ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি
সূত্র: বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন
http://www.ecs.gov.bd/Bangla

নিবন্ধন নম্বর

০০৯

নিবন্ধন তারিখ

০৩/১১/২০০৮

প্রতীক

কুঁড়েঘর

প্রতীক নমুনা

সভাপতি

অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ

সাধারণ সম্পাদক

 

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা

২০-২১, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট (২য় তলা), ঢাকা-১২০৫

ফোন

৯৬৬৯৯৪৮

মোবাইল

০১৭১১০৫৯৪৫০, ০১৭১২৫৯২৫৯৬

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি
বাংলাদেশের একটি বামপন্থী রাজনৈতিক দল।

তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থার ভিতরে রাজনৈতিক ভাবধারার কিছু বুদ্ধিজীবী পাকিস্তানকে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এই স্বপ্ন থেকে পাকিস্তানে প্রথম রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল 'আজাদ পাকিস্তান পার্টি'। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মিয়া ইফতিখরুদ্দিন। সে সময়ে উভয় পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে সমাজাতান্ত্রিক ভাবধারার ছোটো ছোটো সংগঠন থাকলেও, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সৃষ্ট এই দলটিকে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উল্লেখ্য, পাক-ভারত বিভাজনের পর, ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত কলকাতায় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এই সূত্রে কমুনিষ্ট পার্টি অফ পাকিস্তান (সিপিপি) নতুন দেশে নতুনভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছিল।

এই দলটি তাদের কর্মকাণ্ড শুরু হওয়ার আগেই ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।  ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ৮-১০ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের কাগমারিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ভাসানী পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিলের দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী সোহ্‌রাওয়ার্দী সেই দাবি প্রত্যাখান করলে, ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগ থেকে আব্দুল হামিদ খান ভাসানি পদত্যাগ করেন। এই বছর ২৫ জুলাই ভাসানি ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলের একটি সম্মেলনে 'ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি' (ন্যাপ) গঠিত হয়। এই সময় শেখ মুজিবর রহমান মন্ত্রিত্ব (কৃষি ও বন মন্ত্রী) ত্যাগ করে আওয়ামী লীগকে  সংগঠিত করার দায়িত্ব নেন। এদের প্রধান লক্ষ্য ছিল-  গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, অসাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল 'আজাদ পাকিস্তান পার্টি'  ন্যাপ-এর সাথে মিলিত হয়ে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।

১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ন্যাপের উদ্যোগে ব্রহ্মপুত্র নদের চরে ফুলছড়িতে কৃষক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এই সম্মেলনে 'কৃষক সমিতি' গঠিত হয়েছিল। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে আইয়ুব খান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন এবং সকল রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এই সময় ন্যাপ এবং সিপিপির কর্মীরা সামরিক শাসনের অধীনে নানাভাবে নিগৃহীত হয়।

১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে আয়ুব খান রাজনৈতিক কার্মকাণ্ডের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে, ন্যাপ পুনরায় তাদের কার্যক্রম শুরু করে। 

১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মাওলানা ভাষানী আইয়ুব খানকে সমর্থন করা শুরু করে। এই সূত্রে ন্যাপের পক্ষ ভাসানী আইয়ুব খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর চীনের বিপ্লব দিবস-এর উৎসবে যোগদানের জন্য আয়ুব খানের সমর্থনেই ঢাকা ত্যাগ করেন এবং চীনে সাত সপ্তাহ অবস্থান করেন।

১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ ফেব্রুয়ারি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি পুনরুজ্জীবিত করে দলের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং এই বছরের ২১ জুলাই-তে সম্মিলিত বিরোধী দল (কপ) গঠনে ভূমিকা পালন করেন। এই বৎসরে তিনি হাভানায় বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যোগদান করেন। মওলানা ভাসানীর আহবানে সর্বদলীয় প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ মার্চ সর্বজনীন ভোটাধিকার দিবস পালিত হয়। ১৯৬৫ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ন্যাপ সংযুক্ত বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে মিস ফাতেমা জিন্নাহর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেছিল।  

১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক মতবিরোধের কারণে ন্যাপের ভিতরে ভাঙ্গনের সূত্রপাত হয়েছিল। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের কাউন্সিল অধিবেশনের পূর্বে মস্কোপন্থী নেতারা বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা চালায়। তাই মশিউর রহমান যাদু মিয়ার পরামর্শে রংপুরে কাউন্সিল অধিবেশন আহ্বান করা হয়।

১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা নভেম্বর ন্যাপ ১০ দফা দাবির ভিত্তিতে আন্দোলন শুরু করে। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর রংপুরে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনের পর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রশ্নে ন্যাপ চীনপন্থী ও মস্কোপন্থী এ দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই সময় চীনপন্থী ন্যাপের সভাপতি হন মওলানা ভাসানী এবং মস্কোপন্থী ন্যাপের সভাপতি হন সীমান্ত প্রদেশের খান আবদুল ওয়ালী খান। এই সময় পূর্ব পাকিস্তান ওয়ালী ন্যাপের সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। পরে এই অংশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর) বা 'মোজাফর ন্যাপ' নামে পরিচিত লাভ করে।

এই বছরের ৬ ডিসেম্বর ভাসানী ন্যাপ  'জুলুম প্রতিরোধ দিবস' পালন করে। ঐদিন পল্টনে এক জনসভা শেষে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে জনগণ গভর্ণর হাউজ ঘেরাও করা হয় এবং ৭ ডিসেম্বর হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঢাকায় হরতালের দিন পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ৮ ও ১০ ডিসেম্বর সারা প্রদেশব্যাপী হরতাল আহবান করা হয়।

১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে ন্যাপ (ভাসানী) বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। এই সময় ন্যাপের পক্ষ থেকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামীদের মুক্তি দাবি করেন। ৮ মার্চ পশ্চিম ভাসানী পাকিস্তানে যান এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এই সময় উভয় নেতা গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র কায়েমের লক্ষ্যে একমত হন। ২৬শে ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান কর্তৃক আহুত গোলটেবিল বৈঠক প্রত্যাখান করে শ্রমজীবীদের ঘেরাও কর্মসূচী পালনে উৎসাহ প্রদান করেন। আইয়ুব খান সরকারের পতনের পর নির্বাচনের পূর্বে ভোটের আগে ভাত চাই, ইসলামিক সমাজতন্ত্র কায়েম ইত্যাদি দাবি উত্থাপন করেন।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ ছিল দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি হিসেবে সক্রিয় ছিল। সে সময়ে ন্যাপের সভাপতি জননেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা এবং মুক্তিযুদ্ধের আন্তর্জাতিক সংগঠক ছিলেন।

১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে ভাসানী ন্যাপ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনগণতান্ত্রিক সরকারের এক কর্মসূচি ঘোষণা করে। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ভাসানীর নেতৃত্বে ৭ দলীয় মোর্চা গঠিত হয়। ভাসানী ন্যাপ ১৬৯টি আসনে প্রার্থী দেয়। কিন্তু প্রশাসনের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ৭ দলীয় মোর্চা নির্বাচন থেকে সরে আসে।

১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মার্চে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে- ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর) অংশগ্রহণ করে কোনো আসন লাভ করতে পারে নি।

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে বাকশাল গঠিত হলে, মোজ্জাফর আহমেদ তাঁর নেতৃত্বের ন্যাপ বিলুপ্ত করে এবং বাকশালে যোগ দেন। কিন্তু মওলানা ভাসানি ও যাদু মিয়ার নেতৃত্বে বাকশালের বিরোধিতা করেন।

১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে জিয়াউর রহমান একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার উদ্যোগ নিলে, মশিউর রহমান যাদু মিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগদান করেন। পরবর্তীতে মশিউর রহমান যাদু মিয়ার দোহিত্র জেবেল রহমান গানি ন্যাপের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বর্তমানে এই দলটি "বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি" নামে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত।

১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই মে-তে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে  এই দলটি অংশগ্রহণ করে ১টি আসন লাভ করেছিল।

১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মে-তে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই দলটি অংশগ্রহণ করে ২টি আসন লাভ করেছিল।

১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা মার্চে অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এই দলটি বর্জন করেছিল।

১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই দলটি অংশগ্রহণ করে ১টি আসন লাভ করেছিল।

১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫শে ফেব্রুয়ারি  ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, এই দলটি বর্জন করেছিল।
১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে  এই দলটি কোনো আসন লাভ করতে পারে নি।

২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ১লা অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে  এই দলটি কোনো আসন লাভ করতে পারে নি।

২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে নভেম্বর  নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই দলটি কোনো আসন লাভ করতে পারে নি।

২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই জানুয়ারি,  দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এই দলটি বর্জন করেছিল।

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই দলটি কোনো আসন লাভ করতে পারে নি।