদ্ধতা যাচাই, প্রমাণীকরণ, সত্যায়ন ও অনুমোদনের পর এই প্রামাণ্য নজরুল-সংগীত স্বরলিপি চুয়ান্নতম খণ্ড প্রকাশিত হলো। কবির গানের বাণী ও সুরের সত্যায়ন, স্বরলিপির শুদ্ধতা যাচাই ও প্রমাণীকরণ নজরুল ইন্সটিটিউটের অন্যতম দায়িত্ব। নজরুল-সংগীতের বাণী ও সুরের বিকৃতি রোধ এবং প্রামাণ্য স্বরলিপি ও সুরের প্রচার আমাদের অন্যতম জাতীয় দায়িত্ব এবং নজরুল-সংগীত স্বরলিপি প্রমাণীকরণ পরিষদ কর্তৃক সত্যায়িত জনাব এস. এম.আহসান মুর্শেদ প্রণীত নজরুল-সংগীত স্বরলিপি সিরিজ গ্রন্থের চুয়ান্নতম খণ্ড সেই উদ্দেশ্যেই নিবেদিত।
 

জুন ২০১৭

সুধীন দাস
সভাপতি, ʻনজরুল-সংগীত স্বরলিপি প্রমাণীকরণ পরিষদʼ


সূচীপত্র
  1. আমার হৃদয় বৃন্দাবনে নাচে রে গিরিধারী বনমালিয়া [তথ্য] [নমুনা]
  2. আমি সুন্দর নহি জানি হে বন্ধু জানি [নমুনা]
  3. আরে পঙ্খীরাজের বাচ্চা আমার ঘোড়া ছুইট্যা যাও [নমুনা]
  4. ওহে রসিক রসাল কদলী [নমুনা]
  5. কী দিয়ে পূজি ভগবান [নমুনা]
  6. কোন্ রস যমুনার কূলে বেণু-কুঞ্জে [নমুনা]
  7. জাগত সোওত আঁঠু যাম রহত প্রভু মনমে তুমহারো ধ্যান [নমুনা]
  8. জানি পাব না তোমায় [নমুনা]
  9. ঠাকুর! তেমনি আমি বাঘা তেঁতুল [নমুনা]
  10. নন্দকুমার বিনে সই [নমুনা]
  11. বদনা-গাড়তে বসে মুখোমুখি [নমুনা]
  12. বর্ণচোরা ঠাকুর এলো [নমুনা]
  13. বল বীর- বল উন্নত মম শির (খণ্ড-১) [নমুনা]
  14. বল বীর- বল উন্নত মম শির (খণ্ড-২) [নমুনা]
  15. ভারত আজিও ভোলেনি [নমুনা]
  16. মটকু মাইতি বাঁটকুল রায় [নমুনা]
  17. মা এলো রে, মা এলো রে [নমুনা]
  18. মাতৃনামের হোমের শিখা [নমুনা]
  19. শুকসারি সম তনু মন মম [নমুনা]
  20. শ্যামা নামের ভেলায় চড়ে [নমুনা]
  21. সখি কই গোপীবল্লভ [নমুনা]
  22. সখি যায়নি তো শ্যাম মথুরায় [নমুনা]
  23. সাম্যের গান গাই (খণ্ড-১) [নমুনা]
  24. সাম্যের গান গাই (খণ্ড-২) [নমুনা]
  25. হে বিধাতা! দুঃখ-শোক-মাঝে [নমুনা]